Home
Unlabelled
পদ/ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | blogkori
পদ/ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | blogkori
May 18, 2017
Read
May 18, 2017
ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি (পদ)
বর্তমানে পদকে শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থবোধক বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি হলো শব্দ। আর শব্দের সঙ্গে বিভক্তিযুক্ত হলে হয় পদ। কথার ক্ষুদ্রতম অংশকে শব্দ বলে। কথাকে ভাঙলে বাক্য পাওয়া যায়। বাক্যকে ভাঙলে পদ আর পদকে ভাঙলে পাওয়া যায় শব্দ+বিভক্তি (নামবিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি)। তাই বলা হয়, বিভক্তিযুক্ত শব্দই পদ। শব্দ ও পদ রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। শব্দ ও পদ নির্মাণের নানান দিক ব্যাকরণের যে অংশে উপস্থাপিত বা আলোচিত হয় তাকেই বলা হয় রূপতত্ত্ব। ড. হুমায়ুন আজাদ বলেন: রূপতত্ত্ব হচ্ছে শব্দের আভ্যন্ত ও সংগঠন বিশ্লেষণের বিদ্যা। বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইতে বলা হয়েছে, রূপতত্ত্বের দুটি প্রধান এলাকা হলো: শব্দনির্মাণ ও পদনির্মাণ। এছাড়াও দুটি গৌণ এলাকা আছে। যেমন : শব্দশ্রেণি নির্ধারণ এবং শব্দের উৎস নির্ণয়।
শব্দশ্রেণির প্রকরণঃ
শব্দ বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি দুটি মিলে যে শব্দ তৈরি করে তাকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে। শব্দশ্রেণিকে আট ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:১. বিশেষ্য : নামবাচক শব্দ।
২. সর্বনাম : নামের পরিবর্তনবাচক শব্দ।
৩. বিশেষণ : দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণবাচক শব্দ।
৪. ক্রিয়া : কর্মবাচক শব্দ।
৫. ক্রিয়া বিশেষণ : ক্রিয়া বিশেষণবাচক শব্দ।
৬. অনুসর্গ : সম্পর্ক স্থাপনবাচক শব্দ।
৭. যোজক : সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচনবাচক শব্দ।
৮. আবেগশব্দ : আবেগবাচক শব্দ।
বিশেষ্য /Noun ঃ
নামবাচক শব্দকে বিশেষ্য বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে কোন ব্যক্তি, বস্তু, জাতি, সমষ্টি, স্থান/দেশ, কাল, গুণ, ক্রিয়া, কর্ম ও গুণের নামকে বিশেষ্য বলে। বিশেষ্যকে আবার বিভিন্নভাবে ভাগ করা যেতে পারে। কে, কি, কারা দিয়ে প্রশ্ন করলে বিশেষ্য পাওয়া যায়। বচন ও লিঙ্গ বিশেষ্যের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ্য কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. নামবাচক বিশেষ্য / Proper Noun : ডাকনামকে সংজ্ঞাবাচক শব্দ বা নামবাচক শব্দ বলে। যেমন:
ব্যক্তি : হাসান, ইমরান, আসিফ, ফারজানা, নাবিলা, মেধা, মিলন, মাটি, নাবা, নিশি, নজরুল।
স্থান/দেশ/গ্রাম : ঢাকা, বরিশাল, ফেনি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ, আমেরিকা, সেনগাঁও
গ্রন্থ : গীতাঞ্জলি, ঝিঙেফুল, অগ্নিবীণা, হাসু, শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা, ছানাবড়া, কুরআন।
নদী : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা।
পর্বত : হিমালয়, ককেশাস, হিন্দুকুশ।
একক সৃষ্টি : সূর্য, পৃথিবী।
২. জাতিবাচক বিশেষ্য/Common Noun : যে নামে একককে চেনা যায় না তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
মানুষ : হাসান, হাসিনা।
প্রাণী : ঘোড়া, ছাগল, কুকুর, বেড়াল (গরু জাতিবাচক কিন্তু ‘লালি’ ডাকনাম তাই নামবাচক)।
বিষয় : ফুল, পাখি, জাতি, একক সৃষ্টি, ভাষা, বই।
৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য /Material Noun
যে নামে বস্তু বা দ্রব্যকে বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
তরল : পানি, দুধ, তেল, মধু, সিরাপ।
পানীয় : কোক।
কঠিন : লোহা, সোনা, পাথর, বরফ।
বায়বীয় : বাতাস, গ্যাস।
বৃক্ষ : আমগাছ, জামগাছ।
লেখাপড়া : বই, খাতা, কলম।
৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য/বহুবচনজাতীয় বিশেষ্য/Collective Noun : যে নামে সমষ্টি বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
মানুষ : দল, বাহিনী, সংঘ, সভা, সমিতি, পঞ্চায়েত, বহর, জনতা।প্রাণী : ঝাঁক, পাল।
৫. গুণবাচক বিশেষ্য: /Abstract Noun : বিশেষ্যের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে বিশেষ্য তৈরি হয় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সততা>সৎ, বীরত্ব>বীর, তারল্য>তরল, তরুণ>তারুণ্য, সৌন্দর্য>সুন্দর, দৈন্য>দীন (বিশেষ্য>বিশেষণ)।
৬. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য/Verbal Noun : ক্রিয়ার সাথে প্রত্যয়যুক্ত করে যে বিশেষ্য তৈরি করা হয় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : গমন, দর্শন/দেখা, শোনা।
সর্বনাম /Pronoun
বিশেষ্য বা নামপদের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম বলে। যেমন: আমি—আমরা, তুমি— তোমরা, তুই—তোরা, আপনি—আপনারা, সে—তারা/ওরা/এরা, তিনি/ইনি/ উনি—তাঁরা/ওঁরা/এঁরা। পক্ষ (পুরুষ) ও বচনের উপর নির্ভর করে সর্বনাম বিভিন্নরূপ ধারণ করে। সম্মানিত ব্যক্তি হলে সর্বনামে চন্দ্রবিন্দু বসে। সর্বনাম কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন:
প্রকরণ | একবচন | বহুবচন |
১. ব্যক্তিবাচক যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি বোঝায়। বক্তাপক্ষ শ্রোতাপক্ষ অন্যপক্ষ | আমি, আমাকে তুমি, তুই, তোকে আপনি, আপনাকে সে (নর), শে (নারী), তিনি, তার, তাকে এ, এর, ও, ওর | আমরা, আমাদের তোমরা, তোমাদের, তোরা, তোদের আপনারা, আপনাদের তারা, তাদের, এরা, এদের, ওর, ওদের |
২. নির্দেশকবাচক যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তির কাছ থেকে সামীপ্য বা দূরত্ব নির্দেশ করে। | এ, এই, এটা, ইনি, ইহা ও, ওরা, ওটা, উনি, উহা | এরা, ইহারা ওগুলো, ওদের, ওরা |
৩. অনির্দেশকবাচক /অনির্দিষ্টবাচক যে সর্বনাম দিয়ে কোনো অনির্দিষ্ট বা পরিচয় হীন ব্যক্তি, বস্তু বা ভাব বোঝায়। কোন, কেহ, কেউ, যা কিছু, | কোন কিছু | কেউ কেউ, কিছু কিছু |
৪. প্রশ্নবাচক যে সর্বনাম দিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা বোঝায়। | কে, কি/কী, কেন, কাহার, কিসের | কোনগুলো, কে কে, কী কী, কার কার |
৫. সংযোগবাচক যে সর্বনাম দিয়ে দুই বা অধিক ব্যক্তি বা বস্তু সংযোগ বোঝায়। | যে, যেটি, যা তা, যে সে, যিনি, যিনি, তিনি, যাহা | যে যে যা যা, যারা যারা, যাকে যাকে, যেগুলো, যারা, যাহারা |
৬. আত্মবাচক যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি নিজকে বোঝায়। | স্বয়ং, নিজ, আপনি, খোদ | আপনারা |
৭. সমষ্টিবাচক /সাকল্যবাচক যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি, বস্তু বা ভারে সমষ্টিকে বোঝায়। | | সব, সকল, উভয়, সমুদয়, তাবৎ |
৮. ব্যতিহার যে সর্বনাম দিয়ে সর্বনামের দ্বিত্ব রূপ বোঝায়। | আপনি, নিজে | আপনা আপনি, নিজে নিজে |
৯. অন্যাদিবাচক যে সর্বনাম দিয়ে অন্য বা অপরকে বোঝায়। | অন্য, অপর, পর | অন্যরা, অপররা, পররা |
১০. সাপেক্ষ সর্বনাম যে সর্বনাম একে অন্যের উপর নির্ভরশীল এবং এরা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটায়। | যে-সে, যেমন-তেমন, যতক্ষণ-ততক্ষণ, যাকে-তাকে | যাদের-তাদের |
বিশেষণ / Adjective
বিশেষ্য ও সর্বনামের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণকে বিশেষণ বলে। কেমন, কতো, কিভাবে, কয়টা দিয়ে প্রশ্ন্ করলে বিশেষণ পাওয়া যায়। সংখ্যা ও নির্দেশক বিশেষণের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষণ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনামের আগে বসে নামকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) গুণবাচক : দক্ষ, ঠান্ডা, চৌকস, মধুর, কর্কশ, রাগী, ভদ্র ইত্যাদি।
খ) রূপবাচক : সবুজ, সুন্দর, নীল, কাল, সাদা ইত্যাদি।
গ) অবস্থাবাচক : ফুটন্ত, ঘুমন্ত, শহুরে, সুফলা, রোগা, তাজা, খোঁড়া, পড়া, শোনা ইত্যাদি।
ঘ) অনির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক : শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, অনেক অনেক।
ঙ) নির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক : একশটি, দশটি, পঞ্চাশটি ইত্যাদি।
চ) স্থানবাচক : স্থান+ই— পাবনাই, ঢাকাই, মিরপুরি, স্থান+ঈয়— ইউরোপীয় ইত্যাদি।
ছ) সর্বনামবাচক : যত— তত, এত, কত, কেমন, এই, সেই, কোন, কোন কোন, স্বীয় ইত্যাদি।
জ) উপাদানবাচক : বস্তু+এ— বেলে, মেটে, কাগুজে, বস্তু+র— তালপাতার, লোহার ইত্যাদি।
ঝ) প্রশ্নবাচক : কত, কেমন, কোন ইত্যাদি।
ঞ) বর্ণবাচক : লাল, কাল, সাদা, নীল, ফ্যাকাশে ইত্যাদি।
ট) ক্রিয়াবাচক : গেল/গত/আসছে/আগামী, চলন্ত/চলমান,বাড়ন্ত, পতিত, নিবু নিবু, কাঁদো কাঁদো।
ঠ) ধ্বনাত্মকবাচক : শব্দ+এ— ঝকঝকে, কনকনে, ঝমঝমে, ঝিরঝিরে, গমগমে, ফুরফুরে, থইথই।
ড) বিশেষণে বিশেষণ : দারুণ প্রাণবন্ত, টকটকে লাল, ধবধবে সাদা ইত্যাদি।
ঢ়) সম্বন্ধবাচক : শব্দ+র/এর=অনেক দূরের, মাটির ঘরের, গরিবের ছেলে, আনন্দের সংসার।
২. ভাব বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনাম ছাড়া অন্য শব্দকে বিশেষিত করে তাকে ভাব বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) বিশেষণীয় বিশেষণ : যে বিশেষণ নাম বিশেষণ বা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন : অতি, সামান্য।
খ) অব্যয়ের বিশেষণ : যে বিশেষণ অব্যয়কে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ। যেমন : ধিক-শত ধিক
গ) ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : খুব তাড়াতাড়ি, আরো জোরে, বড় সুন্দর, অতি চমৎকার
গঠনের দিক দিয়ে বিশেষণ দুই প্রকার। যেমন :
১. মৌলিক বিশেষণ : যে বিশেষণকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক বিশেষণ বলে। যেমন: ভালো, মন্দ।
২. সাধিত বিশেষণ : যে বিশেষণকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে সাধিত বিশেষণ বলে। সাধারণত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত বিশেষণ তৈরি করা হয়। যেমন : চলন্ত, ডুবন্ত, সামাজিক।
তুলনামূলক বিশেষণ /অতিশায়ন বিশেষণ :
Degree /তুলনা | Positive /গুণ | Comparative /দুয়ের মধ্যে তুলনা | Superlative /অনেকের মধ্যে তুলনা |
English | Adjective /Adj Good, beautiful | Adjective+er more +Adj better, more beautiful | Adjective +est most +Adj best, most beautiful |
তৎসম শব্দ | বিশেষণ | বিশেষণ +য়ান | বিশেষণ +ষ্ঠ |
| লঘু অল্প বৃদ্ধ শ্রেয় | লঘীয়ান কনীয়ান জয়্যান শ্রেয়ান | লঘিষ্ঠ কনিষ্ঠ জেষ্ঠ্য শ্রেষ্ঠ |
বাংলা শব্দ | বিশেষণ | চাইতে, চেয়ে, থেকে, অধিক, অপেক্ষা, অনেক, বেশি, অল্প, কম | সবচাইতে, সর্বাধিক সবচে, সর্বাপেক্ষা |
‘তর’ সংস্কৃত ‘তরপ/তরক/ষ্টরচ’ প্রত্যয় থেকে এবং ‘তম’ সংস্কৃত ‘তমট/তমপ’ প্রত্যয় থেকে বাংলা ‘তর ও তম’ হয়েছে। বিশেষণের তুলনা দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তর’ আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তম’ বসে। এরা বিশেষ্যবাচক শব্দে বসে না। যেমন: বৃহৎ: বৃহত্তর— বৃহত্তম, দীর্ঘ: দীর্ঘতর—দীর্ঘতম। এমন বহু শব্দ রয়েছে। যেমন : হীনতর, মহত্তর, ক্ষুদ্রতর, উন্নততর, উচ্চতর, দীর্ঘতর, গুরুতর, এগারতম, পঞ্চাশতম, মহত্তম, নীচতম, প্রিয়তম, মধুরতম, ক্ষুদ্রতম, যোগ্যতম ইত্যাদি। কিন্তু সংস্কৃত শব্দে য়ান—ষ্ঠ বসলে তর—তম বসে না। শ্রেয়— শ্রেয়ান— শ্রেষ্ঠ, লঘু— লঘীয়ান— লঘীষ্ঠ, অল্প— কনিয়ান— কনিষ্ঠ। কনিষ্ঠতর বা কনিষ্ঠতম বসে না। বাংলা শব্দে দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে বিশেষণের আগে ‘হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা’ ব্যবহার করা হয় অথবা অনেক, বেশি, খুব’ বসানো হয় কম বুঝাতে ‘অল্প বা কম’ বসানো হয় আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘সবচে, সবথেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়।
ক্রিয়া / Verb
ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে। ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে ক্রিয়াপদ হয়। কাজবাচক শব্দই ক্রিয়া। ধাতু দুই প্রকার। যেমন:
১. মৌলিক ধাতু: যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক ধাতু বলে। যেমন: কর, পড়, দেখ।
২. সাধিত ধাতু: যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে। অথবা যে ধাতুকে ভাঙলে প্রত্যয় পাওয়া যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন: করা, পড়া, দেখা, পড়ি, পড়ছি ইত্যাদি।
ক্রিয়ার প্রকরণ
যে শব্দ দিয়ে কাজ করা বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। ক্রিয়া কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
ক) অনুক্ত ক্রিয়া : যার ক্রিয়া থাকে না।
খ) ভাব প্রকাশক ক্রিয়া : সমাপিকা, অসমাপিকা।
গ) কর্ম প্রকাশ ক্রিয়া : সকর্মক, অকর্মক, দ্বিকর্মক, প্রযোজক ক্রিয়া।
ঘ) গঠনগত ক্রিয়া : একক ক্রিয়া, দ্বিত্ব ক্রিয়া, মিশ্রক্রিয়া, অস্তি বাচক ক্রিয়া, নেতিবাচক ক্রিয়া।
নিচে সকলপ্রকার ক্রিয়ার সংজ্ঞা ও নমুনা দেয়া হলো:
১. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) বই (কর্ম) পড়ে (ক্রিয়া)।
২. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম আছে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) তাকে (ব্যক্তিকর্ম) একটি বই (বস্তুকর্ম) পড়তে দিয়েছে (ক্রিয়া)।
৩. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম নাই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) সবসময় পড়ে (ক্রিয়া)।
৪. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে বাক্যের অর্থপূর্ণ সমাপ্তি ঘটে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে একটি বই কিনেছে।
৫. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে বাক্যের অর্থপূর্ণ সমাপ্তি ঘটে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে একটি বই কিনে...। এ বা র-বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদকে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ বলে।
তবে অসমাপিকাকে সমাপিকা করতে আরেকটি ক্রিয়া লাগে। যেমন: সে একটি বই কিনে হাসানকে উপহার দেবে।
৬. যৌগিক ক্রিয়া: একাধিক ক্রিয়া নিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অথবা কর্তার কাজ শেষ করতে একের অধিক ক্রিয়া থাকলে যৌগিক ক্রিয়া হয়। দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি অসমাপিকার একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। যেমন: খেয়ে ফেলল, বসে পড়ল, ঘুমিয়ে গেল, করতে পারবে। সে বইটি পড়তে থাকল।
৭. সমধাতুজ ক্রিয়া: বিশেষ্য যদি ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই ক্রিয়াকে সমধাতুজ ক্রিয়া বলে। যেমন: সে জব্বর ঘুম ঘুমিয়েছে।
৮. নামক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক শব্দের পরে আ-প্রত্যয়যোগে গঠিত ক্রিয়াপদকে নামক্রিয়া বলে। যেমন: বেতা (বেত+আ), বাঁকা, ছাপা, ফলা ইত্যাদি।
৯. প্রযোজক ক্রিয়া: কর্তার কাজ কর্মকে দিয়ে শেষ হলে সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন: মা শিশুকে চাঁদ দেখান। শিক্ষক ছাত্রকে পড়ান। দেখা— দেখান/দেখানো, পড়া—পড়ান/পড়ানো, জানা— জানান/জানানো, শেখা—শেখান /শেখানো।
১০. অনুক্তক্রিয়া বা সহযোগী ক্রিয়া বা সাহায্যকারী বা সংযোক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া বাক্যে না থেকে বা উহ্য থেকে শব্দের সংযোগ স্থাপন করে তাকে সহযোগী বা সংযোক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (হয়) ছাত্র। ফুলটি (হয়) সুন্দর।
১১. মিশ্রক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক শব্দের সঙ্গে কর, হ, দে, পা, যা, কাট, গা, ছাড়, ধর, মার ইত্যাদি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদকে মিশ্রক্রিয়া বলে। যেমন: শয়ন করা, গ্রহণ করা, প্রদান করা, গমন করা, শ্রবণ করা, দর্শন করা, জিজ্ঞাসা করা, নির্বাসিত করা, দূরীভূত কর, আগমন করা, আহার/ভক্ষণ করা, লাফ/লম্ফ দেয়া, নিদ্রা যাওয়া, ঝমঝম করা ইত্যাদি।
১২. অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্তা থাকে না বা কর্তা উহ্য থাকে তাকে অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: এখানে আসো। বইটি পড়। রোদে দৌড়াদৌড়ি করবে না। শিক্ষককে সম্মান করবে।
১৩. ভাববাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না বা উহ্য থাকে তাকে ভাববাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: রোম একদিনে তৈরি হয় নাই। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। বাচ্যপ্রধান বাক্যের ক্রিয়াকে ভাববাচক ক্রিয়া বলে।
সমাপিকা ক্রিয়ার অসমাপিকা ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য
১. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের গঠন ও অর্থ সম্পূর্ণ হয়। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের গঠন ও অর্থ সম্পূর্ণ হয় না।
২. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যে বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যে বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে।
৩. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সঙ্গে সংগতি থাকে। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সঙ্গে সংগতি থাকে না।
৪. সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে বিভক্তি বসে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে এ/ও/তে/ল বিভক্তি বসে।
৫. সমাপিকা ক্রিয়ার কোন সহায়ক ক্রিয়া থাকে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার সহায়ক ক্রিয়া থাকে।
৬. সমাপিকা ক্রিয়ার নমুনা: সে সকালে নাস্তা খায়। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার নমুনা: সে সকালে নাস্তা খেয়ে স্কুলে যায়।
ক্রিয়া বিশেষণ /Adverb
ক্রিয়ার দোষ, গুণ প্রকাশকারীই ক্রিয়া বিশেষণ। অথবা ক্রিয়ার বিশেষণকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা ক্রিয়াকে যে শব্দ বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা যে বিশেষণ ক্রিয়ার অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন: অবস্থা=ভাব—আস্তে আস্তে চল, কাল—আগে/পরে গেলে সুফল পাবে। ক্রিয়া বিশেষণ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
ক) পদবিন্যাসগত প্রকরণ
১. একক ক্রিয়া বিশেষণ: একটিমাত্র ক্রিয়া বিশেষণ দিয়ে ক্রিয়াকে বিশেষিত করা যায়। যেমন: আস্তে, জোরে, ধীরে, তাড়াতাড়ি, শক্ত/ দৃঢ়ভাবে, শান্ত ভাবে ইত্যাদি।
২. দ্বিত্ব ক্রিয়া বিশেষণ: দুটি ক্রিয়া বিশেষণ দিয়ে ক্রিয়াকে বিশেষিত করা যায়। যেমন: আস্তে অস্তে, জোরে জোরে, ধীরে ধীরে, চুপি চুপি, চুপে চুপে, ভয়ে ভয়ে, বিন্দু বিন্দু, কেঁদে কেঁদে, বারবার, গুটিগুটি, চুপিচুপি।
৩. বিভক্তিযুক্ত বা বিভক্তিহীন: বিভক্তিযুক্ত: ভাল করে, মন দিয়ে, হনহনিয়ে, চেঁচিয়ে ইত্যাদি। বিভক্তিহীন : নিশ্চয়, অবশ্যই, ভাল, শীঘ্র, ঠিক, গপাগপ ইত্যাদি।
খ) অর্থ ও অন্বয়গত প্রকরণ
১. ধরনজ্ঞাপক ক্রিয়া বিশেষণ: টিপটিপ, হনহন, শনশন, পনপন ইত্যাদি।
২. কালজ্ঞাপক ক্রিয়া বিশেষণ: এখনি, সপ্তাহ, আজকাল, পরশু, আগামিকাল, পরদিন, আগামিদিন, ততক্ষণে, ঠিকসময়ে, ভোর না হতেই, অনেকক্ষণ ইত্যাদি।
৩. স্থানজ্ঞাপন ক্রিয়া বিশেষণ: এখানে, সেখানে, ওখানে, সামনে, পেছনে, কোথায়, যেথায়, এধারে, ওধারে, ওপরে, নিচে।
ক্রিয়া বিশেষণের গঠন
ক্রিয়া বিশেষণ কয়েকভাবে গঠন করা যেতে পারে। যেমন :
১. বিভক্তিহীন : নিশ্চয়, অবশ্যই, ভাল, শীঘ্র, ঠিক, গপাগপ+ক্রিয়া।
২. বিভক্তিযুক্ত : ভাল করে, মন দিয়ে, হনহনিয়ে, চেঁচিয়ে +ক্রিয়া।
৩. দ্বৈতশব্দ : বিন্দু বিন্দু, বারবার, কেঁদে কেঁদে, গুটিগুটি, চুপিচুপি +ক্রিয়া
৪. তুলনামূলক শব্দ : শব্দ+মতো, মতন, মাত্র বসে ক্রিয়া বিশেষণ প্রকাশ করে। চাওয়ামাত্র, ঠিকমতো একই শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে যেমন: মন্দটি, মন্দ বাক্য ইত্যাদি।
অনুসর্গ /কর্মপ্রবচনীয় শব্দ /Preposition
যেসব শব্দ বাক্যে স্বাধীনরূপে বসে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে, শব্দ ও শব্দ বা বাক্য ও বাক্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বাক্যে বিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয় তাদের অনুসর্গ বলে। অনুসর্গগুলোর কাজ ইংরেজি ভাষার Preposition-এর মতো। তবে প্রিপজিশনগুলো শব্দের আগে বসে আর অনুসর্গগুলো শব্দের পরে বসে তাই এর নাম অনুসর্গ। কারক ছাড়াও অনুসর্গের প্রয়োগ আছে। বিভক্তি আর অনুসর্গের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিভক্তি হলো অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি আর অনুসর্গ হলো অর্থপূর্ণ শব্দ। অনুসর্গগুলোর যে চেহারা তা সাধারণত আর কোন পরিবর্তন লাভ করে না। এজন্য অনুসর্গগুলো যোজকের মধ্যে ফেলা হয়। বাংলায় প্রায় প্রতিটি কারকেরই বিভক্তিসিদ্ধ ও অনুসর্গসিদ্ধরূপ লক্ষ্য করা যায়। গঠন অনুসারে এবং উৎস অনুসারে অনুসর্গ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
গঠন অনুসারে অনুসর্গ দুই প্রকার। যেমন :
১. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ: সাধারণ নাম বা প্রাতিপদিক অনুসর্গ এ-বিভক্তিযুক্ত হয়। যেমন : আগে, পরে, ওপরে, কাছে, কারণে, জন্যে, মধ্যে, মাঝে, মাঝারে, সনে, সঙ্গে, তরে, নামে, পানে, পক্ষে, দিকে, পাশে, সামনে, সম্মুখে, করে, হতে, থেকে, চেয়ে, দিয়ে, লেগে, বদলে, বাদে।
২. বিভক্তিহীন অনুসর্গ: অধিক, অবধি, জন্য, পর, প্রতি, বই, বশত, বিনা, বিনে, বিনি, বিহনে, দ্বারা, কর্তৃক, ছাড়া, ব্যতীত, ভিন্ন, মতো, সহ, সহিত, হেতু, দারুণ, বনাম, বরাবর, বাবদ ইত্যাদি।
উৎস অনুসারে অনুসর্গ চার প্রকার। যেমন :
ব্যাকরণের শব্দশ্রেণি অনুযায়ী বাংলা ভাষায় অনুসর্গগুলো বিশেষ্যজাত ও ক্রিয়াজাত-দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথম শ্রেণির অনুসর্গগুলো বিশেষ্য, যোজক ইত্যাদি শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। যেমন: নিকট, সঙ্গে, আগে ইত্যাদি আর ক্রিয়াজাত অনুসর্গগুলো জন্মেছে ক্রিয়াপদ থেকে। যেমন: বলে, ধরে, চেয়ে। নাম অনুসর্গগুলো আবার উৎস অনুযায়ী সংস্কৃত, তদ্ভব ও দেশি, বিদেশি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) সংস্কৃত অনুসর্গ
অপেক্ষা : এ জীবন অপেক্ষা প্রিয় আর কিছু নাই।
অভিমুখে : নদী চলিয়াছে সমুদ্র অভিমুখে।
উপরে : সবার উপরে মানুষ সত্য।
কর্তৃক : আজ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই মঞ্চের, উদ্বোধন হবে।
কারণে : পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও।
জন্য : হিমগিরি ফেলে নিচে নেমে এলে কিসের জন্য?
দিকে : নদী কি কখনো উৎসের দিকে যায়?
দ্বারা : পরিশ্রমের দ্বারা, সততার দ্বারা নিজেকে যথার্থ মানুষ হিসাবে গড়ে তোল।
নিকট : নগরের নিকটেই অরণ্য।
ন্যায় : লটারিতে পুরস্কার লাভের স্বপ্ন মরীচিকার ন্যায় মিলাইতে দেরি হইল না।
পশ্চাতে : অন্ধের মতো সুখের পশ্চাতে ছুটিয়ো না।
প্রতি : অধমের প্রতি একটু কৃপা করবেন, এই প্রার্থনা।
মধ্যে : কাজের মধ্যে দুই, খাই আর শুই।
মাঝে : ‘আমার কাজের মাঝে মাঝে, কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
সঙ্গে : অকারণে মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করবে না।
সম্মুখে : বিপদের সম্মুখে নির্ভয় থেকো।
সহিত : রামের সহিত সীতাও বনে যাইতে চাহিলেন।
সাথে : করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পঞ্জা।
সামনে : গুরুজনের সামনে অসভ্যতা করতে নাই।
খ) দেশি (তদ্ভব) অনুসর্গ
আগে : মরিব তোমার আগে।
আশে : কে জানে কিসের আশে এসেছি হেথায়।
কাছে : বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও।
ছাড়া : এ ছাড়া আর উপায় কী বল।
তরে : কীসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের লাগি দীর্ঘশ্বাস।
পানে : মুখ পানে চেয়ে দেখি, ভয় হয় মনে।
পাশে : আয়, আমার পাশে এসে বোস।
বই : আমার একটি বই দুটি মেয়ে নয়, একে আমি এমএ পর্যন্ত পড়াব।
বিনা : চাষির পরিশ্রম বিনা কোন ফসলই ফলে না।
ভিতর : কার মনের ভিতর কী আছে কে জানে?
গ) বিদেশি অনুসর্গ
দরুন : বন্যার দরুন এক বছর ফসল ভাল হয়নি।
বদলে : কিছু মানুষ আছে, যারা কাঞ্চনের বদলে কাচ পছন্দ করে।
বনাম : আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের খেলার আকর্ষণই আলাদা।
বাবদ : ঘড়ির দাম বাবদ কত দিতে হবে আপনাকে?
বরাবর : এই পথ বরাবর মিছিল এগোবে।
ঘ) ক্রিয়াজাত অনুসর্গ
করে, করিয়া : যদি বাস না পাও, ট্যাকসি করে চলে এসো। আগে লোকে জাহাজে করিয়া বিলাত যাইত।
চেয়ে, চাইতে : আমি মৃত্যু চেয়ে বড়, এই কথা বলে, যাব আমি চলে।
থেকে : ওর কথা থেকে কিছুই বোঝা গেল না।
দিয়ে, দিয়া : পথ দিয়ে কে যায় গো চলে, ডাক দিয়ে সে যায়।
ধরে, ধরিয়া : টানা দুমাস ধরে গ্রীষ্মের বন্ধ মজা মন্দ নয়।
লাগিয়া, লাগি : প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে। সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু।
হতে, হইতে : আকাশ হতে খসল তারা। কলিকাতা হইতে দিল্লি কত দূর?
সকলপ্রকার অনুসর্গের প্রয়োগ
১. বিনা/বিনে : কর্তৃ কারকের সঙ্গে-তুমি বিনা/বিনে আমার কে আছে?
বিনি : করণ কারকের সঙ্গে-বিনি সুতায় গাঁথা মালা।
বিহনে : উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
২. সহ : সহগামিতা অর্থে-তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন।
সহিত : সমসূত্রে অর্থে-শত্রুর সহিত সন্ধি চাই না।
সনে : বিরুদ্ধগামিতা অর্থে-দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।
সঙ্গে : তুলনায়-মায়ের সঙ্গে এ মেয়ের তুলনা হয় না।
৩. অবধি : পর্যন্ত অর্থে-সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
৪. পরে : স্বল্প বিরতি অর্থে-এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না।
পর : দীর্ঘ বিরতি অর্থে-শরতের পর আসে বসন্ত।
৫. পানে : প্রতি, দিকে অর্থে-ঐ তো তিনি ঘর পানে ছুটেছেন।
৬. মত : ন্যায় অর্থে-বেকুবের মত কাজ করো না।
তরে : মত অর্থে-এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম।
৭. পক্ষে : সক্ষমতা অর্থে-রাজার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।
সহায় অর্থে-আসামির পক্ষে উকিল কে?
