সংক্ষিপ্ত সূত্রাবলি- বাংলা উচ্চারণের (১-২৮) । blogkori
বাংলা উচ্চারণের সংক্ষিপ্ত সূত্রাবলি
বাংলা্ উচ্চারণের বিশেষ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। রেডিও-টিভিতে প্রচারিত খবর, আবৃত্তি বা শিল্পীর কণ্ঠে গান শুনতে গিয়ে আমরা বিষয়টি টের পাই। তারা আর দশজন থেকে ভিন্নভাবে উচ্চারণ করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে কিসে তাদের উচ্চারণে ভিন্নতা এনে দেয়, বিষয়টি আমাদের অজানা। 'বাংলা উচ্চারণের সংক্ষিপ্ত সূত্রাবলি' আত্মস্থ করার মধ্য দিয়ে আপনিও শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলা শিখে নিতে পারেন।
পর্ব - (১)
পর্ব - (১)
বাংলা ভাষার প্রথম স্বরধ্বনি অ-এর উচ্চারণ নিয়েই আমাদের উচ্চারণ-বিধির সূত্রপাত। কারণ শব্দের আদি, মধ্য এবং অন্তে ব্যবহৃত ‘অ’ কখনো অবিকৃতভাবে আবার কখনো ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়ে থাকে। ‘অ’ যেসব শব্দে আদিতে অবিকৃত বা নিজস্ব উচ্চারণে বিশিষ্ট, তার মধ্যে রয়েছে—তল, ঢল, জল, ফল, বলা, চলা, সহজ, সরল, গরল, তরল, মরদ, পরশ, সরস ইত্যাদি।
‘অ’-এর বিকৃত বা ও-কারের মতো উচ্চারণ—অতি (ওতি), বউ (বোউ), ভালো (ভালো), মতন (মতোন) প্রভৃতি। এখানে অ-এর ‘ও’ উচ্চারণ অবশ্য অনেকটা হ্রস্ব, সহজ কথায় বলা যায় অ-এর উচ্চারণ কিছুটা ও-ঘেঁষা হয়। এটা সর্বত্র হয় না, হয় বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ ধ্বনির প্রভাবে। অতএব অ-এর ও-কারে রূপান্তরিত হওয়ার কিছু নিয়ম উল্লেখ করা যেতে পারে :
শব্দের আদিতে যদি অ-কার (সেটা আদি ব্যঞ্জনে যুক্তও হতে পারে) থাকে এবং তার পরের অক্ষরে ই (হ্রস্ব কিংবা দীর্ঘ) কিংবা ই-কারান্ত, উ-কারান্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলেও অ-কারের উচ্চারণ ও-কারের মতো হয়ে যায়। যেমন—অসি (ওসি), গতি (গোতি), মতি (মোতি), পতি (পোতি), যতি (জোতি), সতী (শোতি), ভগ্নি (ভোগনি), লগ্নি (লোগনি), মধু (মোধু), বসু (বোসু), কদু (কোদু), যদু (জোদু), অঙ্গুলি (ওঙ্গুলি), বধূ (বোধু), সমূহ (শোমুহ) ইত্যাদি।
পর্ব - (২)
অ-এর পরয-ফলাযুক্তব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে অ-এর উচ্চারণসাধারণত ও-এর মতোহয়।যথা—অদ্য(ওদ্দো), গদ্য (গোদদো), পদ্য (পোদদো), সত্য (শোততো), অত্যন্ত (ওততন্তো), অধ্যাপক (ওদধাপক), সহ্য (শোজঝো) ইত্যাদি।
পর্ব - (৩)
জ্ঞ (জ+ঞ) কিংবা ক্ষ(ক+ষ) থাকলেও আগেরঅ-কারও-কারেরমতো উচ্চারিতহয়।যেমন যজ্ঞ(জোগগোঁ, লক্ষ্য (লোকখো), রক্ষ (রোকখো), দক্ষ (দোকখো), অক্ষর (ওকখোর), পক্ষ (পোকখো) ইত্যাদি।
কিন্তু এসবনিয়মের ব্যতিক্রমঘটে ‘না’ অর্থে শব্দেরআদিতে ‘অ’ কিংবা ‘অন’ থাকলে অথবাসহিত অর্থেস, সম, সন সংযুক্তথাকলে।সে ক্ষেত্রেস-এরঅ অবিকৃতথাকবে (পরেই, ঈ, উ, ঊযা-ইথাকুক নাকেন)।যেমন-অস্থির, অধীর, অসুখ, অনুপস্থিত, অনুচিত, অতুল, অমূল্য (ওমুললোহতে পারে), অবিনাশ, অশুভ, অকূল, অদূর, অনূঢ়া, অনতিবিলম্বে, অবিচার, অতিষ্ঠ, অনুদার, সম্পূর্ণ, সম্প্রতি, সবিনয়, সবিশেষ, সমূল, সঠিক, সস্ত্রীক, অব্যয়, অখ্যাতি, অজ্ঞ, অক্ষম, অক্ষর, সক্ষমইত্যাদি।
পর্ব - (৪)
ঋ-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণেরআগের ‘অ’ ও হয়-যথা বক্তৃতা(বোক্তৃতা), মসৃণ (মোসৃণ) ইত্যাদি।এখানেও অঅন, (নাঅর্থে) কিংবাসহিত অর্থে, সম্পূর্ণ অর্থেস সমইত্যাদি সংযুক্তহলেও উচ্চারণবিকৃত হবেনা, অমৃত(ওমৃত হবেনা), অনৃতকিংবা সমৃদ্ধইত্যাদি।
পর্ব - (৫)
র-ফলা আদ্যব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘অ’ যুক্ত থাকলে(রবীন্দ্রনাথের কথায় লিপ্ত থাকলে) তাও হয়েযায়-শ্রবণ(স্রোবোন), প্রভাত (প্রোভাত), প্রকাশ (প্রোকাশ), প্রণাম (প্রোনাম), গ্রহণ (গ্রোহোন), ভ্রমণ (ভ্রোমোন), ভ্রম (ভ্রোমো), ভ্রমর (ভ্রোমোর), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রজ (ব্রোজো) ইত্যাদি।
আলোচ্য পাঁচটিসংক্ষিপ্ত সার হচ্ছে-ই, ঈ, উ, ঊ-কার, যঋ র-ফলা, জ্ঞ, যুক্তবর্ণ এবং ক্ষ থাকলে আদ্যঅ-এরউচ্চারণ সাধারণতও-কারহয়ে থাকে।
পর্ব - (৬)
এবার মধ্যঅ-এরউচ্চারণ সম্পর্কেলক্ষ্য করাযাক। মধ্যঅ-এরপর যদিই, ঈ, উ, ঊ-কার, ঋএবং য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণবা ক্ষথাকে, তাহলেতার আগেমধ্য অ-এর উচ্চারণহবে ও-কারের মতো-প্রণতি (প্রোনোতি), বিরতি (বিরোতি), অগণিত (অগোনিত), সমভূমি (সমোভুমি), আলস্য (আলোশশো), সহস্র (সহোস্রো), যবক্ষার (যবোকখার) ইত্যাদি।