৮. মাঝে : মধ্যে অর্থে-সীমার মাঝে অসীম তুমি।
একদেশিক অর্থে-এ দেশের মাঝে এক দিন সব ছিল।
ক্ষণকাল অর্থে-নিমেষ মাঝেই সব শেষ।
মাঝারে : ব্যাপ্তি অর্থে-আছ তুমি প্রভু, জগৎ মাঝারে।
৯. কাছে : নিকটে অর্থে-আমার কাছে আর কে আসবে?
কর্ম কারকে ‘কে’ বোঝাতে-রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে।
১০. প্রতি : প্রত্যেক অর্থে-মণ প্রতি পাঁচ টাকা লাভ দেবো।
দিকে বা ওপর অর্থে-নিদারুণ তিনি অতি, নাহি দয়া তব প্রতি।
১১. হেতু : নিমিত্ত অর্থে-কী হেতু এসেছ তুমি, কহ বিস্তারিয়া।
জন্যে : নিমিত্ত অর্থে-এ ধনসম্পদ তোমার জন্যে।
সহকারে : সঙ্গে অর্থে-আগ্রহ সহকারে কহিলেন।
বশত : কারণে অর্থে-দুর্ভাগ্য বশত সভায় উপস্থিত হতে পারিনি।
যোজক / Conjunction/Connective
যোজক দুই বা অধিক শব্দ অথবা বাক্যকে সংযোজক, বিয়োজক সংকোচন ঘটায়। যেমন: ও, এবং, আর, তাই, কিন্তু, অধিকন্তু, সুতরাং, কিংবা, অথবা নতুবা, নয়তো, অথচ, বরং, কারণ, কারণে, মাত্রই, শীঘ্রই, উভয়ই, ছাড়া, যদি, যদিও, যে যেন, যখন, যহেতু, যথেষ্ট, যাতে, যতক্ষণ, পূর্বে, জন্য, শর্তেও, পরিবর্তে, অন্যথায়, আলবত, নিশ্চয়ই, তে, তো, পাছে, দিয়ে, দ্বারা, কর্তৃক, হে, ওগো, ওরে, রে, গো, লো, ওই, ও, মতো, মতন, ন্যায়, পারা, কি/কী, কেন/কোন, বুঝি, যত—তত, এতই—যে যেমন—তেমন, যখন—তখন, যথা—তথা, যেরূপ—সেরূপ, যেই—অমনি, না—আরও, যিনি—তিনি, যে—সে, যা—তা, যা—তাই ইত্যাদি। এসব যোজককে ‘সাধারণ যোজক, বৈকল্পিব যোজন, বিরোধমূলক যোজন, কারণবাচক যোজন, সাপেক্ষ যোজন’ ইত্যাদির মধ্যে ফেলে বাক্য তৈরি করা যায়। শব্দ বা বাক্যে যোজক ব্যবহৃত হলে এদের আগে বা পরে যতি ব্যবহৃত হয় না। যোজক কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. সাধারণ যোজক : সাধারণ যোজক দুটি শব্দ বা বাক্যকে সংযুক্ত করে। শব্দ ও শব্দকে যুক্ত করতে ‘ও’ ব্যবহার করা হয়। বাক্য ও বাক্যকে যুক্ত করতে ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়। শব্দ কিংবা বাক্য দুই ধরনেই ‘আর’ ব্যবহার করা যায়। যেমন:
শব্দ যোজক: রহিম ও করিম দুই ভাই। রহিম আর করিম পরস্পর পরস্পরের সাথী। একজীবনে সুখ ও দুখ দুই ঘুরে ঘুরে আসে। আমাদের কথা আর ওদের কথার সাথে মিল রয়েছে।
বাক্য যোজক: সাকিব স্কুলে যায় এবং মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। তুমি সেখানে যাবা এবং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবা। দুটি বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় আর দুটি শব্দের মিলনে সমাস হয়।
২. বৈকল্পিক যোজক : বৈকল্পিক যোজক একাধিক শব্দ বাক্য বা বাক্যের মধ্যে বিকল্প নির্দেশ করে। যেমন: নীল বা কালো যেকোনো একটি হলেই লেখার কাজ চলবে। তোমাকে সারাদিন খুঁজলাম অথচ তোমাকে পেলাম না। হয় তুমি না হয় তোমার ভাই কাজটি করে দেবে।
৩. বিরোধ যোজক : বিরোধমূলক যোজক দুটি বাক্যের বক্তব্যের মধ্যে সংশোধন বা বিরোধভাব প্রকাশ করে। যেমন: তোমাকে ডাকলাম কিন্তু সারা পেলাম না। এত পানি ঢাললাম তবু গায়ের গরম গেলো না।
৪. কারণ যোজক : কারণ যোজক দুটি বাক্যের মধ্যে সংযোক ঘটায় যার একটি অন্যটির কারণ প্রকাশ করে। যেমন: গতকাল সামিহা স্কুলে যেতে পারে নাই কারণ সে অসুস্থ ছিল। সামিহা অসুস্থ থাকার কারণে গতকাল স্কুলে যেতে পারেনি। যেহেতু সে অসুস্থ তাই সে স্কুলে যেতে পারে নাই। সময় নাই তাই সে সম্পূর্ণ উত্তর লিখতে পারে নাই। তুমি কথারাখো নাই অতএব তোমাকে নেয়া হবে না। তাড়াতাড়ি চলো নইলে গাড়ি ধরতে পারবা না। কর্মক্ষেত্র ডিজিটাল করো নতুবা দেশ ডিজিটাল হবে না।
৫. সাপেক্ষ যোজক/শর্ত যোজক : যেসব যোজক একে অন্যের পরিপূরক তাদের সাপেক্ষ যোজক বলে। সাধারণত এরা দ্বিত্বযোজক হয়। যেমন: ‘যতি-তবে, যত-তত, যথা-তথা, যখন-তখন, যেমন-তেমন, যেরূপ-সেরূপ’ দুটি বাক্যকে সংযুক্ত করে। যেমন: যদি তুমি আসো তবে আমি কাজটি করব। যত গর্জে তত বর্ষে না।
৬. সম্বোধন যোজক : যেসব যোজক বাক্যে প্রথমে বসে কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে তাদের সম্বোধনসূচক যোজক বলে। যেমন: হে, ওগো, ওরে, রে, গো, লো, ওই, ও ইত্যাদি।
৭. সাদৃশ্য যোজক : যেসব যোজক বাক্যে বসে বস্তুতে বস্তুতে বা প্রাণীতে প্রাণীতে তুলনা করে তাদের সাদৃশ্যসূচক যোজক বলে। অন্যভাবে বলা যায় তুলনামূলক যোজককে সাদৃশ্য যোজক বলে। যেমন: মতো, মতন, ন্যায়, পারা ইত্যাদি।
৮. প্রশ্নর সংশয় যোজক : যেসব যোজক প্রশ্ন বা সংশয় প্রকাশ করে তাদের প্রশ্ন ও সংশয় যোজক বলে। যেমন: কি/কী, কেন /কেনো, নাকি, নাকো, বুঝি ইত্যাদি।
৯. সম্মতি ও অসম্মতি যোজক : যেসব যোজক সম্মতির অসম্মতি প্রকাশ করে তাদের সম্মতি ও অসম্মতিসূচক যোজক বলে। যেমন: হ্যাঁ, আচ্ছা, হু, বটে, আজ্ঞা। না, নয়, নাই, নহে, উঁহু, মোটেও না ইত্যাদি এগুলো অসম্মতিসূচক অব্যয়।
১০. অনুকার যোজক :যেসব যোজক বাক্যে বসে ধ্বনি সৃষ্টি করে তাদের অনুকার যোজক বলে। যেমন: কড়কড়, মরমর, ঝমঝম, শনশন, ঝুমঝুম, গুড়–গুড়, গরগর, কা কা, কুহুকুহু, কটকট, টুংটাং, ঝপাঝপ, টপাটপ, ঝাঁঝাঁ, খাঁখাঁ, কচকচ, কটকট, টলমল, ঝলমল, চকচক, ছমছম, টনটন, খটখট ইত্যাদি।
১১. দ্বিত্ব যোজক : যেসব যোজক দুটি বাক্যকে যুক্ত করতে বসে তাদের দ্বিত্ব যোজক বলে। যেমন: যত— তত, এতই—যে, যেমন— তেমন, যখন— তখন, যথা—তথা, যেরূপ— সেরূপ, যেই— অমনি, না—আরও, শুধু-আরও/ও ইত্যাদি।
আবেগশব্দ/ Interjection
যেসব শব্দ বাক্যে বসে বাক্যের ভাব বৃদ্ধি করে তাদের আবেগশব্দ বলে। যেমন: মরি মরি, উঃ /উহ্ /উঁহু, আঃ, ছি ছি, হ্যাঁ, না, কী বিপদ, হায়রে লজ্জা, আলবত, নিশ্চয়ই, বেশ তো, তো, পাছে, কী মজা, হায়, হু, বেশ, না, শাবাস, বাঃ, কী জ্বালা, আরে, অ্যাঁ, আহা, হে বন্ধু, ওরে, মাগো মা, যাক গে ইত্যাদি। এসব শব্দের পরে কমা বসে না। এসব শব
শব্দগঠনের উপায় (উপসর্গ)
বিভিন্ন উপায়ে শব্দ গঠন করা যায়। যেমন : কার যোগে-ম+আ=মা, ফলা যোগে-রত্ন/বিশ্ব/পদ্ম/পদ্য/ক্রয় /ধর্ম/ক্লান্ত, ব্যঞ্জন যোগে-পক্ক ইত্যাদি। আবার গঠনের দিক দিয়ে শব্দ দুই প্রকার। যেমন:
১. মৌলিকশব্দ: যেসব শব্দ সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে আলাদা করা যায় না তাদের মৌলিকশব্দ বলে। যেমন: বই, কলম, হাত, পা, লাল ইত্যাদি।
২. সাধিতশব্দ: যেসব শব্দ সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে আলাদা করা যায় তাদের সাধিত শব্দ বলে। যেমন: গাছে (গাছ+এ), বোকামি (বোকা+আমি), ডুবুরি (ডুব+ উরি), বিদ্যালয় (বিদ্যা+আলয়), রবীন্দ্র (রবি+ইন্দ্র)। ছেলে ও মেয়ে (ছেলে-মেয়ে), কুসুমের মতো কোমল (কুসুমকোমল), মনরূপ মাঝি (মনমাঝি), মধুর>মাধুর্য, দীন>দৈন্য, ছাইদানি, হেডমৌলবি ইত্যাদি।
উপসর্গ
যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করতে সাহায্য করে তাদের উপসর্গ বলে। অথবা উপসর্গ হলো অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যারা শব্দের আগে বসে নতুন শব্দ গঠন করে। যেমন: আ—আগাছা, পরা—পরাজয়। উপসর্গ শব্দের আগে বসে শব্দটিকে (বিশেষ্য বা ক্রিয়া) হাবোধক বা নাবোধক দুটি অর্থেও প্রকাশ পেতে পারে। শব্দের আগে ‘আ’ বসলে হবে উপসর্গ আর ‘আ’ শেষে বসলে হবে প্রত্যয়। যেমন: আগাছা (আ+গাছ+আ), আকাঁড়া, আধোয়া, আকাঠা। তবে সংস্কৃত শব্দের শেষে ‘আ’ যোগ হয় না। যেমন: আকণ্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র, আরক্ত, আভাস, আদান, আগমন ইত্যাদি। আবার অ/আ/অপ উপসর্গ আছে যারা নাবোধক কিন্তু শব্দের আগে বসে নাবোধ প্রকাশ করে না। যেমন: অপর্যাপ্ত, অপ্রচুর, অমূল্য, অপরূপ, আকণ্ঠ ইত্যাদি।
বলা হয় উপসর্গের অর্থবাচকতা অর্থাৎ নিজস্ব কোন অর্থ নাই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা অর্থাৎ নতুন শব্দ গঠন করার ক্ষমতা আছে। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নাই তবে কয়েকটি উপসর্গের অর্থ আছে। যেমন: অতি, অনু, ইতি, কু, সু, প্রতি, সম, রাম, কম, দর, খোশ, না, ফুল, হাফ, সাব, হেড ইত্যাদি। আবার ‘আ, নি, বি, সু’ সংস্কৃত ও বাংলা উভয় উপসর্গেই আছে।
ব্যাকরণবিদগণ উপসর্গ সম্পর্কে বলেন
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন: সংস্কৃতে কতকগুলি অব্যয় আছে যেগুলি ধাতুর পূর্বে যুক্ত হইয়া ধাতুর অর্থে পরিবর্তন ঘটিয়ে ধাতুর নতুন অর্থের সৃষ্টি করে। সংস্কৃত ব্যাকরণে ধাতুর পূর্বে প্রযুক্ত এইরূপ অব্যয়কে বলা হইয়াছে উপসর্গ।
ড.রামেশ্বর : শব্দ বা ধাতুর আদিতে যা যোগ হয় তাকে বলে উপসর্গ।
অশোক মুখোপাধ্যায়: কিছু অব্যয় আছে যারা ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে তাদের অর্থ বদল করে দেয়। এদেরই বলা হয় উপসর্গ।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক: যে সকল অব্যয় শব্দ কৃদন্ত বা নামপদের পূর্বে বসিয়া শব্দগুলির অর্থের সংকোচন সম্প্রসারণ বা অন্য কোন পরিবর্তন সাধন করে, ঐ সকল অব্যয় শব্দকে বাংলা ভাষায় উপসর্গ বলে।
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য বা কাজ
১. কিছু বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যারা ধাতু বা নামশব্দের আগে বসে
২. যাদের নিজস্ব কোন অর্থ নাই
৩. যারা অর্থের পরিবর্তন করে
৪. যারা অর্থের সম্প্রসারণ ও সংকোচন করে
৫. যারা নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে বা অর্থের পূর্ণতা দেয়
উপসর্গের প্রকরণ
সংস্কৃত উপসর্গ (২০টি)
সংস্কৃত উপসর্গ +সংস্কৃত শব্দ = সংস্কৃত শব্দ। যেমন: অতি, অনু, অধি, অপ, অপি, অব, অভি, আ, উৎ, উপ, নি, নির, দূর, পরা, পরি, প্র, প্রতি, বি, সু, সম।
২০টি সংস্কৃত উপসর্গযোগে নতুন সংস্কৃত শব্দ গঠন যায়। যেমন:
উপসর্গ, অর্থ ও গঠিত নতুন শব্দ
১. অতি
বেশি, অস্বাভাবিক, পার হওয়া : অতিবৃষ্টি, অতিচালাক, অতিভক্তি, অতিক্রম
২. অনু
পেছনে, তুল্য, বারবার, সাথে : অনুরাগ, অনুবাদ, অনুসরণ, অনুশীলন
৩. অধি
আধিপত্য, উপরি : অধিকার, অধিবাসী, অধিষ্ঠান, অধিকার, অধিবাস
৪. অপ
বিপরীত, খারাপ, স্থানান্তর, খুব : অপমান, অপচয়, অপহরণ, অপরূপ
৫. অপি
যথা, বেশি : অপিনিহিতি, অপিচ
৬. অব
হীনতা, সাফল্য, নামা, স্বল্পতা,
সম্যকভাবে : অবজ্ঞা, অবদান, অবতরণ
৭. অভি
সম্যক, গমন, দিক : অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত, অভিযান
৮. আ
পর্যন্ত , সামান্য, বিপরীত : আমরণ, আসুমদ্র, আভাস, আদান, আগমন
৯. উৎ
ঊর্ধ্বমুখিতা, প্রস্তুতি, অপকর্ষ : উন্নতি, উত্তোলন, উৎফুল্ল, উৎপাদন, উচ্চারণ
১০. উপ
সামীপ্য, সদৃশ, ক্ষুদ্র, বিশেষ : উপকূল, উপবন, উপগ্রহ, উপভোগ, উপহার
১১. দুর/দু/দুঃ
মন্দ, কষ্টসাধ : দুঃসাহস, দুঃশাসন, দুঃসপ্ন, দুঃসাধ্য, দুঃসংবাদ,
দুর-এর জন্য র বা রেফ হয় দুর্গম, দুর্নাম, দুর্লভ
আর দূর অর্থ দূরে, এটি উপসর্গ নয়
১২. নি /নিঃ
নিষেধ, নিশ্চয়, আতিশায্য, অভাব : নিবৃত্তি, নিবারণ, নিখুঁত, নিকৃষ্ট, নিঃশ্বাস, নিঃসন্তান, নিঃস্বার্থ
১৩. নির
অভাব, নিশ্চয়, বাহির বা রেফ হবে : নিরক্ষর, নির্ণয়, নির্ভর, নির্মাণ
১৪. পরা
আতিশয্য, বিপরীত : পরায়ণ, পরাশক্ত, পরাজয়, পরাধীন, পরাহত, পরাভব
১৫. পরি
বিশেষ, শেষ, সম্যক, চারদিক : পরিপূর্ণ, পরিধান, পরিশ্রম, পরিকল্পনা
১৬. প্র
প্রকৃষ্ট, খ্যাতি, আধিক্য, গতি : প্রজ্ঞা, প্রবল, প্রসার, প্রচার, প্রবেশ, প্রস্থান
১৭. প্রতি
সদৃশ, বিরোধ, বারবার : প্রতিধ্বনি, প্রতিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বি, প্রতিদিন, প্রতিদান
১৮. বি
বিশেষ, অভাব, গতি, অপ্রকৃতস্থ : বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিফল
১৯. সু
ভাল, সহজ, আতিশয্য : সুকণ্ঠ, সুনীল, সুগম, সুজন, সুলভ, সুনজর
২০. সম
সম্মুখ, সামনে, খবর, সমান : সম্পূর্ণ, সম্মুখ, সংবাদ, সমাদর, সম্মান
দেশি উপসর্গ (২১টি)
দেশি উপসর্গ+দেশি শব্দ = দেশি শব্দ। যেমন: অ, অজ, অঘা, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন, কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা। ২১টি দেশি উপসর্গযোগে নতুন দেশিশব্দ গঠন যায়। যেমন:
উপসর্গ, অর্থ ও গঠিত নতুন শব্দ
১. অ
মন্দ, না, পরিমাণ : অকেজো, অচেনা, অচিন, অজানা, অঢেল, অফুরন্ত
২. অঘা
বোকা : অঘারাম, অঘাচণ্ডী, অঘাগুশাই
৩. অজ
মন্দ : অজগাঁ, অজপাড়াগাঁ, অজপুকুর
৪. অনা
মন্দ : অনাবৃষ্টি, অনাচার, অনামুখো
৫. আ
অভাব, বাজে, অশুভ : আধয়া, আলুনি, আগাছা, আকাল, আকথা
৬. আড়
বাঁকা, অর্ধেক, প্রায় : আড়চোখে, আড়ভাঙা, আড়কোল
৭. আন
না, কাঁচা, চঞ্চল : আনাড়ি, আনকোরা, আনচান, আনমনা
৮. আব
অস্পষ্ট : আবছায়া, আবডাল
৯. ইতি
আগে, পুরানো : ইতঃপূর্বে, ইতোমধ্যে, ইতিকথা, ইতিহাস
১০. উন কম : উনপাঁজুরে, উনোভাত, উনোন, উনচল্লিশ, উনবিংশ
১১. কদ
খারাপ, ছোট : কদাকার, কদবেল
১২. কু
নিন্দনীয়, মন্দ : কুকাজ, কুকথা, কুনজর, কুচরিত্র
১৩. নি
নাই : নিখুঁত, নিখোঁজ, নিলাজ, নির্বোধ, নিরেট
১৪. পাতি
ছোট, ক্ষুদ্র : পাতিহাঁস, পাতিলেবু, পাতিনেতা
১৫. বি
না, নিন্দা, ভিন্ন : বিকল, বিস্বাদ, বিফল
১৬. ভর
পরিপূর্ণ : ভরপেট, ভরদুপুর, ভরপুর, ভররোদ, ভররাত
১৭.রাম
বড়, ছোট, উৎস: রামছাগল, রামধনু, রামবাগুন, রামকলা, রামরাজা
১৮. স
সাথে, উপযুক্ত : সরব, সজোর, সকাল, সক্ষম, সঠিক, সবল
১৯. সা
অবস্থা, উৎকৃষ্ট : সাবালক, সাজিয়া, সাজোয়ান
২০. সু
ভাল, সৎ : সুকাজ, সুনজর, সুচরিত্র, সুখবর, সুদিন, সুনাম
২১. হা
অভাব : হাভাতে, হাহুতাশ, হাপিত্যেশ
বিদেশি উপসর্গ (২১টি)
বিদেশি উপসর্গ +বিদেশি শব্দ =বিদেশি শব্দ। যেমন: ফারসি-কম, কার, খোশ, দর, না, নিম, ফি, ব, বে, বদ, বর। আরবি-আম, খাস, গর, বাজে, লা। ইংরেজি-ফুল, সাব, হাফ, হেড। হিন্দি-হর।
২১টি বিদেশি উপসর্গযোগে নতুন বিদেশি শব্দ গঠন যায়। যেমন:
উপসর্গ, অর্থ ও গঠিত নতুন শব্দ
আরবি
১. আম
সাধারণ : আমজনতা, আমদরবার, আমমোক্তার, আমকথা
২. খয়ের
তোষামদ : খয়ের খাঁ
৩. খাস
বিশেষ : খাসমেহমান, খাসমহল, খাসমসজিদ, খাসকথা
৪. গর
অভাব : গরমিল, গরহাজির, গররাজি
৫. বাজে
খারাপ : বাজেকাজ, বাজেকথা, বাজেখরচ
৬. লা
না : লাজওয়াব, লাপাত্তা, লাশরিক
ফারসি
৭. কম
স্বল্প : কমজোর, কমপোখত
৮. কার
কাজ : কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার
৯. দর
মধ্যস্থ অধীন : দরপত্তনি, দরখাস্ত , দরদাম
১০. না
না : নারাজ, নাচার, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক
১১. খোশ
ভাল : খোশমেজাজ, খোশখবর, খোশগল্প, খোশআমদদ
১২. নিম
অল্প : নিমরাজি, নিমমোল্লা, নিমকথা
১৩. ফি
প্রতি : ফিরোজ, ফিহপ্তা, ফিদিন, ফিমাস, ফিবছর, ফিসন, ফিসাল
১৪. ব
সাথে : বনাম, বকলম, বমাল
১৫. বর
বাইরে, মাঝে : বরখাস্ত , বরদাস্ত , বরখেলাপ, বরবাদ
১৬. বে
না : বেআদব, বেআক্কল, বেনামি, বেকারম, বেহায়া, বেতার
১৭. বদ
খারাপ/মন্দ : বদমেজাজ, বদরাগি, বজ্জাদ, বদহজম, বদমাশ
ইংরেজি
১৮. ফুল
সম্পূর্ণ : ফুলহাতা, ফুলশার্ট, ফুলপ্যান্ট, ফুলবাবু, ফুলমোল্লা
১৯. হাফ
অর্ধেক : হাফহাতা, হাফশার্ট, হাফপ্যান্ট, হাফস্কুল, হাফটিকিট
২০. সাব
অধীন : সাবঅফিস, সাবজজ, সাবইন্সপেক্টর
২১. হেড
প্রধান : হেডঅফিস, হেডমাস্টার, হেডমৌলবি
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য অথবা উপসর্গের অর্থবাচকতার অর্থদ্যোতকতা
হার শব্দের আগে যথাক্রমে আ, উ, উপ, প্র, পরি, বি, সম (সং) ইত্যাদি উপসর্গ যোগ করে ভিন্নভিন্ন অর্থপূর্ণ শব্দ গঠন করা যায়। নমুনা সরূপ দেখানো যায়-আহার (খাওয়া), উদ্ধার (রক্ষা), উপহার (গিফ্ট), প্রহার (মারা), পরিহার (পরিত্যাগ), বিহার (ভ্রমণ), সংহার (হত্যা) ইত্যাদি। তাহলে উপরের নমুনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নাই কিন্তু তাদের ক্রিয়া বা নামশব্দের আগে বসে নতুনশব্দ গঠন শব্দের অর্থ পরিবর্তন, সম্প্রসারণ ও সংকোচন করা এবং অর্থের পূর্ণতা দান করার ক্ষমতা আছে। এইজন্য বলা হয়, উপসর্গের অর্থবাচকতা অর্থাৎ নিজস্ব কোন অর্থ নাই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা বা নতুনশব্দ গঠন করার ক্ষমতা আছে।
শব্দগঠনের উপায় (প্রত্যয়)
প্রত্যয় শব্দগঠন করে শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রত্যয় হলো কিছু অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যারা প্রকৃতি অর্থাৎ নাম ও ধাতুর পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে।
প্রত্যয়ের উপাদান
১. প্রকৃতি : নাম ও ক্রিয়া শব্দের মূলকে প্রকৃতি বলে। যেমন: চলা, ঢাকা।
২. নামপ্রকৃতি বা প্রাতিপদিক : নামের মূল অথবা বিভক্তিহীন নামকে নামপ্রকৃতি বা প্রাতিপদিক পদ বলে। যেমন: ঢাকা।
৩. ক্রিয়াপ্রকৃতি বা ধাতুপ্রকৃতি : ক্রিয়া বা ধাতুর মূলকে ক্রিয়া বা ধাতু প্রকৃতি বলে। যেমন: চল।
৪. নামপ্রত্যয় বা তদ্ধিত প্রত্যয় : নাম প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় বসে তাকে নামপ্রত্যয় বলে। যেমন: আই।
৫. ক্রিয়াপ্রত্যয় বা কৃৎপ্রত্যয় : ক্রিয়া প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় বসে তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন: অন্ত।
৬. ধাতু : ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে। যেমন: পড়, কর।
৭. ক্রিয়াশব্দ : ক্রিয়ার সাথে বিভক্তি যোগে ক্রিয়াপদ হয়। যেমন: পড়ে (পড়+এ)।
৮. কৃদন্ত শব্দ : ক্রিয়ার সাথে প্রত্যয় যোগে নতুন যে শব্দ গঠিত হয় তাকে কৃদন্ত শব্দ বলে। যেমন: পড়ুয়া (পড়+উয়া)।
প্রত্যয়ের গুণ বা বৃদ্ধি
প্রত্যয় গঠনে বর্ণের পরিবর্তন ও আগমন ঘটে। এই পরিবর্তনই গুণ বা বৃদ্ধি। যেমন:
১. গুণ: শব্দের আদিস্বরের পরিবর্তন ঘটানো হলো গুণ। যেমন :
ক) ই/ঈ থাকলে ‘এ’ হয়। যেমন: üচিন+আ = চেনা, üনী+আ = নেয়া/নেওয়া।
খ) উ/ঊ থাকলে ‘ও’ হয়। যেমন : üধু+আ = ধোয়া।
গ) ঋ থাকলে ‘অর’ হয়। যেমন : üকৃ+তা = কর্তা।
২. বৃদ্ধি: শব্দের বর্ণের আগমন ঘটানো হলো বৃদ্ধি। যেমন :
ক) অ থাকলে ‘আ হয়। যেমন : পচ+অ/ক (ণক) = পাচক।
খ) ই/ঈ থাকলে ‘ঐ’ হয়। যেমন : শিশু+অ/অব (ষ্ণ)= শৈশব।
গ) উ/ঊ থাকলে ‘ঔ’ বসে। যেমন : যুব+অন = যৌবন।
ঘ) ঋ থাকলে ‘আর’ হয়। যেমন : কৃ+য (ঘ্যণ)= কার্য।
প্রত্যয় নির্ণয়ের কৌশল
শব্দের অর্থ ঠিক রেখে শব্দ বিশ্লেষণ করার পর যদি সেই শব্দ দিয়ে নাম বোঝায় তাহলে নাম/তদ্ধিত প্রত্যয় হয় আর কাজ বুঝালে কৃৎপ্রত্যয় বোঝায়। যেমন: ঢাকাই—ঢাকা (নাম)+আই আর চলন্ত—চল (কাজ)+অন্ত ইত্যাদি।
প্রত্যয়ের প্রকরণ
বাংলা নামপ্রত্যয়/তদ্ধিত প্রত্যয়
অই, অক, অট, অড়, অন, অর, অল, অস, আ, আই, আইত, আচ, আচি, আন, আনি, আম, আমি, আমে, আর, আরি, আরু, আল, আলি, মি, ই/ঈ, ই, ইক, ইয়া, উ, উক, উয়া, রউ, ড়িয়া, উড়ো, উড়ে, উড়, উড়া, এ, র, রয়া, রয়ালা, ক, কা, কার, কিয়া/কে, গিরি, চে, জা, জাত, টিয়া, টে, ট, ঠা, ত, তা, তি, তুত, দার, ন, না, পনা, পানা, পারা, ভর, ভরা, মন্ত , ল, লা, লিয়া/লে, স, সা/সে, সী, বন্ত, ময়, রা, রি, ড়া, হারা। একটি অর্থবোধক বাংলা নামশব্দের পরে একটি বাংলা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক বাংলা শব্দ (বিশেষ্য/বিশেষণ) তৈরি হয়। যেমন:
১. অক, অট, অড়, অন, অর, অল, অস-প্রত্যয়
নোলক (লোন+অক), ভরাট (ভরা+অট), তুখোড় (তুখ+অড়), মাজন (মাজ+অন), ঘ্যানর (ঘ্যান+অর), খোলস (খোল+অস), দোলক, ঢোলক, মড়ক, জমাট, ঝাপট, দাপট, সাপট, মলাট, তুলট, চাপড়, পাঁচন, দাঁতন, নানান, মাতন, পেছন, প্যানর, ধকল, হাতল, বাদল, আদল, মাথাল, মুখোস।
২. আ-প্রত্যয়
চোরা (চোর+আ), নোনা (নুন+আ)-কেষ্টা, বাঘা, কালা, কানা, জলা, গোদা, রোগা, নোনা, চালা, জটা, চোখা, চাকা, দখিনা, আস্তা, আধা, তেলা, তালা, নোনা, দক্ষিণা, নয়া, ফাঁকা, পশ্চিমা, চোরা, ডিঙা, হাতা, বাসা, চাষা, থালা, পাতা, চাঁদা।
৩. আই, আচি, আনো, আনি-প্রত্যয়
ঢাকাই (ঢাকা+আই), ঘামাচি (ঘাম+আচি), ঘামানো (ঘাম+আনো), শুনানি (শুন+আনি), কানাই, নিতাই, নিমাই, বোনাই, মোগলাই, পাবনাই, বড়াই, সাফাই, চোরাই, মিঠাই, কানাচি, ব্যাঙাচি, জুতানো, লতানো, প্যাঁচানো, তলানি, নাকানি, চুবানি।