পর্ব - (৭)
মধ্য অ-এর আগেযদি অ, আ, এ, এবং ও-কার থাকে, তবে সাধারণতমধ্য ‘অ’ উচ্চারণে ও-কার হয়-মতন (মতোন), যতন (জতোন), রতন (রতোন), শতক (শতোক), জলদ (জলোদ), বলদ (বলোদ), গলদ (গলোদ), শরৎ (শরোত), ভরত (ভরোত), কলস (কলোশ), সরস (শরোশ), কাজল (কাজোল), কাগজ (কাগোজ), হাজত (হাজোত), মানত (মানোত), কানন (কানোন), প্রাথমিক (প্রাথোমিক), আতর (আতোর), আগর(আগোর), ডাগর(ডাগোর), সাগর(শাগোর), নাগর(নাগোর), ওজন(ওজোন), রোচন(রোচোন), লোচন(লোচোন), শোধন(শোধোন), বোধন(বোধোন), শোষণ(শোশোন), লোশন(লোশোন), পোষণ(পোশোন), তোষণ(তোশোন), ওতপ্রোত(ওতোপপ্রোতো), বেতন (বেতোন), চেতন (চেতোন), বেদম (বেদোম), লেহন (লেহোন), শেখর (শেখোর), কেশর (কেশোর) ইত্যাদি।
পর্ব - (৮)
খাঁটি বাংলা শব্দকিংবা পদেক্ষেত্রবিশেষে অনু অ-এর উচ্চারণও-কারেরমতো হয়েথাকে। বাংলায়অনু অ-কার আগেরব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে মিশে থাকে বলেপ্রায়ই উচ্চারিতহয় না।ফলে সংস্কৃতিতেউচ্চারিত এইঅ-ধ্বনিটিবাংলা উচ্চারণেলুপ্ত হয়েহসন্তরূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে্-নাক, কান, হাত, জাত, মান, খান, শান, জান, বান, গান, মলিন, পুলিন, কুলিন, তুহিন, সরল, গরল, তরলইত্যাদি। কিন্তুই-কারবা ও-কারের পরয় (ইয়) থাকলে সেইয়-রঅন্তর্গত অ-এর উচ্চারণলোপ পায়না-প্রিয়, পেয়, দেয়, বিধেয়, শ্রেয়ইত্যাদি। কতগুলোবিশেষণে কিংবাবিশেষণরূপে ব্যবহৃত পদে অন্তিম অ-কার লুপ্তহয় না-কাল (কালোরং বাবর্ণ অর্থে) ছোট (ছোটো), খাট (খাটো), শ্বেত (শেতো), ভাল (ভালোশুভ অর্থে), হীন (হিনো), এত (অ্যাতো), যত (যতো), হেন (হ্যানো), যেন (জ্যানো), কেন (ক্যানো), এগার (অ্যাগারো), বার (বারোসংখ্যা অর্থে), সতের (শতেরো), পনের (পনেরো) ইত্যাদি।
পর্ব - (৯)
আন-প্রত্যয়ান্ত শব্দেরঅন্তিম অ-কার সাধারণতউচ্চারণে ও-কার হয়েযায়-করান(করানো), ধরান(ধরানো), তাড়ান(তাড়ানো), গড়ান (গড়ানো), সরান (শরানো) ইত্যাদি।
দ্বিরুক্তি বিশেষণে এবং অনুকার শব্দেরঅন্তিম অও হয়-পড়-পড়(পড়ো-পড়ো), কাঁদ-কাঁদ(কাঁদো-কাঁদো), কল-কল(কলো-কলো)।
পর্ব - (১০)
ক্রিয়াপদেরঅন্তিম অ-এর উচ্চারণপ্রায়ই ও-এর মতোহয়-করল(কোরলো), বসব(বোসবো), করত(কোরতো), জমল(জোমলো), দেখত(দেখতো), লিখত(লিখতো) ইত্যাদি।
অন্ত অ-এর আগে যদিসংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণথাকে, তাহলেসেই অলুপ্ত হয়না এবংউচ্চারণে ও-কার হয়েযায়-শক্ত(শকতো, চিহ্ন(চিন্নোহ), ধর্ম (ধরমো, যত্ন (জতনো, রত্ন (রতনো), দৃশ্য (দৃশশো), বিজ্ঞ (বিগগোঁ), পদ্ম (পদদোঁ, গ্রীষ্ম (গ্রিশশোঁ) ইত্যাদি।
পর্ব - (১১)
বিশেষ্য শব্দের শেষেহ এবংবিশেষণ শব্দেরশেষে ঢ়(ড়+হ) থাকলে অন্তঅ-এরবিলুপ্তি ঘটেনা-গূঢ়, গাঢ়, দেহ, স্নেহ, কলহ, বিবাহ, সিংহইত্যাদি। এখানেঅ উচ্চারণেও হয়েযায়-গুড়হো, দেহো, স্নেহো, কলোহো, বিবাহো, শিংহো ইত্যাদি।
ত এবংইত প্রত্যয়যোগেগঠিত বিশেষণশব্দের অন্তিমঅ-এরবিলুপ্তি হয়না-গীত, নত, রত, পুলকিত, রক্ষিতইত্যাদি। কিন্তুএ ধরনেরশব্দই যখনবিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়, তখন অ-কারের বিলুপ্তিঘটে। গীত(গীৎ), রক্ষিত(রোকখিত্ পদবিঅর্থে)।
পর্ব - (১২)
অন্তিম অ-এর আগে যদিজ্ঞ, ংএবং রবা ক্ষ-ফলা থাকে, তবে অহসন্ত হয়না এবংউচ্চারণে ও-কার আসে।যেমন-দুঃখ(দুকখো), বঙ্গ(বঙগো), রঙ্গ(রঙগো), সঙ্গ(শঙগো), বংশ(বঙশো, বিংশ(বিঙশো, হংস(হঙশো), শ্রম(শ্রোমো), ব্রত (ব্রোতো), বৃষ (বৃশো), কৃশ (কৃশো), তৃণ (তৃনো) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৩)
বাংলা উচ্চারণে অ-এর মতোআ স্বরধ্বনিরউচ্চারণে তেমনকোনো বিভ্রান্তিনেই। প্রায়সর্বত্রই আ-কারের উচ্চারণঅবিকৃত থাকে, তবে সামান্যদু-একজায়গায় ব্যতিক্রমঘটে। যেমনএকাক্ষর আদীর্ঘ উচ্চারিত্-রাগ (রা-গ্), ভাগ(ভা-গ্), থাক (থা-ক্)।এখানে আ-কারের উচ্চারণযেমন দীর্ঘ, ভাগা, রাগা, থাকা-তেকিন্তু আ-কার তেমনিদীর্ঘরূপে উচ্চারিত নয়।
শব্দের আদিতে স্বতন্ত্রভাবেব্যবহৃত একিংবা আদিব্যঞ্জনে যুক্তএ ভিন্ন, সর্বত্র এ-র উচ্চারণঅবিকৃত থাকে।আদিতে ব্যবহৃতস্বতন্ত্র এ বা ব্যঞ্জনে যুক্তএ-রউচ্চারণ মাঝেমধ্যেঅ্যা-এরমতো হয়(ইংরেজি অ্যাট, ক্যাট-এব্যবহৃত এ-র মতো)। এউচ্চারণকে অনেকে ‘বাঁকা এ’ বলেথাকে। সংস্কৃতেকিংবা প্রাকৃতেএ-কারেরএ ধরনেরউচ্চারণের সন্ধান মেলে না। সেযা-ইহোক, আদ্যএ-কারেরউচ্চারণ কোথায়বিকৃত বাবাঁকা হবেকিংবা হবেনা তাদেখা যাক।শব্দের প্রথমেযদি এ-কার (ব্যঞ্জনেযুক্তও হতেপারে) এবংতার পরেই, ঈ, উ, ঊ, এ, হ, য়, র, শ এবংল থাকে, তবে সাধারণতএ-এরউচ্চারণ বিকৃতবা বাঁকাহয় না।
ক. ই কিংবাঈ থাকলে-একি, দেখি, মেকি, ঢেঁকি, দেশি, পেশি, বেশি ইত্যাদি।
খ. উ-একুনে, সেগুনে, বেগুন, রেঙ্গুন, বেদুইন, কেয়ুরইত্যাদি।
গ. এ-মেয়ে, এনে, চেয়ে, এযে, সেজে, দেখেছি, রেগে, বেগে, যেতে ইত্যাদি।
অবশ্য এনিয়মের কিছুব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন-একের(অ্যাকের), একে-একে (অ্যাকে-অ্যাকে) ইত্যাদি।
ঘ. য়-শ্রেয়, প্রেয়, চেয়ার, দেয়াল, মেয়াদ, পেয়াদা, পেঁয়াজ, খেয়া, নেয়া, কেয়া, মেয়র ইত্যাদি।ব্যতিক্রম-দেয় (দ্যায়), নেয় (ন্যায়) ইত্যাদি।
ঙ. র-এর, সের, টের, ঢের, ঘের, জের, বের ইত্যাদি।
চ. উষ্মবর্ণ(শ, ষ, স, হ)-বেশ, লেশ, দেশ, পেশ, শেষ, এস(এসো), কেহ, দেহ, স্নেহ, মেহ, বেহারা, বেহালা, লেহনইত্যাদি।
ছ. ল-তেল, বেল, মেল, শেল, জেল, এল, ভেল, ফেল, রেল ইত্যাদি।
পর্ব - (১৪)
আদ্য এ-র পর যদি ং, ঙ কিংবাজ্ঞ থাকেএবং তারপরে ই, ঈ, উ, কিংবা ঊঅনুপস্থিত থাকে, সে ক্ষেত্রে এ-কারের উচ্চারণসাধারণত বিকৃতহয়-খেংরা(খ্যাংরা), ভেংচানো (ভ্যাংচানো), নেংটা (ন্যাংটা।কিন্তু এখানেটার পরিবর্তেটি দিলেউচ্চারণ হবেনেংটি, টেংরা(ট্যাংরা কিন্তুই দিলেটেংরি) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৫)
পরে লাথাকলে সাধারণতআদ্য এ-কারের বিকৃতউচ্চারণ হয়েথাকে-খেলা(খ্যালা), চেলা (চ্যালা), ঠেলা (ঠ্যালা), মেলা (ম্যালা), কেলা (ক্যালা), গেলা (গ্যালাগমন অর্থেইত্যাদি। কিন্তুজিলা থেকেজেলা হবে, মিল থেকেমেলা এবংগিল ধাতু(গলাধঃকরণ) থেকে গেলা।
বাংলা্ উচ্চারণেরবিশেষ কিছুনিয়ম রয়েছে।রেডিও-টিভিতেপ্রচারিত খবর, আবৃত্তি বাশিল্পীর কণ্ঠেগান শুনতেগিয়ে আমরাবিষয়টি টেরপাই। বুঝতেপারি, আরদশজন থেকেতাদের উচ্চারণেভিন্নতা রয়েছে।কিন্তু কিসেতাদের উচ্চারণেভিন্নতা এনেদেয়, তাবুঝতে পারিনা। 'বাংলাউচ্চারণের সংক্ষিপ্ত সূত্রাবলি' আত্মস্থ করারমধ্য দিয়েআপনিও শুদ্ধউচ্চারণে বাংলাবলা শিখেনিতে পারেন।
পর্ব - (১৬)
পরে অএবং আস্বরধ্বনি থাকলে কিংবা কোনো স্বরধ্বনিনা থাকলেআদ্য এ-কারের বিকৃতউচ্চারণের প্রবণতা থাকে সমধিক-এখন(অ্যাখোন), এক (অ্যাক), ফেন (ফ্যানভাতের মাড়), একা (অ্যাকা), দেখা (দ্যাখা), কেন (ক্যানো), খেলা (খ্যালো), জেঠা (জ্যাঠা), বেটা (ব্যাটা), পেঁচা (প্যাঁচা) ইত্যাদি। ক্ষেত্রবিশেষেও-কারথাকলেও আদ্যএ-কারেরউচ্চারণ বিকৃতহতে দেখাযায়-মেও(ম্যাও), দেওর(দ্যাওর) ইত্যাদি।কিন্তু এ-কারের পরেই, ঈ, উ, ঊথাকলে সাধারণতএ-কারঅবিকৃত থাকে-খেলি, জেঠি, একুশ, এখনই
পর্ব - (১৭)
যেসব ক্রিয়ামূল (ধাতু) বা শব্দমূলেরআদিতে ইছিল পরেএ-কারেপরিবর্তিত তারপর আ, লা প্রভৃতিথাকলেও উচ্চারণবিকৃত হবেনা-পেটা(পিট্ থেকে), লেখা (লিখথেকে), শেখা(শিখ থেকে) জেলা (জিলাথেকে) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৮)
বাংলা লিখিত ভাষায়যেসব ব্যঞ্জনবর্ণআছে, তারমধ্যে ণ, শ, ষ, স, ং, ঞ, ৎএসব এককবর্ণের এবংজ্ঞ, ক্ষপ্রভৃতি যৌগিকব্যঞ্জনের স্বতন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়না। এরমধ্যে ঞ-এর উচ্চারণঅনুনাসিক হয়অর্থাৎ ইয়ঁ-এর মতো, আবার শব্দেরমধ্যে চবর্গের চারটিবর্ণের সঙ্গেসংযুক্ত হলেঞ-এরউচ্চারণ দন্ত্যন-এরমতো হয়েযায়-কঞ্চি(কোনচি), পঞ্চ(পনচো), অঞ্জলি(অনজোলি), ব্যঞ্জন (ব্যানজোন), বাঞ্ছা (বানছা), অন্যত্র মিঞা(মিয়াঁ) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৯)
ণ-এরউচ্চারণ বাংলায়ন-এরঅনুরূপ, য-এর উচ্চারণজ-এরমতো, ষএবং স-এর উচ্চারণশ-এরমতো। বাংলায়হসন্তকে সংক্ষেপেৎ (খণ্ড-ত) লেখাহয়-উচ্চারণেরবেলায় ত-এর হসন্তউচ্চারণ বিধেয়।ং-এরউচ্চারণ ঙ(অঙ্) এরমতো হয়েথাকে। যৌগিকবর্ণজ্ঞ-এরউচ্চারণ গ্যঁবা গ্গঁ-এর মতো, ক্ষ-এরখ্য বাক্খ-এরঅনুরূপ। আরঋ-এরউচ্চারণ রি-র মতোহয়ে থাকে।
পর্ব - (২০)