৪. আমি/আমো-প্রত্যয় (আমী/ঈ-কার হবে না)
পাগলামো (পাগল+আমো), ইতরামি, চোরামি, বাঁদরামি, ফাজলামি, বোকামি, ঘরামি, ন্যাকামি, পাকামি, মুর্খামি, জ্যাঠামি, গুণ্ডামি, ভণ্ডামি, দুষ্টামি, ভাঁড়ামি, নোংরামি, ছেলেমি, বুড়োমি, আলসামি।
৫. আর, আরি-প্রত্যয় (ঈ-কার হবে না)
কর্মকার/কামার (কর্ম/কাম+আর), মাঝারি (মাঝ+আরি), কুমার, চামার, ভাণ্ডার, ছুতার, কাটারি, রকমারি, কাঁসারি, পূজারি, শাঁখারি, ঝিয়ারি, দিশারি, পিয়ারি, রকমারি, খামারি।
৬. আল, আল, আলি-প্রত্যয় (ঈ-কার হবে না)
দাঁতাল (দাঁত+আল), বাঙাল (বঙ/বঙ্গ+আল), জমকাল (জমক+আল), ঘটকালি (ঘটক+আলি), দুধাল, চতুরাল, চণ্ডাল, লাঠিয়াল, আরাল, ঝাঁঝাল, পাঁকাল, দাঁতাল, জোড়াল, স্বর্ণালি, সোনালি, রুপালি, বর্ণালি, মিতালি, গৃহস্থালি, গীতালি।
৭. ই-প্রত্যয় (ঈ-কার হবে না)
বাহাদুরি (বাহাদুর+ই), ডাক্তারি, মোক্তারি, পোদ্দারি, ব্যাপারি, দোকানি, জমিদারি, চাষি, মাদ্রাজি, রেশমি, সরকারি, গুজরাটি, পানজাবি, তাঁতি, কাগজি, গুলো, ঝুলি, জাঁতি, লাঠি, দামি, দাগি, জেদি, তেজি, বিলাতি, বেনারসি, বাদামি, গোলাপি, রেশমি, খুকি, দাদি, ইংরেজি, দশই।
৮. ইক (অ+ই=আ হয়)-প্রত্যয় (সংস্কৃত ষ্ণিক>বাংলা ই)
আভিধানিক (অভিধান+ইক), কায়িক (কায়+ইক), বৈজ্ঞানিক (বিজ্ঞান+ইক), মাসিক (মাস+ ইক), নাবিক (নৌ+ইক), সাংবাদিক (সংবাদ+ইক), আক্ষরিক, আংশিক, আনুসঙ্গিক, আন্ত রিক, আণবিক, আঞ্চলিক, আধ্যাত্মিক, আধুনিক, আর্থিক, আভ্যন্ত রিক, আঙ্গিক, আনুষ্ঠানিক, আকস্মিক, ধার্মিক, নাগরিক, চারিত্রিক, পারিবারিক, প্রাকৃতিক, প্রাথমিক, বাচনিক, বার্ষিক, মাধ্যমিক, মানবিক, মানসিক, প্রাসঙ্গিক, শারীরিক, সাংকেতিক, সামাজিক, সামুদ্রিক, সাপ্তাহিক, সাংস্কৃতিক, সাম্প্রদায়িক, নাগরিক, সাংসারিক, স্বাপ্নিক, ধার্মিক, সামরিক, সাহিত্যিক।
৯. এ>ইয়া-প্রত্যয়
মাটিয়া (মাটি+ইয়া), মেটে (মাটি+এ), বেলে, পাথুরে, জেলে, মুটে, নেয়ে, সেকেলে, আদুরে, কনকনে, চকচকে, আমুদে, নাচুনে।
১০. উ/উক-প্রত্যয়
ঢালু (ঢাল+উ), নিন্দুক (নিন্দা+উক), কলু, সাঁতারু, দুখু, কানু, ছোট্টু, পাঁচু, হিরু, কালু, খুকু, নিচু, পিছু, দুষ্টু, পেটুক, মিথ্যুক, মিশুক, লাজুক, হিংসুক, ইচ্ছুক।
১১. ও<উয়া
উড়ে>উড়িয়া, উড়/উড়ি/উলি, টাকুয়া (টাক+উয়া), টেকো (টাক+ও), হাটুরিয়া (হাট+উড়িয়া), হাটুড়ে (হাট+উড়ে), লেজুড় (লেজ+উড়), ধেনো, টেকো, খেড়ো, জ্বরো, মেছো, মেঠো, কেজো, টেকো, সাপুড়ে, কাঠুড়ে, হাতুড়ে, শাশুড়ি, আধুলি।
১২. এল-প্রত্যয়
লেঠেল (লাঠি+এল), হিমেল (হিম+এল), গেঁজেল (গাঁজা+এলে)
১৩. ক /কা /কে /কার-প্রত্যয়
মড়ক (মড়+ক), ধনুক, ঢোলক, দমকা, হালকা, আচমকা, ছিঁচকে পুঁচকে, শতকে, ফুচকে, ছিটকে, মটকে, উপকার।
১৪. চে /জাত-প্রত্যয়
লালচে (লাল+চে), কালচে, তারচে, গোলাজাত।
১৫. ট /টে>টিয়া /ঠা-প্রত্যয়
ভরাট (ভরা+ট), ভাড়াটে (ভাড়া+টে/টিয়া), জমাট, ঝগড়াটে, রোগাটে, লম্বাটে, সাদাটে, বৈঠা, চৌঠা।
১৬. ত/তুত/তা/তি-প্রত্যয় (উচ্চারণ তো)
(উচ্চারণ তুতো), খালাত, ফুপাত, চাচাত, মাসতুত, খুরতুত, মেসতুত, নামতা, নুনতা, চাকতি, জালতি।
১৮. দার-প্রত্যয়
দোকানদার, বটিদার।
১৯. ন/না/নি-প্রত্যয়
সতীন, মিতান, পাখনা, মাস্টারনি, উকিলনি।
২০. পনা /পারা-প্রত্যয় (বিশেষণ)
চাঁদপনা (চাঁদ+পনা), দুরন্ত পনা, গিন্নিপনা, বেহায়াপনা, বোকাপনা, চাঁদপারা, পাগলপারা।
২১. ভর /ভরা-প্রত্যয় (বিশেষণ)
জীবনভর, দিনভর, রাতভর, মাসভর, গালভরা, মুখভরা, বাটাভরা।
২২. বন্ত /মন্ত-প্রত্যয় (বিশেষণ)
গুণবন্ত, ফলবন্ত, গুণমন্ত, বুদ্ধিমন্ত, শ্রীমন্ত।
২৩. ময়-প্রত্যয়
ঘরময়, দেশময়, বাজারময়
২৪. রা/রি/ড়া/ড়ি/লি/লা/লে-প্রত্যয়
কাটরা, পেটরা, কুঠরি, চামড়া, খাগড়া, গাছড়া, জুয়াড়ি, আঁকড়ি, মেয়েলি, আধলি, মেঘলা, একলা, আধলা, পিছলে।
২৫. স/সা/সে/সী-প্রত্যয়
মাকড়সা (মাকড়+সা), রূপসী (রূপ+সী), ফানুস, মুখস, খোলস, রূপসা, ভেপসা, কুয়াশা, ঝাপসা, পানসে।
২৬. হারা-প্রত্যয়
বলহারা, দোহারা।
বাংলা ধাতুপ্রত্যয় /কৃৎপ্রত্যয়
অ, অক, অন, অনা, অনি, অন্ত, অল, ই, উ, উন, উনি/উনী, অনা, অন্ত, অল, অক, আ, অয়া, আই, আত, আইত, আও, আন/আনো, আনি, উনি, আরি, উরি, আল, আলি, ই, ইয়া/ইয়ে, উতে, ইলে, ইবা, উ, উক, উকা/একো, উয়া, না, অক, কা, কি, আকু, আরু, তা, তি। একটি অর্থবোধক বাংলা ক্রিয়ার পরে একটি বাংলাপ্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক বাংলাশব্দ তৈরি হয় (বিশেষ্য বা বিশেষণ)। কৃৎ প্রত্যয়ে এই (ü) চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। যেমন:
১. অ, অক, অন, অনা /না, অনি /উনি, অন্ত, অল-প্রত্যয়
ডুব (ডুব+অ), চালক (চাল+অক), কাঁদন (কাঁদ+অন), ধরন (ধৃ+অন), কান্না (কাঁদ+না), চলন্ত (চল+অন্ত), ফাটল (ফাট+অল), ঝুল/ঝুল, চর, ঘোর, দোল, খোঁজ, কর, দেখ, বল, চল, দুল, বাঁধ, ডাক, খেল, খোঁজ, ঘের, ফোঁড়, পালক, মোড়ক, ঝলক, চড়ক, ফাটক, সড়ক, দেখন, হাসন, ভাঙন, ঢাকন, বাঁচন, থাকন, নাচন, বাজন, বাঁধন, দোলন, বাড়ন, ঝুলন, জানান, মানান, চালান, ভরান, রান্না, খেলনা, বাজনা, কল্পনা, পাওনা, বাটনা, ঢাকনা, দোলনা, কাঁদুনি, চালুনি, কাঁপুনি, রাঁধুনি, ডুবন্ত, ছুটন্ত, বাড়ন্ত, ঘুমন্ত, ঝুলন্ত, উড়ন্ত , জীবন্ত , মাটল, শাটল
২. আ, আনো, আন+ও, আনি, আই, আত/আইত, আও, আকু/আরি/আল-প্রত্যয়
করা (কর+আ), কাঁদানো (কাঁদ+আনো), শুনানি (শুন+আনি), সিলাই (সিল্+আই), ডাকাত (ডাক + আত/আইত), চড়াও (চড়+আও), কাটারি (কাট+আরি), মাতাল (মাত+আল) পড়া, চলা, দেখা, শোনা, ধরা, কেনা, বেঁচা, রাঁধা, কাচা, ফোটা, কাটা, রাঁধা, চালা, মারা, কাঁদা, কাঁপানো, জানানো, শোনানো, ভাসানো, চালানো, মানানো, জড়ানো, ভরানো, ওঠানো, শোয়ানো, পড়ানো, কাঁদানি, ঘ্যানঘ্যানানি, উড়ানি, কাঁপানি, জ্বালানি, চেঁচানি, চালানি, উড়ানি, ভাঙানি, ছটফটানি, ঝাঁকানি, যাচাই, ঝালাই, মাড়াই, ঢালাই, চড়াই, শেলাই, লড়াই, পাকড়াও, ধরাও, নড়াও, ঝাকাও, ফলাও, লড়াকু, পূজারি, ধুনারি, মিশাল।
৩. ই, এ >ইয়া /ইয়ে-প্রত্যয় (বিশেষণ)
ভাজি (ভাজ+ই), কাশি, চাছি, ফেরি, কিনি, ভাজি, বেড়ি, বেঁচি, সেঁচি জানাজানি, দেখাদেখি, ভাবাভাবি, হানাহানি, মারামারি, বলাবলি, কানাকানি, হাতাহাতি, চুলাচুলি, মারামারি গেয়ে, মেরে, কয়ে, বলে, মরে, নেচে, লেখে, বাজিয়ে।
৪. উ /উনি /উরি /উয়া-প্রত্যয়
উড়ু–(উড়+উ), ডাকু, ঝাড়–, রাঁধুনি, আঁটুনি, উড়ুনি, চড়ুয়া, চিরুনি (চির+উনি), ডুবুরি (ডুব+উরি), পড়+উয়া (পড়+উয়া)।
৫. ও /ওন-প্রত্যয়
উড়ো (উড়+ও), খাওন (খা+ওন), কাঁদ, মর, ধর, চল, বল, নড়, চড়, ছাওন, দেওন, নেওন, চাওন, দাওন ।
৬. ত /তা /তি প্রত্যয়
ফেরত, বহতা, ফিরতা/ফেরতা, পড়তা, ধরতা, পড়তি, ঝরতি, কাটতি, ঘাটতি, গণতি, গুনতি, উঠতি।
৭. না /নি-প্রত্যয়
খেলনা (খেল+না), করনি (কর+নি), দোলনা, ঝরনা, কান্না (কাঁদ+না), রান্না (রাঁধ+না), ভাবনা যাওনি, খাইনি, যাইনি, যায়নি, খায়নি।
৮. ছে/ছি/ছেন-প্রত্যয়
করছে (কর+ছে), করছে, করছি, করছেন।
৯. ল/লি/লে/লাম-প্রত্যয়
করল (কর+ল), করল, করলে, করলি, করলাম।
সংস্কৃত নামপ্রত্যয়/তদ্ধিত প্রত্যয়
ষ্ণ, ষ্ণিক, ষ্ণায়ক, ষ্ণ্য, ষ্ণি, ষ্ণেয়, আয়ন, আলু, ঈ, ঈয়, ইল, বী, ময়, শালী, বান/বতুপ, মান/মতুপ, ইল, ইষ্ঠ, ইমন/ইমা, ইত, ইন, ইম, তা, ত্য, ত্র, তা, ত্ব, থ, থা, দা, ধা, বৎ, বিধ, বিন, ম, য, র, ল, শ, সাৎ, আকিন, আমিন, চিৎ। একটি অর্থবোধক সংস্কৃত শব্দের পরে সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক সংস্কৃত শব্দ তৈরি হয় (বিশেষ্য বা বিশেষণ)। যেমন:
১. অব/অ>ষ্ণ, উ+অব=আব, ঐ+অ=ঐ, ঔ+অ=ঔ-প্রত্যয়
সংস্কৃত: মানব (মনু+ষ্ণ)
বাংলা: মানব (মনু+অব)
কৈশোর (কিশোর+অ), মৌন (মনু+অ), দানব, যাদব, মাধব, লাঘব, পার্থিব (পৃথিবী+অব), গৌরব (গুরু+অব), শৈশব (শিশু+অব), চৈত্র (চিত্র+অ), তৈল (তিল+অ), নৈশ (নিশা+অ), দৈব (দেব+অ), লাঘব (লঘু+অ), পৌরুষ (পুরুষ+অ), সার্বভৌম (সর্ব+ভূমি+অ)
২. আয়ন /আয়ণ-প্রত্যয়
দক্ষিণায়ন, দাক্ষায়ণ
৩. ই /ঈ /ইন, ই>ষ্ণি /ইক>ষ্ণিক-প্রত্যয়
দাশরথি (দশরথ+ই /ষ্ণি)
অধীন, কালীন, কুলীন, নবীন, প্রবীণ, গ্রামীণ, বৈরাগীন।
অনেকগুলো ই-প্রত্যয় দিয়ে লেখা হয়। যেমন: শ্রেণিন>শ্রেণী>শ্রেণি, রুগিন>রুগী>রুগি।
অনেকগুলো ঈ-প্রত্যয় দিয়ে লেখা হয়। যেমন: ভূমী, হস্তী, অগ্রণী, আগামী, তন্ত্রী, মন্ত্রী, শিকারী, প্রাণী, উপযোগী, অধিবাসী, পেশাজীবী, অর্থকরী, রাজধানী, ফলদায়ী, পরিকল্পনাকারী, ভাগী, রাগী, দাগী, যাত্রী, বিরোধী, বিদ্রোহী, প্রভাতী, উপকারী, বার্ষিকী, মানী, ধনী, গুণী, জ্ঞানী, উৎসাহী, জয়ী, বিজয়ী, ত্যাগী, পরিশ্রমী, প্রবাসী, বাদী, বিক্রী, ভোগী, মায়াবী, মেধাবী, বিলাসী, যোগী, যাত্রী, সেনানী, বনানী, স্থায়ী, রজনী, শশী, পত্রী, পাঠী, পাপী, পায়ী, নাশী, আততায়ী, নারকী, পারদর্শী, কর্মী, বর্তী, রশী, বশী, বাজী, বিয়োগী, বিরোধী, বৈরাগী, ব্যাপারী, বৈশাখী, উপকারী, অঙ্গাঙ্গী, আত্মঘাতী, অপরাধী, অগ্রনী, গ্রাহী, উৎসাহী, উপযোগী, পক্ষী, বাদী, ভারী, নামী, জেদী, তেজী, দরদী, মেজাজী।
ঈ-প্রত্যয়: নারিবাচক শব্দ: গাভিন>গাভী, গৃহীন>গৃহী, কেশিন>কেশী, সতিন>সতী, রূপসিন>রূপসী, স্ত্রী, জননী, বান্ধবী, ভগিনী, শালী, মাদী, মহতী, সতী, বুদ্ধিমতী, গুণবতী, নারী, তরুণী, শালী, স্ত্রী, যুবতী, নদী, তরুণী, হরিণী, যুবতী, সুন্দরী, কুমারী, মায়াবী, কিশোরী ইত্যাদি।
নারী বাচক শব্দ ছাড়া অন্যান্য ঈ-কারযুক্ত শব্দ: স্বামী, শশী, শীত, শরীর, দোশী, যাত্রী, দাগী, সমীচীন, সীমা ইত্যাদি।
ঋ-যুক্ত বর্ণে ঈ-প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। যেমন: শরীর (শৃ+ঈর), গ্রীষ্ম, তীক্ষ্ণ। আবার ইর-প্রত্যয়ে ঈ-প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। যেমন: বধীর (বধ+ইর)।