শ, ষএবং স-এর উচ্চারণবাংলায় শহলেও যখনদন্তমূলীয় ধ্বনির সঙ্গে শ, ষ এবং সসংযুক্ত হয়, তখন সহধ্বনিহিসেবে দন্তস-এরউচ্চারণ হয়েথাকে-বিশ্রাম(বিস্স্রাম), মিশ্র (মিস্রো), শ্রী(স্রী), শ্রোতা(স্রোতা), শৃগাল (সৃগাল), হস্ত, মস্তক, প্রশ্ন (প্রোস্নো), স্নিগ্ধ(স্নিগ্ধো), স্নেহ, সৃষ্টি, সজন, বিস্মিতইত্যাদি।
পর্ব - (২১)
ম-ফলা যেব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়, বাংলাউচ্চারণে সেব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব হয়-পদ্ম (পদ্দোঁ), আত্মা(আত্তাঁ, গ্রীষ্ম (গ্রিশ্শোঁ), ভস্ম(ভশ্শোঁ), অকস্মাৎ (অকোশশাঁৎ) ইত্যাদি। গ, ট, ণ, ন এবংল-এরসঙ্গে ম-ফলা সংযুক্তহলে উচ্চারণঅবিকৃত থাকে।যেমন-উন্মাদ(উন্মাদ), চিন্ময় (চিন্ময়), হিরণ্ময়(হিরন্ময়) ইত্যাদি।
ল-গুল্ম(গুল্মো), শাল্মলী (শালমোলি), বাল্মীকি (বালমিকি) প্রভৃতি। গ-বাগ্মী(বাগ্মি), যুগ্ম (জুগ্মো) ইত্যাদি।
পর্ব - (২২)
য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরউচ্চারণ সাধারণতদ্বিত্ব হয়-বিদ্যা (বিদ্দা), পূণ্য(পুন্নো), ধন্য (ধোন্নো), অন্য(ওন্নো), পদ্য (পোদ্দো), অদ্য(ওদ্দো), সদ্য (শোদ্দো) ইত্যাদি।তবে য-ফলা যদিআদি ব্যঞ্জনধ্বনিরসঙ্গে যুক্তহয়, তাহলেতার দ্বিত্বনা হয়েউচ্চারণ অনেকটা‘অ্যা’রমতো হয়-ব্যয় (ব্যায়), ন্যস্ত (ন্যাসতো), ব্যস্ত (ব্যাস্তো), ত্যক্ত(ত্যাক্তো) ইত্যাদি।
পর্ব - (২৩)
হ-এর সঙ্গেয-ফলাযুক্ত হলেসংযুক্ত বর্ণেরউচ্চারণ জঝ্-এর মতোশোনায়-বাহ্য(বাজ্ঝো), গ্রাহ্য (গ্রাজ্ঝো), উহ্য(উজ্ঝো), সহ্য (শোজ্ঝো) ইত্যাদি।
সাধারণত ব-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরদ্বিত্ব উচ্চারণহয়ে থাকে-বিশ্বাস (বিশ্শাশ), বিদ্বান(বিদ্দান), নিশ্বাস (নিশ্শাশ) প্রভৃতি।
পর্ব - (২৪)
আদ্য ব্যঞ্জনধ্বনিতে ব-ফলা সংযুক্তহলে প্রায়ইতার কোনোউচ্চারণ হয়না-ত্বক(তক), দ্বারা(দারা), স্বকীয়(শকিও), স্বামী(শামি কিন্তুযখন ভূস্বামীহয় তখনউচ্চারণ ভূশ্শামীঅর্থাৎ ব-ফলার আগেভূ আসায়স্বামীর স-এর দ্বিত্বঘটেছে) ইত্যাদি।সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরসঙ্গে যুক্তব-ফলারওউচ্চারণ হয়না-সান্ত্বনা(শান্তোনা), উজ্জ্বল (উজ্জল) প্রভৃতি।
পর্ব - (২৫)
উৎ (উদ্) উপসর্গযোগেগঠিত শব্দের‘ৎ’ (দ)-এর সঙ্গেসংযুক্ত ব-ফলার উচ্চারণঅবিকৃত থাকে-উদ্বেল (উদ্বেল), উদ্বাহু(উদ্বাহু), উদ্বোধন (উদ্বোধোন), উদ্বেগ(উদ্বেগ) প্রভৃতি। এবংম-এরসঙ্গে সংযুক্তব-এরউচ্চারণও ঠিকথাকে-লম্বা(লম্বা), কম্বু (কোম্বু), দুম্বা(দুম্বা), বুম্বা (বুম্বা), লম্ব(লম্বো) ইত্যাদি।
পর্ব - (২৬)
হ স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃতহলে উচ্চারণেকোনো সমস্যারসৃষ্টি হয়না। কিন্তুহ-এরসঙ্গে ব, ম, ণ, ন, লইত্যাদি বর্ণযুক্ত হলেসম্মিলিত ধ্বনিরউচ্চারণে মনেহয় হ-এর স্থানচ্যুতিঘটেছে। আসলেএসব ক্ষেত্রেহ-সংযুক্তবর্ণ মহাপ্রাণহয়ে থাকে।যথা-আহ্বান(আওভান), বিহ্বল(বিওভল), জিহ্বা(জিওভা), অপরাহ্ন(অপোরান্নোহ), চিহ্ন (চিন্নোহ), আহ্লাদ(আল্লাদ), আহৃত (আরিহ্তো)।
বিসর্গ (ঃ) : পদমধ্যেব্যবহৃত বিসর্গপরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনিরউচ্চারণ দ্বিত্বকরে দেয়।যথা-দুঃখ(দুক্খো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙ্গো), নিঃশেষ(নিশ্শেশ), অতঃপর (অতোপ্পর)।
পর্ব - (২৭)
ড় ঢ় : এদুটি ধ্বনিউচ্চারণে বাংলাদেশেরবিভিন্ন অঞ্চলেবড় গোলমালেরসৃষ্টি হয়।সংস্কৃতে ড়ঢ় বাংলাশব্দের মধ্যেও শেষেব্যবহৃত হলেউচ্চারণ হয়ড়ঢ় (সংস্কৃতেরপীডা, বাংলাভাষায় পীড়া, তামিল নাডুতামিল-নাডু, মুঢ মুঢ়এবং গাঢগাঢ়তে রূপান্তরিত)। বাংলায়ড় হচ্ছেতাড়নাজাত অল্পপ্রাণধ্বনি, আরঢ় হচ্ছেড়-এরমহাপ্রাণ রূপ।কিন্তু বাংলাদেশেরউচ্চারণে মহাপ্রাণধ্বনির প্রকাশসচ্ছন্দ নয়বলে গাঢ়(গাড়হ) হয়েযায়। গাড়এবং ‘প্রগাঢ়পিতামহী’ হয়প্রগাড় পিতামহী।এ কারণেশিক্ষার্থীদের র, ড় এবং ঢ়ধ্বনির উচ্চারণপার্থক্য সম্পর্কেবিশেষভাবে সচেতন হওয়া দরকার। রকম্পনজাত দন্তমূলীয়ধ্বনি এবংড় হচ্ছেতাড়নাজাত অল্পপ্রাণধ্বনি। এদুই ধ্বনিরস্বতন্ত্র উচ্চারণ সঠিক না হলেকেবল শ্রুতিগতদিক থেকেনয়, অর্থগতদিক থেকেওনানা বিপর্যয়ঘটে। যেমন-আমড়া-আমরা, নাড়ী-নারী, বাড়ি-বারি, শাড়ি-ষারি, মাড়ি-মারি, চুড়ি-চুরি, ছুড়ি-ছুরি, ধড়-ধর, বড়-বর, খোড়া-খোরাএবং ‘তারিলাগি কাঁদিনিশিদিন’-এরপরিবর্তে যদিবলা হয়‘তাড়ি লাগিকাঁদি নিশিদিন’ তাহলে কীঅবস্থা দাঁড়ায়!