৫. ইষ্ঠ, ইমন>ইমা (বাংলা), ইত (বিশেষণ), ইতি, ইম, ইল (বিশেষণ), ইয়ান-প্রত্যয়
গরিষ্ঠ (গুরু+ইষ্ঠ), নীলিমা (নীল+ইমা), কুসুমিত (কুসুম+ইত), সমিতি (সম+ইতি), অগ্রিম (অগ্র+ইম)
পঙ্কিল (পঙ্ক+ইল), গরিয়ান (গুরু+ইয়ান), লঘিষ্ঠ, কনিষ্ঠ, বলিষ্ঠ, মহিমা (মহৎ+ইমা), গরিমা, দ্রাঘিমা, তনিমা, গরিমা, মুকুলিত, শোভিত (শোভা+ইত), বিকৃত (বিকার+ইত), প্লবিত, কম্পিত, পতিত, ঘটিত, মিলিত, জীবিত, পঠিত, গ্রন্থিত, বর্ধিত, জাগরিত, শিক্ষিত, ক্ষুধিত, বঞ্চিত, লিখিত, নিন্দিত, লজ্জিত, পুষ্পিত, রক্তিম (রক্ত+ইম), পশ্চিম (পশ্চাৎ+ইম), আদিম (আদি+ইম), অন্তিম, ফেনিল, জটিল (জটা+ইল), পিচ্ছিল, কুটিল, বলিয়ান (বলবৎ+ইয়ান), বর্ষিয়ান (বৃদ্ধ+ ইয়ান)।
৬. ঈয়-প্রত্যয়
জলীয়, বায়বীয়, নমুনীয়, মঙ্গলীয়, বঙ্গীয়, মিসরীয়, ভারতীয়, আরবীয়, মানবীয়, দলীয়, স্থানীয়, আত্মীয়, রাজকীয়।
৭. এয়>ষ্ণেয়-প্রত্যয়
বৈমাত্রেয় (বিমাতা+এয়), আগ্নেয় (অগ্নি+এয়), ভাগনেয় (ভগনী+এয়)।
৮. ক-প্রত্যয়
ছত্রক (ছত্র+ক), পঞ্চক, পুত্রক, ভিক্ষুক
৯. ত /তন, তর /তম, (খুব অর্থে-বিশেষণ), ত্ব (বিশেষ্য), তা (ঈ, ই-কার হয়ে)/ত্য /ত্র /ত্ব, থ /থা-প্রত্যয়।
অন্তত (অন্ত+ত), চিরন্তন (চিরম+তন), বৃহত্তর (বৃহৎ+তর), বৃহত্তম (বৃহৎ+তম), বন্ধুত্ব (বন্ধু +ত্ব)।
বন্ধুতা (বন্ধু+তা), পশ্চাত্ত্য (পশ্চাৎ+ত্য), চতুর্থ (চতুঃ+থ), অংশত, পুরাতন, মহত্তর (মহৎ+তর), ক্ষুদ্রতর, উন্নততর, উচ্চতর, দীর্ঘতর, গুরুতর, মহত্তম (মহৎ+তম), প্রিয়তম (প্রিয়+তম), মধুরতম (মধুর+তম), ক্ষুদ্রতম, গুরুত্ব, ঘনত্ব, মহত্ব, মন্ত্রিত্ব, স্থায়িত্ব, শত্রুতা (শত্রু+তা), প্রতিযোগিতা (প্রতিযোগ+তা), সহযোগিতা, সততা, মূর্খতা, দাক্ষিণাত্য (দক্ষিণ+ত্য), সর্বত্র, একত্র, তত্র, যত্র, ছত্র, মনুষ্যত্ব, গুরুত্ব, চতুর্থ, ষষ্ঠ (ষষ+থ), অন্যথা, যথা (যদ+থা), তথা (তদ+থা)
১০. দা /ধা /চিৎ /বৎ-প্রত্যয়
একদা, সর্বদা, ত্রিধা, দ্বিধা, শতধা, কিঞ্চিৎ, ক্বচিৎ, বন্ধুবৎ, মাতৃবৎ, তাবৎ (তদ+বৎ), যাবৎ (যদ+বৎ)
১১. বিধ, বী<বিন (বিশেষণ), বান<বতুপ (বিশেষণ), মান<মতুপ (বিশেষণ)-প্রত্যয়
নানাবিধ (নানা+বিধ), মেধাবী (মেধা+বী), জ্ঞানবান (জ্ঞান+বান), বুদ্ধিমান (বুদ্ধি+মান), দ্বিবিধ, চতুর্বিধ (চতুঃ+বিধ), মায়াবী, তেজস্বী (তেজঃ+স্বী), যশস্বী।
নরবাচক: দয়াবান, শ্রদ্ধাবান, ধনবান, শ্রীমান, বুদ্ধিমান, শক্তিমান।
নারী বাচক: বুদ্ধিমতী, রূপবতী, ভাগ্যবতী, পুণ্যবতী।
১২. য>ষ্ণ্য (বিশেষ্য), অ+য=আ-প্রত্যয়
সাহিত্য (সহিত+য), দৈত্য (দিতি+ষ্ণ্য/য), মনুষ্য (মনুঃ+য), সৌন্দর্য (সুন্দর+য), শৌর্য (শূর+য), ধৈর্য (ধীর+য), পার্বত্য (পর্বত+য), বৈদ্য (বেদ+য), সৌভাগ্য, সাম্য (সাম+য), কাব্য (কবি+য), মাধুর্য (মধু+য), প্রাচ্য (প্রাচী+য), সভ্য (সভা+য), আলস্য, আভিজাত্য, আতিশয্য, আনুগত্য, আধিক্য, চাপল্য, পার্থক্য (পৃথক+য), বার্ধক্য (বৃদ্ধ+য), স্বাস্থ্য (সুস্থ+য), অন্ত্য (অন্ত+য), কাব্য (কবি+য), ঐক্য (এক+য), দারিদ্র্য (দরিদ্র+য), বৈচিত্র (বিচিত্র+য), দৈত্য (দিতি+য), বৈশিষ্ট্য (বিশিষ্ট+য), সৈন্য (সেনা+য)।
১৩. ম /ময়-প্রত্যয়
পঞ্চম (পঞ্চ+ম), সপ্তম, অষ্টম, দশম, তন্ময়, বাক্সময়, মৃন্ময়, চিন্ময়।
১৪. র /ল /শ /শো /সাৎ /শালী-প্রত্যয়
মধুর (মধু+র), হাতল (হাত+ল), মুখর (মুখ+র), শীতল, বৎসল, শীতল, মাংশল, কর্কশ, প্রায়শ, ক্রমশ, ধূলিসাৎ, আত্মসাৎ, ধনশালী, ফলশালী, লোমশ (লোম+শ)।
সংস্কৃত থেকে ই-যোগে তদ্ভব
কৃষ্ণ>কানাই, সত্য>সত্যি, যজ্ঞ>যজ্ঞি, বৈদ্য>বদ্যি, পৃষ্ঠ>পিঠ, মৃত্তিকা>মিট্টি>মাটি, অভ্যন্তর>ভিতর, পট্টালী>পুঁটলি, ঘটিকা> ঘটি, বাটী>বাড়ি, সীতা>সিঁতি। সংখ্যাবাচক শব্দে ঈ-প্রত্যয় লেখা হয়। এসব শব্দ ই-প্রত্যয় দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন: চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অঅষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ষোড়শী।
ই-প্রত্যয়: বাঁশি, ধ্রুপদি, রেশমি, হৈমন্তি, অক্ষি, অগ্নি, পিপাসি, ফাল্গুনি, বন্ধকি, বন্ধনি, বেগুনি, কৃষি, রুচি, চাষি, ঘসি, চুষি, চুরি, হাসি, ফিরি, চালাকি, হিসাবি, হিসেবি, দোকানি, জুয়াড়ি, পাহাড়ি, পুঁথি, ঘাতি, বনবাসি, ব্যয়ি, রাত্রি, লেখনি, রেশমি, জেদি, তেজি, দরদি, মেজাজি, দোকানি, ভাঁড়ামি, ভাঁড়ারি, তাঁতি, পণ্ডিতি, ডাকাতি, জাকাতি, জমিদারি, দেশি, বিলাতি, বেনারসি, মনিপুরি, সিংগাপুরি, বুড়ি, বোষ্টমি, রেশমি, পশমি, বাদামি, বেগুনি, ঘটি, সহচরি, রাখালি, দালালি, মেয়াদি, বসতি, পিতা, সিংহ, ক্ষিতি, বণিক, দিক, ব্যক্তি, ভূমি, ভক্তি, স্মৃতি, রবি, শিক্ষা, রাত্রি, গাড়ি, বাড়ি, নাড়ি, বিবাহ, বিপদ, শাড়ি, শিশু, শিলা, শিল্প, শিথিল, বৃত্তি, পালকি ইত্যাদি। সংখ্যাবাচক তিন, ত্রিশ, উনিশ, পঁচিশ, চল্লিশ, আশি, কোটি।
দেশি শব্দ: চটি, বাখারি, ঢেঁকি, ডিঙি, ঢিল, ঝিঙা, মুড়ি, চাটাই, চিঙড়ি, ঝিনুক, খেঁদি, মেকি, খুকি, লাঠি, চিত, বলিহারি, কচি, ছুটি, মেকি, উতি, ছাই, কুড়ি, ফিঙে।
প্রাদেশিক শব্দ: চাচি, পাগলি, বুড়ি, বোষ্টমি, মামি, নানি, দাদি, ভাবি, কাকি, বউদি, মাসি।
বিদেশি শব্দ: ইমান, ইদ, গরিব, গ্রিন, সেনচুরি, ফার্মেসি, জংগি, হাজি, বাকি, জিহাদ, শহিদ, তির, তিরন্দাজ, বন্দি, বিমা, বরগি, চিন, পানজেরি, নবি, পরি, শহিদ ইত্যাদি।
একক শব্দ, বিভক্তি ও নির্দেশক বাদে অর্থ দাঁড়ালে ঈ-কার ঠিক থাকবে। যেমন: নীলাভ, নীলিমা, সমীচীন, শ্রীকান্ত , নদীটি, নদীগুলো ইত্যাদি)। তবে দুটি শব্দ একশব্দে পরিণত হওয়ার সময় প্রথম শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে সেটি ই-কার হয়। যেমন: স্ত্রীবাচক>স্ত্রিবাচক, নদীকূল>নদিকূল, পল্লী সাহিত্য>পল্লিসাহিত্য ইত্যাদি।
সংস্কৃত নারী বাচক শব্দ: নারী, নদী, তরুণী, জননী, শালী, স্ত্রী, হরিণী, যুবতী, সুন্দরী, কুমারী, মায়াবী, কিশোরী ইত্যাদি।
সংস্কৃত ধাতুপ্রত্যয় /কৃৎপ্রত্যয়
অ/অং, আ, অচ, অন, অপ, অনট, অনীয়, ক্ত, ক্তি, তব্য, তৃচ, নক, য, নিন, ইন, অল, ইষ্ণু, বর, র, উক, শানচ। একটি অর্থবোধক সংস্কৃত ক্রিয়ার পরে সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক সংস্কৃত শব্দ (বিশেষ্য বা বিশেষণ) তৈরি হয়। যেমন:
১. অ, অক /ণক, অণ>অণট, অন>অনট, অৎ, অয় (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
উদ্ভিদ (উদ+ভিদ), কারক (কৃ+অক), করণ (কৃ+অণ), যৌবন (যুব+অন), চলৎ (চল+ অৎ), জয় (জি+অয়), অধ্যয়ন (অধি+অয়ন), করণীয় (কৃ+অনীয়), ভাষাবিদ, পরিষদ, সংসদ, বিদ্যুৎ, সম্রাট (সম +রাজ), স্নেহ (স্নিহ+অ), ক্রোধ (ক্রধ+অ), আদর (আদৃ+অ), হর্ষ (হৃষ+ অ), বর্ষ (বৃষ+অ), সর্প (সৃপ+অ), চোর (চুর+অ), ধর (ধৃ+অ), প্রচ্ছদ (প্রছদ+অ), পরিচ্ছদ (পরিছদ+অ), নায়ক (নী+ অক), পাঠক (পঠ+অক), যাজক (যজ+অক), নাশক (নশ+ অক), ধারক (ধৃ+অক), খাদক (খাদ+ অক), নিন্দুক (নন্দ+অক), স্মারক (স্মৃ+ অক), সম্পাদক (সম্পাদি+অক), উৎপাদক (উৎপাদি +অক), জনক, চালক, স্তাবক, পাচক (পচ+ অক), ছেদক (ছিদ+অক), লেখক (লিখ+অক), মরণ (মৃ+অণ), স্মরণ (স্মৃ+অণ), বর্ষণ (বৃষ+অণ), ভরণ (ভূ+অণ), হরণ (হৃ+অণ), গমন (গম+অন), শ্রবণ (শ্রু+ অন), দর্শন (দৃশ+অন), ভবন (ভূ+অন), দান (দা+অন), জ্ঞান (জ্ঞা+অন), নয়ন নে+অন), চয়ন (চি+অন), বর্দ্ধন (বৃধ+অন), স্থান (স্থা+অন), ভ্রমণ (ভ্রম+অন), পালন (পাল+অন), বহন, নন্দন (নন্দ+অন), তড়িৎ (তড়+ইৎ), সৎ (অস+অৎ), ভয়, ক্ষয়, ক্রয়, নিশ্চয়।
২. অয়ন, অনীয় (ক্রিয়া থেকে বিশেষ্য/বিশেষণ)-প্রত্যয়
বরণীয় (বৃ+অনীয়), দর্শনীয় (দৃশ+অনীয়), পানীয় (পা+অনীয়), শ্রবণীয় (শ্রু+অনীয়), পূজনীয় (পূজ + অনীয়), অর্চনীয় (অর্চ+অনীয়), গ্রহণীয় (গ্রহ্+অনীয়), বন্দনীয় (বন্দ্+অনীয়), শোচনীয় (শুচ+ অনীয়), লোভনীয় (লূভ+অনীয়), রমণীয় (রম+অনীয়), রক্ষণীয় (রক্ষ+ অনীয়), মোহনীয় (মুহ+অনীয়), প্রার্থনীয় (প্র+অর্থ+অনীয়), প্রয়োজনীয় (প্র+যুজ+অনীয়) মাননীয় (মন+নিচ+অনীয়), গমনীয় (গম+ অনীয়), শ্রবনীয় (শ্রু+অনীয়), আদরণীয় (আদৃ+অনীয়)।
৩, আ, আন /আনো-প্রত্যয়
কৃপা (কৃপ+আ), উদ্যান (উৎ+আন), সংজ্ঞা (সমজ্ঞ+আ), লীপসা (লভ+আ), ত্বরা, পীড়া, সেবা, ক্রীড়া, শিক্ষা, দীক্ষা, শ্রদ্ধা, প্রজ্ঞা, পিপাসা, জিজ্ঞাসা, জানানো (জানা+আন), শোনানো।
৪. ইষ্ণু-প্রত্যয়
চলিষ্ণু (চল+ইষ্ণু), ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।
৫. ঈ /ইন /ণিন-প্রত্যয়
পায়িন (পা+ইন)>পায়ী, বাদী (বদ+ইন), স্থায়ী (স্থা+ইন), দায়ী (দা+ ইন), ভাবী (ভাব+ইন), ত্যাগী (ত্যজ+ইন), মন্ত্রী (মন্ত্র+ইন), যন্ত্রী (যন্ত্র+ইন), পরিশ্রমী (পরিশ্রম+ ইন), কারী (কৃ +ইন), ভেদী (ভিদ+ইন)।
৬. উক-প্রত্যয়
ভাবুক (ভূ/ভৌ+ইক), জাগরূক (জাগৃ+/জাগর+উক)।
৭. কর /কার-প্রত্যয়
ভয়ংকর, শুভংকর, দিবাকর, পুষ্টিকর, ভাস্কর, চিত্রকর, প্রভাকর, গ্রন্থকার, শাস্ত্রকার, চর্মকার, কর্মকার, ভাষ্যকার, স্বর্ণকার।
৮. য ধাতু থেকে (বিশেষ্য), যা /ক্যপ-প্রত্যয়
ভৃত্য (ভৃ+য), শাস্+য-শিষ্য, কার্য, সহ্য, লভ্য, হত্যা (হন+যা), পরিচর্যা (পরিচর+যা), বিদ্যা (বিদ+যা), শয্যা (শী+যা), কার্য (কৃ+য), ধার্য (ধৃ+য), ত্যাজ্য (ত্যজ+য), শ্রাব্য (শ্রু+য), পাচ্য (পচ+য), ভাগ্য (ভজ+য), হাস্য (হস+য), যোগ্য (যুজ+গ), দেয় (দা+য), পেয় (পা+ য), হেয় (হা+য), জেয় (জি+য), বিধেয় (বিধা+য), গম্য (গম+য), লভ্য (লভ+য)।
৯. ত /ক্ত (ক্রিয়াবিশেষণ), তা /তৃচ (ধাতু থেকে বিশেষ্য), তা/তৃণ, তি /ক্তি (ধাতু থেকে বিশেষ্য আর ‘তব্য’ বিশেষণ), তার—তৃ, তু/তৃ-প্রত্যয়