পর্ব - (২৮)
চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) অনুনাসিক স্বর বোঝাতেবাংলা লেখায়স্বরধ্বনির উপরে দেওয়া হয়ে থাকে।চন্দ্রবিন্দুকে অনুনাসিক উচ্চারণের প্রতীক বলাযায় (উচ্চারণেরসময় নাকদিয়ে বাতাসবের করলেইঅনুনাসিক ধ্বনিরসৃষ্টি হয়।একে ‘নাকীসুর’ উচ্চারণওবলা যায়)। তবেএ কথামনে রাখাপ্রয়োজন, বাংলায়স্বরধ্বনি অনুনাসিক হলে অর্থের পরিবর্তনঘটে। সুতরাংশিক্ষক, অভিনেতা, পাঠক, ঘোষক, আবৃত্তিকারদের যেমন এ বিষয়ে সচেতনহওয়া দরকার, তেমনি শব্দেরঅর্থগত দিকেরজন্য শিক্ষার্থীদেরওএ সম্পর্কেউদাসীন থাকাঅনুচিত। কতিপয়উদাহরণের সাহায্যেচন্দ্রবিন্দুর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতেপারে। কাদা(কর্দম) কাঁদা(রোদন করা), শাখা (ডাল), শাঁখা (শঙ্খেরচুড়ি), রাধা(কৃষ্ণের প্রিয়া), রাঁধা (রন্ধনকরা), পাক(পবিত্র), পাঁক (পাঁক কাদা), বেটে(পাটের দড়ি), বেঁটে (খর্ব), চাই (আকাঙ্ক্ষাকরি), চাঁই(প্রধান সর্দার), ছাদ (ঘরেরআচ্ছাদনী), ছাঁদ (গঠন আকৃতি), বাধা(প্রতিবন্ধক), বাঁধা (বন্ধন), কুড়া (বিঘা), কুঁড়া (তুষেরকণা), কুড়ি(বিশ), কুঁড়ি(মুকুল), চাচা(কাকা, খুড়া), চাঁচা (ছোলা, মার্জিত), তাত (আঁচ, উষ্ণতা), তাঁত(কাপড় বোনারযন্ত্র), দাড়ি(শ্মশ্রু), দাঁড়ি (তুলাদণ্ড), ফোড়া (স্ফোটক, ব্রন), ফোঁড়া(ছিদ্র করা) ইত্যাদি।
পর্ব - (২)
অ-এর পরয-ফলাযুক্তব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে অ-এর উচ্চারণসাধারণত ও-এর মতোহয়।যথা—অদ্য(ওদ্দো), গদ্য (গোদদো), পদ্য (পোদদো), সত্য (শোততো), অত্যন্ত (ওততন্তো), অধ্যাপক (ওদধাপক), সহ্য (শোজঝো) ইত্যাদি।
পর্ব - (৩)
জ্ঞ (জ+ঞ) কিংবা ক্ষ(ক+ষ) থাকলেও আগেরঅ-কারও-কারেরমতো উচ্চারিতহয়।যেমন যজ্ঞ(জোগগোঁ, লক্ষ্য (লোকখো), রক্ষ (রোকখো), দক্ষ (দোকখো), অক্ষর (ওকখোর), পক্ষ (পোকখো) ইত্যাদি।
কিন্তু এসবনিয়মের ব্যতিক্রমঘটে ‘না’ অর্থে শব্দেরআদিতে ‘অ’ কিংবা ‘অন’ থাকলে অথবাসহিত অর্থেস, সম, সন সংযুক্তথাকলে।সে ক্ষেত্রেস-এরঅ অবিকৃতথাকবে (পরেই, ঈ, উ, ঊযা-ইথাকুক নাকেন)।যেমন-অস্থির, অধীর, অসুখ, অনুপস্থিত, অনুচিত, অতুল, অমূল্য (ওমুললোহতে পারে), অবিনাশ, অশুভ, অকূল, অদূর, অনূঢ়া, অনতিবিলম্বে, অবিচার, অতিষ্ঠ, অনুদার, সম্পূর্ণ, সম্প্রতি, সবিনয়, সবিশেষ, সমূল, সঠিক, সস্ত্রীক, অব্যয়, অখ্যাতি, অজ্ঞ, অক্ষম, অক্ষর, সক্ষমইত্যাদি।
পর্ব - (৪)
ঋ-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণেরআগের ‘অ’ ও হয়-যথা বক্তৃতা(বোক্তৃতা), মসৃণ (মোসৃণ) ইত্যাদি।এখানেও অঅন, (নাঅর্থে) কিংবাসহিত অর্থে, সম্পূর্ণ অর্থেস সমইত্যাদি সংযুক্তহলেও উচ্চারণবিকৃত হবেনা, অমৃত(ওমৃত হবেনা), অনৃতকিংবা সমৃদ্ধইত্যাদি।
পর্ব - (৫)
র-ফলা আদ্যব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘অ’ যুক্ত থাকলে(রবীন্দ্রনাথের কথায় লিপ্ত থাকলে) তাও হয়েযায়-শ্রবণ(স্রোবোন), প্রভাত (প্রোভাত), প্রকাশ (প্রোকাশ), প্রণাম (প্রোনাম), গ্রহণ (গ্রোহোন), ভ্রমণ (ভ্রোমোন), ভ্রম (ভ্রোমো), ভ্রমর (ভ্রোমোর), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রজ (ব্রোজো) ইত্যাদি।
আলোচ্য পাঁচটিসংক্ষিপ্ত সার হচ্ছে-ই, ঈ, উ, ঊ-কার, যঋ র-ফলা, জ্ঞ, যুক্তবর্ণ এবং ক্ষ থাকলে আদ্যঅ-এরউচ্চারণ সাধারণতও-কারহয়ে থাকে।
পর্ব - (৬)
এবার মধ্যঅ-এরউচ্চারণ সম্পর্কেলক্ষ্য করাযাক। মধ্যঅ-এরপর যদিই, ঈ, উ, ঊ-কার, ঋএবং য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণবা ক্ষথাকে, তাহলেতার আগেমধ্য অ-এর উচ্চারণহবে ও-কারের মতো-প্রণতি (প্রোনোতি), বিরতি (বিরোতি), অগণিত (অগোনিত), সমভূমি (সমোভুমি), আলস্য (আলোশশো), সহস্র (সহোস্রো), যবক্ষার (যবোকখার) ইত্যাদি।
পর্ব - (৭)
মধ্য অ-এর আগেযদি অ, আ, এ, এবং ও-কার থাকে, তবে সাধারণতমধ্য ‘অ’ উচ্চারণে ও-কার হয়-মতন (মতোন), যতন (জতোন), রতন (রতোন), শতক (শতোক), জলদ (জলোদ), বলদ (বলোদ), গলদ (গলোদ), শরৎ (শরোত), ভরত (ভরোত), কলস (কলোশ), সরস (শরোশ), কাজল (কাজোল), কাগজ (কাগোজ), হাজত (হাজোত), মানত (মানোত), কানন (কানোন), প্রাথমিক (প্রাথোমিক), আতর (আতোর), আগর(আগোর), ডাগর(ডাগোর), সাগর(শাগোর), নাগর(নাগোর), ওজন(ওজোন), রোচন(রোচোন), লোচন(লোচোন), শোধন(শোধোন), বোধন(বোধোন), শোষণ(শোশোন), লোশন(লোশোন), পোষণ(পোশোন), তোষণ(তোশোন), ওতপ্রোত(ওতোপপ্রোতো), বেতন (বেতোন), চেতন (চেতোন), বেদম (বেদোম), লেহন (লেহোন), শেখর (শেখোর), কেশর (কেশোর) ইত্যাদি।
খাঁটি বাংলা শব্দকিংবা পদেক্ষেত্রবিশেষে অনু অ-এর উচ্চারণও-কারেরমতো হয়েথাকে। বাংলায়অনু অ-কার আগেরব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে মিশে থাকে বলেপ্রায়ই উচ্চারিতহয় না।ফলে সংস্কৃতিতেউচ্চারিত এইঅ-ধ্বনিটিবাংলা উচ্চারণেলুপ্ত হয়েহসন্তরূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে্-নাক, কান, হাত, জাত, মান, খান, শান, জান, বান, গান, মলিন, পুলিন, কুলিন, তুহিন, সরল, গরল, তরলইত্যাদি। কিন্তুই-কারবা ও-কারের পরয় (ইয়) থাকলে সেইয়-রঅন্তর্গত অ-এর উচ্চারণলোপ পায়না-প্রিয়, পেয়, দেয়, বিধেয়, শ্রেয়ইত্যাদি। কতগুলোবিশেষণে কিংবাবিশেষণরূপে ব্যবহৃত পদে অন্তিম অ-কার লুপ্তহয় না-কাল (কালোরং বাবর্ণ অর্থে) ছোট (ছোটো), খাট (খাটো), শ্বেত (শেতো), ভাল (ভালোশুভ অর্থে), হীন (হিনো), এত (অ্যাতো), যত (যতো), হেন (হ্যানো), যেন (জ্যানো), কেন (ক্যানো), এগার (অ্যাগারো), বার (বারোসংখ্যা অর্থে), সতের (শতেরো), পনের (পনেরো) ইত্যাদি।
পর্ব - (৯)
আন-প্রত্যয়ান্ত শব্দেরঅন্তিম অ-কার সাধারণতউচ্চারণে ও-কার হয়েযায়-করান(করানো), ধরান(ধরানো), তাড়ান(তাড়ানো), গড়ান (গড়ানো), সরান (শরানো) ইত্যাদি।
দ্বিরুক্তি বিশেষণে এবং অনুকার শব্দেরঅন্তিম অও হয়-পড়-পড়(পড়ো-পড়ো), কাঁদ-কাঁদ(কাঁদো-কাঁদো), কল-কল(কলো-কলো)।
পর্ব - (১০)
ক্রিয়াপদেরঅন্তিম অ-এর উচ্চারণপ্রায়ই ও-এর মতোহয়-করল(কোরলো), বসব(বোসবো), করত(কোরতো), জমল(জোমলো), দেখত(দেখতো), লিখত(লিখতো) ইত্যাদি।
অন্ত অ-এর আগে যদিসংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণথাকে, তাহলেসেই অলুপ্ত হয়না এবংউচ্চারণে ও-কার হয়েযায়-শক্ত(শকতো, চিহ্ন(চিন্নোহ), ধর্ম (ধরমো, যত্ন (জতনো, রত্ন (রতনো), দৃশ্য (দৃশশো), বিজ্ঞ (বিগগোঁ), পদ্ম (পদদোঁ, গ্রীষ্ম (গ্রিশশোঁ) ইত্যাদি।
পর্ব - (১১)
বিশেষ্য শব্দের শেষেহ এবংবিশেষণ শব্দেরশেষে ঢ়(ড়+হ) থাকলে অন্তঅ-এরবিলুপ্তি ঘটেনা-গূঢ়, গাঢ়, দেহ, স্নেহ, কলহ, বিবাহ, সিংহইত্যাদি। এখানেঅ উচ্চারণেও হয়েযায়-গুড়হো, দেহো, স্নেহো, কলোহো, বিবাহো, শিংহো ইত্যাদি।
ত এবংইত প্রত্যয়যোগেগঠিত বিশেষণশব্দের অন্তিমঅ-এরবিলুপ্তি হয়না-গীত, নত, রত, পুলকিত, রক্ষিতইত্যাদি। কিন্তুএ ধরনেরশব্দই যখনবিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়, তখন অ-কারের বিলুপ্তিঘটে। গীত(গীৎ), রক্ষিত(রোকখিত্ পদবিঅর্থে)।
পর্ব - (১২)
অন্তিম অ-এর আগে যদিজ্ঞ, ংএবং রবা ক্ষ-ফলা থাকে, তবে অহসন্ত হয়না এবংউচ্চারণে ও-কার আসে।যেমন-দুঃখ(দুকখো), বঙ্গ(বঙগো), রঙ্গ(রঙগো), সঙ্গ(শঙগো), বংশ(বঙশো, বিংশ(বিঙশো, হংস(হঙশো), শ্রম(শ্রোমো), ব্রত (ব্রোতো), বৃষ (বৃশো), কৃশ (কৃশো), তৃণ (তৃনো) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৩)
বাংলা উচ্চারণে অ-এর মতোআ স্বরধ্বনিরউচ্চারণে তেমনকোনো বিভ্রান্তিনেই। প্রায়সর্বত্রই আ-কারের উচ্চারণঅবিকৃত থাকে, তবে সামান্যদু-একজায়গায় ব্যতিক্রমঘটে। যেমনএকাক্ষর আদীর্ঘ উচ্চারিত্-রাগ (রা-গ্), ভাগ(ভা-গ্), থাক (থা-ক্)।এখানে আ-কারের উচ্চারণযেমন দীর্ঘ, ভাগা, রাগা, থাকা-তেকিন্তু আ-কার তেমনিদীর্ঘরূপে উচ্চারিত নয়।
শব্দের আদিতে স্বতন্ত্রভাবেব্যবহৃত একিংবা আদিব্যঞ্জনে যুক্তএ ভিন্ন, সর্বত্র এ-র উচ্চারণঅবিকৃত থাকে।আদিতে ব্যবহৃতস্বতন্ত্র এ বা ব্যঞ্জনে যুক্তএ-রউচ্চারণ মাঝেমধ্যেঅ্যা-এরমতো হয়(ইংরেজি অ্যাট, ক্যাট-এব্যবহৃত এ-র মতো)। এউচ্চারণকে অনেকে ‘বাঁকা এ’ বলেথাকে। সংস্কৃতেকিংবা প্রাকৃতেএ-কারেরএ ধরনেরউচ্চারণের সন্ধান মেলে না। সেযা-ইহোক, আদ্যএ-কারেরউচ্চারণ কোথায়বিকৃত বাবাঁকা হবেকিংবা হবেনা তাদেখা যাক।শব্দের প্রথমেযদি এ-কার (ব্যঞ্জনেযুক্তও হতেপারে) এবংতার পরেই, ঈ, উ, ঊ, এ, হ, য়, র, শ এবংল থাকে, তবে সাধারণতএ-এরউচ্চারণ বিকৃতবা বাঁকাহয় না।
ক. ই কিংবাঈ থাকলে-একি, দেখি, মেকি, ঢেঁকি, দেশি, পেশি, বেশি ইত্যাদি।
খ. উ-একুনে, সেগুনে, বেগুন, রেঙ্গুন, বেদুইন, কেয়ুরইত্যাদি।
গ. এ-মেয়ে, এনে, চেয়ে, এযে, সেজে, দেখেছি, রেগে, বেগে, যেতে ইত্যাদি।
অবশ্য এনিয়মের কিছুব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন-একের(অ্যাকের), একে-একে (অ্যাকে-অ্যাকে) ইত্যাদি।
ঘ. য়-শ্রেয়, প্রেয়, চেয়ার, দেয়াল, মেয়াদ, পেয়াদা, পেঁয়াজ, খেয়া, নেয়া, কেয়া, মেয়র ইত্যাদি।ব্যতিক্রম-দেয় (দ্যায়), নেয় (ন্যায়) ইত্যাদি।