কৃত (কৃ+ত/ক্ত), জেতা (জি+তা/তৃণ), বস্তু (বস+তু) উক্ত (বচ+ত), মুক্ত (মুচ+ত), সিক্ত (সিচ+ ত), ভুক্ত (ভুজ+ত), ভক্ত (ভজ+ত), ক্লান্ত (ক্লম+ত), উপ্ত (বপ+ত), গত (গম +ত), মত (মন+ ত), রত (রম+ত), নত (নম+ত), হত (হন+ত), ভীত (ভী+ত), ক্রীত (ক্রী+ত), হৃত (হৃ+ত), জিত (জি+ত), মুগ্ধ (মুহ+ত), দগ্ধ (দহ+ক্ত), লব্ধ (লভ+ত), ছিন্ন (ছিদ+ত), ভিন্ন (ভিদ+ত), মগ্ন (মসট+ত), নষ্ট (নশ+ত), দৃষ্ট (দৃশ+ত), সৃষ্ট (সৃজ+ত), গৃহীত (গৃহ+ইত), পঠিত (পঠ+ইত), লিখিত (লিখ+ইত), বিদিত (বিদ+ইত), বেষ্টিত (বিষ্ট+ইত), লুণ্ঠিত (লুণ্ঠ+ইত), শিক্ষিত (শিক্ষ+ইত), চলিত, পতিত, ক্ষুধিত, চূর্ণ (চুর+ ত), জাত (জন+ত), দত্ত (দা+ত), সুপ্ত (স্বপ+ত), দাতা (দা+তা), মাতা (মা+তা), পিতা (পা+তা), ক্রেতা (ক্রী+তা), নেতা (নী+তা), জেতা (জি+তা), শ্রোতা (শ্রু+ তা), কর্তা (কৃ+তা), বক্তা (বচ+তা), স্রষ্টা (সৃজ+তা), যোদ্ধা (যুধ+তা), বোদ্ধা (বুধ+তা), পরিণেতা (পরিনী+তা/তৃণ), কর্তা (কৃ+তা), মতি (মন+তি), গতি (গম+তি), খ্যাতি (খ্যা+তি), গীতি (গৈ+ তি), ইতি (ই+তি), শ্রুতি (শ্রু+তি), স্তুতি (স্তু+তি), ভক্তি (ভজ+তি), উক্তি (বচ+তি), মুক্তি (মুচ+ তি), ভ্রান্তি (ভ্রম+তি), স্মৃতি (স্মৃ+তি), দৃষ্টি (দৃশ+তি), নীতি (নী+তি), শক্তি (শক+তি), সিদ্ধি (সিধ+তি), বুদ্ধি (বুধ+তি), কর্তব্য (কৃ+তব্য), দ্রষ্টব্য (দৃশ+তব্য), দাতব্য (দা+তব্য), কর্তব্য (কৃ+তব্য), গন্তব্য (গম+তব্য), জ্ঞাতব্য (জ্ঞা+তব্য), বক্তব্য (বচ+তব্য), তন্তু (তন+তু), সেতু (সি+তু), পিতৃ/পিতা (পা+তৃ), মাতৃ/মাতা (মা+তৃ), শ্রোতা (শ্রু+তৃ), কর্তা/কতৃ (কৃ+তৃ), ভ্রাতা/ভ্রাতৃ (ভ্রাজ+তৃ), ক্রেতা (ক্রী+তৃ), নেত্র (নী+ত্র), শাস্ত্র (শাস+ত্র), বস্ত্র (বস+ত্র)।
১০. না/মান/শান/শানচ-প্রত্যয়
বর্তমান (বৃৎ+মান), বিশ্ব (বিশ+ব), ক্ষিপ্র (ক্ষিপ+র), তৃষ্ণা (তৃষ+না), বর্দ্ধমান (বৃধ+ মান), দৃশ্যমান (দৃশ+মান), বিদ্যমান (বিদ+মান), চলমান (চল+মান), দীপ্যমান (দীপ+মান), ক্ষুদ্র (ক্ষুদ+র)।
বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়
আন, আনা, আনি, আলা, রয়ালা, কর, খানা, খোর, গর, গিরি, চা, চি, দান, দানি, দার, নবিস, নামা, স্তান, পনা, সা, সে, বাজ, বন্দি, সই। একটি অর্থবোধক বিদেশি শব্দের পরে বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক বিদেশি শব্দ তৈরি হয়। যেমন:
১. আনা (বিশেষ্য), আনি/য়ানি (বিশেষ্য), ওয়ান (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
বিবিআনা (বিবি+আনা), হিন্দুআনি (হিন্দি+আনি/য়ানি), গাড়োয়ান (গাড়ি+ওয়ান), সামিআনা, মুনসিআনা, বাবুয়ানা, গরিবআনা, ঘরানা, হিন্দুআনি, বাবুআনি, সাহেবিআনি, বিবিআনি, দারোয়ান (দ্বার+ওয়ান), বারোয়ান, কেচোয়ান।
২. অলা /ওয়ালা (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
বাড়িওয়ালা (বড়ি+ওয়ালা), বাড়িআলা (বাড়ি+অলা), গাড়িআলা, বাঁশিঅলা, মাছআলা, দুধআলা, দিল্লিআলা, গোয়ালা, ফেরিআলা, চুড়িআলা, কাবলিআলা, দাঁড়িয়ালা।
৩. গর/কর (বিশেষ্য)
সওদাগর (সওদা+গর), বাজিগর/বাজিকর, কারিগর/কারিকর, জাদুকর/জাদুগর।
৪. খানা (বিশেষ্য), খোর (বিশেষণ)-প্রত্যয়
কাচারিখানা (কাচারি+খানা), নেশাখোর (নেশা+খোর), ছাপাখানা, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, ঘুষখোর, গাঁজাখোর, বিড়িখোর, মদখোর, জুয়াখোর।
৫. গিরি (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
দাদাগিরি (দাদা+গিরি), দিদিগিরি, বাবুগিরি, সাধুগিরি, নেতাগিরি।
৬. চা /চি (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
বাগিচা (বাগি+চা), তবলচি, নলিচা, ডেগচি, বাবুর্চি, ধুনুচি, মশালচি।
৭. তর /উচ্চারণ তরো-প্রত্যয়
এমনতর (এমন+তর), কেমনতর, যেমনতর
৮. দানি/দার/দারি (বিশেষণ)-প্রত্যয়
পানদানি (পান+দানি), খবরদার (খবর+দার/দারি), ফুলদানি, কলমদানি, দেনাদার, চৌকিদার, পাহারাদার, মজুমদার, আড়তদার, তাঁবেদার, পাহারাদার, মজুদদার, তালুকদার, তরফদার, হাবিলদার, দফাদার, খবরদার।
৯. নবিশ, নামা-প্রত্যয়
শিক্ষানবিশ (শিক্ষান+বিশ), কাবিননামা (কাবিন+নামা), নকলবিশ, হিসাববিশ, হাসাননামা।
১০. পনা-প্রত্যয়
ছেলেপনা (ছেলে+পনা), গিন্নিপনা, বেহায়াপনা, দুরন্তপনা।
১১. বাজ (বিশেষ্য), বাজি (বিশেষণ), বন্দ /বন্দি-প্রত্যয়
কলমবাজ (কলম+বাজ), নজরবন্দ (নজর+বন্দ/বন্দি)।
কলমবাজি, গলাবাজ, ধান্দাবাজ, ধোঁকাবাজ, চাপাবাজ, মামলাবাজ, ফটকাবাজ, ফন্দিবাজ, ফাঁকিবাজ, চাঁদাবাজ, চালবাজ, জবানবন্দি, ফাইলবন্দি, কারাবন্দি।
১২. সা/সে, সই (মতো-বিশেষণ), সই (সহি/স্বাক্ষর), স্তান (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
পানসা/পানসে (পানি+সা/সে), জুতসই (জুত+সই), পাকিস্তান (পাক+স্তান), কালসে, মানানসই, চলনসই, টেকসই, মাপসই, প্রমাণসই, টিপসই>টিপসহি, নামসই>নামসহি, হিন্দুস্তান, আবগানিস্তান, গুলিস্তান, তুর্কিস্তান।
শব্দগঠনের উপায় (সমাস)
সমাস দিয়ে শব্দ গঠন করা যায়। সমাস অর্থ সংক্ষেপ। অর্থাৎ শব্দ সংক্ষেপ। অনেকগুলো শব্দ একত্র করে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ করা হয়। তবে একত্র করতে বিভক্তি লাগে। যেমন : শব্দ+ বিভক্তি+শব্দ = সমাসজাত শব্দ। যখন ‘হিম+আলয়= হিমালয়’ লেখা হয় তখন সন্ধি হয় আর যখন ‘হিমের আলয়=হিমালয়’ লেখা হয় তখন সমাস হয়। সমাসজাত শব্দ বাক্যে ব্যবহারের পরও তাদের অর্থের পার্থক্য থাকতে পারে। যেমন: বাজার থেকে দুধসাগু (দুধ ও সাগু) কিনে এনে দুধসাগুকে (দুধ মিশ্রিত সাগু) ভালো করে রান্না করে খেও।
শব্দকে আশ্রয় করে অর্থসংগতিপূর্ণ একাধিক শব্দকে একশব্দে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বহুশব্দকে একশব্দ করার প্রক্রিয়াকেও সমাস বলে। অথবা পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ একাধিক শব্দকে একশব্দে পরিণত করার জন্য যে নিয়মটি বিশেষ ভূমিকা রাখে সেই নিয়মকেই সমাস বলে। অথবা সমাস অর্থ মিলন অর্থাৎ পাশাপাশি দুই বা ততোধিক শব্দের মিলনকে সমাস বলে। অথবা শব্দকে আশ্রয় করে অর্থপূর্ণ একাধিক শব্দ যে সূত্রে একশব্দ করা হয় তাকে সমাস বলে।
ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে সমাসের সংজ্ঞা দিয়েছেন
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: পরস্পর অর্থসঙ্গতি বিশিষ্ট দুই বা বহু পদকে লইয়া একটি পদ করার নাম সমাস।
মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী: অর্থ-সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও গোপাল হালদার: পরস্পর-সম্বন্ধবিশিষ্ট একার্থবাচক একাধিক পদের একপদী ভাবকে বলে সমাস।
জ্যোতিভূষণ চাকী: পরস্পর সম্পর্কিত দুই বা তার বেশি শব্দ একসঙ্গে মিলে সমাস হয়।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক: পরস্পর অন্বয়যুক্ত দুই বা ততোধিক পদের (শব্দের নহে, কেননা, শব্দ অন্বিত হইলেই পদে পরিণত হইয়া যায়) মধ্যবর্তী অন্বয়াংশ (তাহা বিভক্তিও হইতে পারে, অন্য পদও হইতে পারে) লোপ করিয়া পদগুলো এক শব্দে (পদে নহে, কেননা, সমাসবদ্ধ পদের শেষে শব্দবিভক্তি যুক্ত হয়) পরিণত করার প্রক্রিয়ার নাম সমাস।
সমাসের বৈশিষ্ট্য
১. পাশাপাশি দুই বা তার অধিক শব্দ থাকতে হবে
২. এসব শব্দের মধ্যে অর্থসংগতি থাকতে হবে
৩. এসব শব্দের মধ্যে বৃহৎ শব্দ তৈরির যোগ্যতা থাকতে হবে
৪. নতুন শব্দ গঠন করার ক্ষমতা থাকতে হবে
৫. একাধিক শব্দকে সংকোচিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে
৬. শব্দগুলোর বিভক্তি লোপ পেতে হবে
সমাসের উপাদান
১. সমাসজাত বা সমাসবদ্ধ বা সমস্ত শব্দ : শব্দে শব্দে তৈরিকৃত শব্দই সমাসজাত শব্দ।
২. সমস্যমান শব্দ : সমাসজাত শব্দ বা ব্যাসবাক্যের প্রতিটি পদকে সমস্যমানপদ বলে।
৩. ব্যাসবাক্য বা সমাসবদ্ধ বা বিগ্রহবাক্য : সমস্যমানপদকে ব্যাসবাক্য বলে।
৪. পূর্বপদ : ব্যাসবাক্যে প্রথম শব্দকে পূর্বপদ বলে।
৫. পরপদ বা উত্তরপদ : ব্যাসবাক্যে শেষ পদকে পরপদ বা উত্তরপদ বলে।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ব্যাকরণে সমাসের প্রয়োজন অনেক। সমাসের মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো যায়। যেমন:
১. সমাসের মাধ্যমে অনেক নতুন শব্দ গঠন করা যায়
২. অল্পকথায় ব্যাপকভাব প্রকাশ করা যায়
৩. সহজভাবে শব্দ উচ্চারণ করা যায়
৪. বাক্যকে গতিশীল করা যায়।
৫. ভাষাকে সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা যায়
৬. বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সংক্ষিপ্ত, সহজ-সরল, অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করা যায়
সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য
১. বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। আর শব্দের সঙ্গে শব্দের মিলনকে সমাস বলে।
২. সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে অবস্থিত। আর সমাস ব্যাকরণের রূপতত্ত্বে অবস্থিত।
৩. সন্ধি ৩ প্রকার। যেমন: স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি। আর সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস, দ্বিগুসমাস, কর্মধারয় সমাস, তৎপুরুষ সমাস, অব্যয়ীভাব সমাস ও বহুব্রীহি সমাস।
৪. সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। আর সমাসে অলুক বাদে অন্য সমাসের বিভক্তি লোপ পায়।
৫. সন্ধিতে বর্ণে বর্ণে মিলন ঘটে। সন্ধিতে শব্দের মিলন বর্ণ ও উচ্চারণভিত্তিক। দুটি বর্ণের মিলন ঘটে। আর সমাসে শব্দে শব্দে বা পদে পদে মিলন ঘটে। সমাসে শব্দের মিলন অর্থভিত্তিক। দুই বা দুয়ের অধিক শব্দের মিলন ঘটে।
৬. সন্ধি অল্প সংখ্যক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।আর সমাস অনেক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।
৭. সন্ধির ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে না। আর সমাসের ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
৮. সন্ধি শব্দকে গতিশীল করে। আর সমাস বাক্যকে গতিশীল করে।
৯. সন্ধির নমুনা হলো বিদ্যা+আলয়—বিদ্যালয়, প্রতি+এক—প্রত্যেক, হিম+আলয়—হিমালয়। আর সমাসের নমুনা হলো: বিদ্যার জন্য আলয়—বিদ্যালয়, একের পরে এক—প্রত্যেক, হিমের আলয়—হিমালয়।