ঙ. র-এর, সের, টের, ঢের, ঘের, জের, বের ইত্যাদি।
চ. উষ্মবর্ণ(শ, ষ, স, হ)-বেশ, লেশ, দেশ, পেশ, শেষ, এস(এসো), কেহ, দেহ, স্নেহ, মেহ, বেহারা, বেহালা, লেহনইত্যাদি।
ছ. ল-তেল, বেল, মেল, শেল, জেল, এল, ভেল, ফেল, রেল ইত্যাদি।
পর্ব - (১৪)
আদ্য এ-র পর যদি ং, ঙ কিংবাজ্ঞ থাকেএবং তারপরে ই, ঈ, উ, কিংবা ঊঅনুপস্থিত থাকে, সে ক্ষেত্রে এ-কারের উচ্চারণসাধারণত বিকৃতহয়-খেংরা(খ্যাংরা), ভেংচানো (ভ্যাংচানো), নেংটা (ন্যাংটা।কিন্তু এখানেটার পরিবর্তেটি দিলেউচ্চারণ হবেনেংটি, টেংরা(ট্যাংরা কিন্তুই দিলেটেংরি) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৫)
পরে লাথাকলে সাধারণতআদ্য এ-কারের বিকৃতউচ্চারণ হয়েথাকে-খেলা(খ্যালা), চেলা (চ্যালা), ঠেলা (ঠ্যালা), মেলা (ম্যালা), কেলা (ক্যালা), গেলা (গ্যালাগমন অর্থেইত্যাদি। কিন্তুজিলা থেকেজেলা হবে, মিল থেকেমেলা এবংগিল ধাতু(গলাধঃকরণ) থেকে গেলা।
বাংলা্ উচ্চারণেরবিশেষ কিছুনিয়ম রয়েছে।রেডিও-টিভিতেপ্রচারিত খবর, আবৃত্তি বাশিল্পীর কণ্ঠেগান শুনতেগিয়ে আমরাবিষয়টি টেরপাই। বুঝতেপারি, আরদশজন থেকেতাদের উচ্চারণেভিন্নতা রয়েছে।কিন্তু কিসেতাদের উচ্চারণেভিন্নতা এনেদেয়, তাবুঝতে পারিনা। 'বাংলাউচ্চারণের সংক্ষিপ্ত সূত্রাবলি' আত্মস্থ করারমধ্য দিয়েআপনিও শুদ্ধউচ্চারণে বাংলাবলা শিখেনিতে পারেন।
পর্ব - (১৬)
পরে অএবং আস্বরধ্বনি থাকলে কিংবা কোনো স্বরধ্বনিনা থাকলেআদ্য এ-কারের বিকৃতউচ্চারণের প্রবণতা থাকে সমধিক-এখন(অ্যাখোন), এক (অ্যাক), ফেন (ফ্যানভাতের মাড়), একা (অ্যাকা), দেখা (দ্যাখা), কেন (ক্যানো), খেলা (খ্যালো), জেঠা (জ্যাঠা), বেটা (ব্যাটা), পেঁচা (প্যাঁচা) ইত্যাদি। ক্ষেত্রবিশেষেও-কারথাকলেও আদ্যএ-কারেরউচ্চারণ বিকৃতহতে দেখাযায়-মেও(ম্যাও), দেওর(দ্যাওর) ইত্যাদি।কিন্তু এ-কারের পরেই, ঈ, উ, ঊথাকলে সাধারণতএ-কারঅবিকৃত থাকে-খেলি, জেঠি, একুশ, এখনই
পর্ব - (১৭)
যেসব ক্রিয়ামূল (ধাতু) বা শব্দমূলেরআদিতে ইছিল পরেএ-কারেপরিবর্তিত তারপর আ, লা প্রভৃতিথাকলেও উচ্চারণবিকৃত হবেনা-পেটা(পিট্ থেকে), লেখা (লিখথেকে), শেখা(শিখ থেকে) জেলা (জিলাথেকে) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৮)
বাংলা লিখিত ভাষায়যেসব ব্যঞ্জনবর্ণআছে, তারমধ্যে ণ, শ, ষ, স, ং, ঞ, ৎএসব এককবর্ণের এবংজ্ঞ, ক্ষপ্রভৃতি যৌগিকব্যঞ্জনের স্বতন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়না। এরমধ্যে ঞ-এর উচ্চারণঅনুনাসিক হয়অর্থাৎ ইয়ঁ-এর মতো, আবার শব্দেরমধ্যে চবর্গের চারটিবর্ণের সঙ্গেসংযুক্ত হলেঞ-এরউচ্চারণ দন্ত্যন-এরমতো হয়েযায়-কঞ্চি(কোনচি), পঞ্চ(পনচো), অঞ্জলি(অনজোলি), ব্যঞ্জন (ব্যানজোন), বাঞ্ছা (বানছা), অন্যত্র মিঞা(মিয়াঁ) ইত্যাদি।
পর্ব - (১৯)
ণ-এরউচ্চারণ বাংলায়ন-এরঅনুরূপ, য-এর উচ্চারণজ-এরমতো, ষএবং স-এর উচ্চারণশ-এরমতো। বাংলায়হসন্তকে সংক্ষেপেৎ (খণ্ড-ত) লেখাহয়-উচ্চারণেরবেলায় ত-এর হসন্তউচ্চারণ বিধেয়।ং-এরউচ্চারণ ঙ(অঙ্) এরমতো হয়েথাকে। যৌগিকবর্ণজ্ঞ-এরউচ্চারণ গ্যঁবা গ্গঁ-এর মতো, ক্ষ-এরখ্য বাক্খ-এরঅনুরূপ। আরঋ-এরউচ্চারণ রি-র মতোহয়ে থাকে।
পর্ব - (২০)
শ, ষএবং স-এর উচ্চারণবাংলায় শহলেও যখনদন্তমূলীয় ধ্বনির সঙ্গে শ, ষ এবং সসংযুক্ত হয়, তখন সহধ্বনিহিসেবে দন্তস-এরউচ্চারণ হয়েথাকে-বিশ্রাম(বিস্স্রাম), মিশ্র (মিস্রো), শ্রী(স্রী), শ্রোতা(স্রোতা), শৃগাল (সৃগাল), হস্ত, মস্তক, প্রশ্ন (প্রোস্নো), স্নিগ্ধ(স্নিগ্ধো), স্নেহ, সৃষ্টি, সজন, বিস্মিতইত্যাদি।
পর্ব - (২১)
ম-ফলা যেব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়, বাংলাউচ্চারণে সেব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব হয়-পদ্ম (পদ্দোঁ), আত্মা(আত্তাঁ, গ্রীষ্ম (গ্রিশ্শোঁ), ভস্ম(ভশ্শোঁ), অকস্মাৎ (অকোশশাঁৎ) ইত্যাদি। গ, ট, ণ, ন এবংল-এরসঙ্গে ম-ফলা সংযুক্তহলে উচ্চারণঅবিকৃত থাকে।যেমন-উন্মাদ(উন্মাদ), চিন্ময় (চিন্ময়), হিরণ্ময়(হিরন্ময়) ইত্যাদি।
ল-গুল্ম(গুল্মো), শাল্মলী (শালমোলি), বাল্মীকি (বালমিকি) প্রভৃতি। গ-বাগ্মী(বাগ্মি), যুগ্ম (জুগ্মো) ইত্যাদি।
য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরউচ্চারণ সাধারণতদ্বিত্ব হয়-বিদ্যা (বিদ্দা), পূণ্য(পুন্নো), ধন্য (ধোন্নো), অন্য(ওন্নো), পদ্য (পোদ্দো), অদ্য(ওদ্দো), সদ্য (শোদ্দো) ইত্যাদি।তবে য-ফলা যদিআদি ব্যঞ্জনধ্বনিরসঙ্গে যুক্তহয়, তাহলেতার দ্বিত্বনা হয়েউচ্চারণ অনেকটা‘অ্যা’রমতো হয়-ব্যয় (ব্যায়), ন্যস্ত (ন্যাসতো), ব্যস্ত (ব্যাস্তো), ত্যক্ত(ত্যাক্তো) ইত্যাদি।
হ-এর সঙ্গেয-ফলাযুক্ত হলেসংযুক্ত বর্ণেরউচ্চারণ জঝ্-এর মতোশোনায়-বাহ্য(বাজ্ঝো), গ্রাহ্য (গ্রাজ্ঝো), উহ্য(উজ্ঝো), সহ্য (শোজ্ঝো) ইত্যাদি।
সাধারণত ব-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরদ্বিত্ব উচ্চারণহয়ে থাকে-বিশ্বাস (বিশ্শাশ), বিদ্বান(বিদ্দান), নিশ্বাস (নিশ্শাশ) প্রভৃতি।
আদ্য ব্যঞ্জনধ্বনিতে ব-ফলা সংযুক্তহলে প্রায়ইতার কোনোউচ্চারণ হয়না-ত্বক(তক), দ্বারা(দারা), স্বকীয়(শকিও), স্বামী(শামি কিন্তুযখন ভূস্বামীহয় তখনউচ্চারণ ভূশ্শামীঅর্থাৎ ব-ফলার আগেভূ আসায়স্বামীর স-এর দ্বিত্বঘটেছে) ইত্যাদি।সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরসঙ্গে যুক্তব-ফলারওউচ্চারণ হয়না-সান্ত্বনা(শান্তোনা), উজ্জ্বল (উজ্জল) প্রভৃতি।
উৎ (উদ্) উপসর্গযোগেগঠিত শব্দের‘ৎ’ (দ)-এর সঙ্গেসংযুক্ত ব-ফলার উচ্চারণঅবিকৃত থাকে-উদ্বেল (উদ্বেল), উদ্বাহু(উদ্বাহু), উদ্বোধন (উদ্বোধোন), উদ্বেগ(উদ্বেগ) প্রভৃতি। এবংম-এরসঙ্গে সংযুক্তব-এরউচ্চারণও ঠিকথাকে-লম্বা(লম্বা), কম্বু (কোম্বু), দুম্বা(দুম্বা), বুম্বা (বুম্বা), লম্ব(লম্বো) ইত্যাদি।
হ স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃতহলে উচ্চারণেকোনো সমস্যারসৃষ্টি হয়না। কিন্তুহ-এরসঙ্গে ব, ম, ণ, ন, লইত্যাদি বর্ণযুক্ত হলেসম্মিলিত ধ্বনিরউচ্চারণে মনেহয় হ-এর স্থানচ্যুতিঘটেছে। আসলেএসব ক্ষেত্রেহ-সংযুক্তবর্ণ মহাপ্রাণহয়ে থাকে।যথা-আহ্বান(আওভান), বিহ্বল(বিওভল), জিহ্বা(জিওভা), অপরাহ্ন(অপোরান্নোহ), চিহ্ন (চিন্নোহ), আহ্লাদ(আল্লাদ), আহৃত (আরিহ্তো)।
বিসর্গ (ঃ) : পদমধ্যেব্যবহৃত বিসর্গপরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনিরউচ্চারণ দ্বিত্বকরে দেয়।যথা-দুঃখ(দুক্খো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙ্গো), নিঃশেষ(নিশ্শেশ), অতঃপর (অতোপ্পর)।
ড় ঢ় : এদুটি ধ্বনিউচ্চারণে বাংলাদেশেরবিভিন্ন অঞ্চলেবড় গোলমালেরসৃষ্টি হয়।সংস্কৃতে ড়ঢ় বাংলাশব্দের মধ্যেও শেষেব্যবহৃত হলেউচ্চারণ হয়ড়ঢ় (সংস্কৃতেরপীডা, বাংলাভাষায় পীড়া, তামিল নাডুতামিল-নাডু, মুঢ মুঢ়এবং গাঢগাঢ়তে রূপান্তরিত)। বাংলায়ড় হচ্ছেতাড়নাজাত অল্পপ্রাণধ্বনি, আরঢ় হচ্ছেড়-এরমহাপ্রাণ রূপ।কিন্তু বাংলাদেশেরউচ্চারণে মহাপ্রাণধ্বনির প্রকাশসচ্ছন্দ নয়বলে গাঢ়(গাড়হ) হয়েযায়। গাড়এবং ‘প্রগাঢ়পিতামহী’ হয়প্রগাড় পিতামহী।এ কারণেশিক্ষার্থীদের র, ড় এবং ঢ়ধ্বনির উচ্চারণপার্থক্য সম্পর্কেবিশেষভাবে সচেতন হওয়া দরকার। রকম্পনজাত দন্তমূলীয়ধ্বনি এবংড় হচ্ছেতাড়নাজাত অল্পপ্রাণধ্বনি। এদুই ধ্বনিরস্বতন্ত্র উচ্চারণ সঠিক না হলেকেবল শ্রুতিগতদিক থেকেনয়, অর্থগতদিক থেকেওনানা বিপর্যয়ঘটে। যেমন-আমড়া-আমরা, নাড়ী-নারী, বাড়ি-বারি, শাড়ি-ষারি, মাড়ি-মারি, চুড়ি-চুরি, ছুড়ি-ছুরি, ধড়-ধর, বড়-বর, খোড়া-খোরাএবং ‘তারিলাগি কাঁদিনিশিদিন’-এরপরিবর্তে যদিবলা হয়‘তাড়ি লাগিকাঁদি নিশিদিন’ তাহলে কীঅবস্থা দাঁড়ায়!
পর্ব - (২৮)
চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) অনুনাসিক স্বর বোঝাতেবাংলা লেখায়স্বরধ্বনির উপরে দেওয়া হয়ে থাকে।চন্দ্রবিন্দুকে অনুনাসিক উচ্চারণের প্রতীক বলাযায় (উচ্চারণেরসময় নাকদিয়ে বাতাসবের করলেইঅনুনাসিক ধ্বনিরসৃষ্টি হয়।একে ‘নাকীসুর’ উচ্চারণওবলা যায়)। তবেএ কথামনে রাখাপ্রয়োজন, বাংলায়স্বরধ্বনি অনুনাসিক হলে অর্থের পরিবর্তনঘটে। সুতরাংশিক্ষক, অভিনেতা, পাঠক, ঘোষক, আবৃত্তিকারদের যেমন এ বিষয়ে সচেতনহওয়া দরকার, তেমনি শব্দেরঅর্থগত দিকেরজন্য শিক্ষার্থীদেরওএ সম্পর্কেউদাসীন থাকাঅনুচিত। কতিপয়উদাহরণের সাহায্যেচন্দ্রবিন্দুর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতেপারে। কাদা(কর্দম) কাঁদা(রোদন করা), শাখা (ডাল), শাঁখা (শঙ্খেরচুড়ি), রাধা(কৃষ্ণের প্রিয়া), রাঁধা (রন্ধনকরা), পাক(পবিত্র), পাঁক (পাঁক কাদা), বেটে(পাটের দড়ি), বেঁটে (খর্ব), চাই (আকাঙ্ক্ষাকরি), চাঁই(প্রধান সর্দার), ছাদ (ঘরেরআচ্ছাদনী), ছাঁদ (গঠন আকৃতি), বাধা(প্রতিবন্ধক), বাঁধা (বন্ধন), কুড়া (বিঘা), কুঁড়া (তুষেরকণা), কুড়ি(বিশ), কুঁড়ি(মুকুল), চাচা(কাকা, খুড়া), চাঁচা (ছোলা, মার্জিত), তাত (আঁচ, উষ্ণতা), তাঁত(কাপড় বোনারযন্ত্র), দাড়ি(শ্মশ্রু), দাঁড়ি (তুলাদণ্ড), ফোড়া (স্ফোটক, ব্রন), ফোঁড়া(ছিদ্র করা) ইত্যাদি।