১০. সন্ধি উচ্চারণকে পরিষ্কার করে। আর সমাস বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করে।
উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য
১. উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় থাকলে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। আর উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় না থাকলে যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। আর উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
২. উপমানে উপমানবাচক পদ থাকে, সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকে কিন্তু উপমেয়বাচক পদ থাকে না। আর উপমিতে উপমেয়বাচক পদ ও উপমানবাচক পদ থাকে কিন্তু সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকে না। আর রূপক কর্মধারয় সমাসে তুলনাবাচক শব্দ ‘রূপ’ বসে।
৩. উপমান সমাসের দুটি শব্দের একটি শব্দ বিশেষ্য আর অপরটি বিশেষণ। আর উপমিতের দুটি শব্দই বিশেষ্য শব্দ। আর রূপকের দুটি শব্দই বিশেষ্য শব্দ।
৪. উপমানের সাধারণ ধর্মবাচক শব্দের প্রাধান্য থাকে। যেমন: তুষারের ন্যায় ধবল—তুষারধবল। তুষার—উপমান ও বিশেষ্য, ধবল—উপমিত ও বিশেষণ। আর উপমিতের উপমেয় বাচক শব্দের প্রাধান্য থাকে। যেমন: পুরুষসিংহের ন্যায়—পুরুষসিংহ। পুরুষ—উপমেয় ও বিশেষ্য, সিংহ—উপমান ও বিশেষ্য।আর রূপকের উপমেয় শব্দের পূর্বে বসে আর উপমান পরে বসে।
৫. উপমান সমস্যমান পদে ন্যায় বসে। যদি তুলনামূলক শব্দ অর্থাৎ ‘মতো/ন্যায়’ থাকে তাহলে শব্দের মাঝে বসে। আর উপমিতে সমস্যমান পদে ন্যায় বসে। যদি তুলনামূলক শব্দ অর্থাৎ ‘মতো/ন্যায়’ থাকে তাহলে শব্দের শেষে বসে। রূপকে সমস্যমান পদে ‘রূপ’ বসে। ‘রূপ’ শব্দটি দুটি শব্দের মাঝে বসে।
৬. নমুনায় দেখা যায়, উপমান : তুষারশ্রুভ্র—তুষারের ন্যায়/মতো শুভ্র। উপমিত : মুখচন্দ্র—মুখ চন্দ্রের ন্যায়/মতো। রূপক : মনমাঝি—মনরূপ মাঝি।
অলুক দ্বন্দ্ব সমাস, অলুক তৎপুরুষ সমাস ও অলুক বহুব্রীহি সমাসের মধ্যে পার্থক্য
অলুক অর্থ লোপ হয় না এমন। যে সমাসে পূর্বশব্দের বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক সমাস বলে। তিনটি সমাসেই অলুকসমাস হয়। যেমন:
১. যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব সমাসবলে। আর যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বশব্দের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। আর যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বশব্দের বা পরশব্দের কোন পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে।
২. নমুনায় দেখা যায়, অলুক দ্বন্দ্ব সমাস : দুধেভাতে—দুধে ও ভাতে। হাতেকলমে—হাতে ও কলমে। অলুক তৎপুরুষ সমাস : ঘিয়েভাজা—ঘিয়ে ভাজা। গায়েপড়া—গায়ে পড়া। অলুক বহুব্রীহি : কানেখাটো —কানে খাটো যে। মাথায়পাগড়ি—মাথায় পাগড়ি যার।
সমাসের প্রকরণ
পাণিনি থেকে সুনীতিকুমার পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক ব্যাকরণবিদ সমাসের সংজ্ঞা, গঠন বা প্রকৃতি অনুসারে সমাসকে ৬ প্রকার দেখিয়েছেন। তবে সমাসের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাঁরা এক সমাসের মধ্যে আরেক সমাস লিপিবদ্ধ করেছেন। যেমন:
প্রধানত | মূলসমাসের অন্তর্ভুক্ত সমাস | অর্থপ্রধান সমাস |
১. দ্বন্দ্ব সমাস ২. দ্বিগু সমাস ৩. কর্মধারয় সমাস ৪. তৎপুরুষ সমাস ৫. অব্যয়ীভাব সমাস ৬. বহুব্রীহি সমাস | ১. নিত্যসমাস ২. প্রাদিসমাস ৩. একদেশি সমাস ৪. নং/নঞ সমাস ৫. অলুক সমাস ৬. নিপাতনে সমাস ৭. সংখ্যাবাচক সমাস ৮. বহুপদী সমাস ৯. একশেষ সমাস ১০. উপপদ সমাস | ১. উভয়পদের অর্থপ্রধান সমাস-দ্বন্দ্ব সমাস ২. তৃতীয়া পদের অর্থপ্রধান সমাস-দ্বন্দ্ব সমাস ৩. পূর্বপদের অর্থপ্রধান সমাস-অব্যয়ীভাব ৪. উত্তর ও পরপদের অর্থপ্রধান সমাস -তৎপুরুষ সমাস, কর্মধারয় সমাস, দ্বিগু |
প্রতিটি সমাসের সংজ্ঞা, গঠন ও নমুনা দেয়া হলো :
দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বন্দ্ব সমাস অর্থ ঝগড়া-বিবাদ কিন্তু সমাসে দ্বন্দ্ব সমাস অর্থ জোড়া/দ্বিত্ব। দ্বন্দ্ব সমাসকরতে দুটি বিশেষ্যর মাঝে ‘ও/আর’ বসে। ‘এবং’ বসে না কারণ ‘এবং’ শব্দ ও শব্দ নয়-বাক্য ও বাক্য জোড়া লাগাতে প্রয়োজন হয়। যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থ প্রায় সমান বা অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাসবলে। অথবা ‘ও, আর’ ইত্যাদি যোজকযুক্ত ব্যাসবাক্যকে দ্বন্দ্ব সমাসবলে। একই জাতীয় শব্দ ‘ও, আর’ দিয়ে যুক্ত করা হয়।
দ্বন্দ্ব সমাসের নিয়ম
১. একই অর্থবোধক দুটি শব্দকে একটি শব্দ করা হয় তবে মাঝে হাইফেন লাগে। যেমন: মা ও বাবা —মা-বাবা।
২. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে বিশেষ্য। বিশেষ্য+বিশেষ্য। যেমন: ছেলে ও মেয়ে—ছেলে-মেয়ে/ ছেলেমেয়ে।
৩. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে সর্বনাম। সর্বনাম+সর্বনাম। যেমন: তুমি ও আমি—তুমি-আমি।
৪. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে বিশেষণ। বিশেষণ+বিশেষণ। যেমন: ভালো ও মন্দ—ভালো-মন্দ।
৫. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে ক্রিয়া। ক্রিয়া+ক্রিয়া। যেমন: লেখা ও পড়া—লেখা-পড়া।
৬. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই ক্রিয়াবিশেষণ হবে। ক্রিয়াবিশেষণ+ক্রিয়াবিশেষণ। যেমন: আগে ও পিছে, ধীরে ও সুস্থে।
দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকরণ
১. মিলনার্থক (অভিন্ন সম্পর্ক): মা-বাবা—মা ও বাবা, মাবাপ—মা ও বাপ, দুধভাত—দুধ ও ভাত, সোনারুপা—সোনা ও রুপা, ভাইবোন—ভাই ও বোন, নানা-নানি—নানা ও নানি, দাদা-দাদি—দাদা ও দাদি, খালা-খালু—খালা ও খালু, চোর ডাকাত—চোর ও ডাকাত, গরু ছাগল—গরু ও ছাগল।
২. সমার্থক (একই অর্থবোধক দুটি শব্দ): ঘরবাড়ি—ঘর ও বাড়ি, চিঠিপত্র—চিঠি ও পত্র, হাটবাজার—হাট ও বাজার, ধনদৌলত—ধন ও দৌলত, কাজকর্ম—কাজ ও কর্ম, পথঘাট—পথ ও ঘাট।
৩. সহচর (পরস্পর পরস্পরের সহচর): দয়ামায়া—দয়া ও মায়া, ছলচাতুরি—ছল ও চাতুরি, জামাকাপড়—জামা ও কাপড়, কালপরশু—কাল ও পরশু।
৪. অনুচর (পরস্পর পরস্পরের অনুচর/দ্বিতীয়া পদ অর্থহীন): দোকানপাট—দোকান ও পাট, কাপড়চোপড়—কাপড় ও চোপড়, হাতটাত—হাত ও টাত, ভুলটুল—ভুল ও টুল।
৫. বিরোধার্থক (বৈরিভাব অর্থবোধক দুটি শব্দ): অহীনকুল—অহি ও নকুল, স্বর্গনরক—স্বর্গ ও নরক।
৬. বিপরীতার্থক (বিপরীত অর্থবোধক দুটি শব্দ/ বিশেষণ): দিনরাত—দিন ও রাত, ছেলেমেয়ে—ছেলে ও মেয়ে, জমাখরচ—জমা ও খরচ, ভালোমন্দ—ভালো ও মন্দ, টকমিষ্টি—টক ও মিষ্টি।
৭. বহুশব্দ: এখানে ‘এবং’ বসে না। সব ব্যাকরণ বইতে ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দকে জোড়া লাগাতে ‘ও’ বসে ‘এবং’ বসে না। ‘এবং’ বসে বাক্যকে জোড়া লাগাতে। যেমন : ইট, বালি, সিমেন্ট, শুরকি—ইট, বালি, সিমেন্ট ও শুরকি। সাহেব, বিবি, গোলাম—সাহেব, বিবি ও গোলাম।
৮. অলুক (এ বিভক্তিলোপহীন শব্দ): দুধেভাতে—দুধে ও ভাতে, জলেস্থলে—জলে ও স্থলে, কোলেপিঠে—কোলে ও পিঠে, তেলেবেগুনে—তেলে ও বেগুনে, মায়েঝিয়ে—মায়ে ও ঝিয়ে, পথেঘাটে—পথে ও ঘাটে।
৯. সংখ্যাবাচক: বিশপঁচিশ—বিশ ও পঁচিশ, সাতসতের—সাত ও সতের, দশবারো—দশ ও বারো, সাতপাঁচ—সাত ও পাঁচ, সত্তরআশি—সত্তর ও আশি।
১০. একশেষ (দুই/অধিক সর্বনাম মিলে একসর্বনাম হয়): তোমরা—তুমি ও সে, আমরা—আমি, তুমি ও সে।
১১. অঙ্গবাচক: হাতপা—হাত ও পা, নাকমুখ—নাক ও মুখ, মাথামুণ্ডু—মাথা ও মুণ্ডু।
১২. দুটি সর্বনাম: যাতা—যা ও তা, তুমি-আমি—তুমি ও আমি, যেসে—যে ও সে, এখানে-সেখান—এখানে ও সেখানে, যথাতথা—যথা ও তথা।
১৩. দুটি বিশেষণ: ভালোমন্দ—ভালো ও মন্দ, কমবেশি—কম ও বেশি, আসলনকল—আসল ও নকল, বাকিবকেয়া—বাকি ও বকেয়া।
১৪. দুটি ক্রিয়া: দেখাশোনা—দেখা ও শোনা, যাওয়াআসা—যাওয়া ও আসা, চলাফেরা—চলা ও ফেরা, আসাযাওয়া—আসা ও যাওয়া।
১৫. দুটি ক্রিয়াবিশেষণ: ধীরেসুস্থে—ধীরে ও সুস্থে, আগেপিছে—আগে ও পিছে, আকারে-ইঙ্গিতে—আকারে ও ইঙ্গিতে, আস্তে আস্তে—আস্তে ও আস্তে।
দ্বন্দ্ব সমাসের গাণিতিক গঠন
সমাস শব্দশ্রেণির উপর নির্ভরশীল তাই প্রতিটি সমাসের গাণিতিক গঠন জানা প্রয়োজন।
১. পূর্বপদ +ও/আর + পরপদ = দ্বন্দ্ব সমাস
২. বিশেষ্য +ও/আর + বিশেষ্য = দ্বন্দ্ব সমাস
৩. সর্বনাম +ও/আর + সর্বনাম = দ্বন্দ্ব সমাস
৪. বিশেষণ +ও/আর + বিশেষণ = দ্বন্দ্ব সমাস
৫. ক্রিয়া +ও/আর + ক্রিয়া = দ্বন্দ্ব সমাস
৬. ক্রিয়াবিশেষণ+ও/আর+ ক্রিয়াবিশেষণ = দ্বন্দ্ব সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
অত্যাচার অবিচার অত্যাচার ও অবিচার দ্বন্দ্ব সমাস
দয়ামায়া দয়া ও মায়া দ্বন্দ্ব সমাস
অহিনকুল অহি ও নকুল দ্বন্দ্ব সমাস
দেখাশুনা দেখা ও শুনা দ্বন্দ্ব সমাস
আজকাল আজ ও কাল দ্বন্দ্ব সমাস
সাহেব-বিবি-গোলাম সাহেব, বিবি ও গোলাম দ্বন্দ্ব সমাস
আমরা তুমি, আমি ও সে নিত্য সমাস
বাকবিতণ্ডা বাক ও বিতণ্ডা নিত্য সমাস
কাজকর্ম কাজ ও কর্ম দ্বন্দ্ব সমাস
ভালোমন্দ ভালো ও মন্দ দ্বন্দ্ব সমাস
গণ্যমান্য গণ্য ও মান্য দ্বন্দ্ব সমাস
মৃদুমন্দ মৃদ ও মন্দ দ্বন্দ্ব সমাস
জনমানব জন ও মানব দ্বন্দ্ব সমাস
সাপে নেউলে সাপে ও নেউলে দ্বন্দ্ব সমাস
জমাখরচ জমা ও খরচ দ্বন্দ্ব সমাস
সাত সতের সাত ও সতের দ্বন্দ্ব সমাস
তরুলতা তরু ও লতা দ্বন্দ্ব সমাস
সৈন্যসামন্ত সৈন্য ও সামন্ত দ্বন্দ্ব সমাস
দশ-বার দশ ও বার দ্বন্দ্ব সমাস
রক্তমাংস রক্ত ও মাংস দ্বন্দ্ব সমাস
দুধেভাতে দুধে ও ভাতে অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
লেনদেন লেন ও দেন অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
দুধ-ভাত/দুধভাত দুধ ও ভাত অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
হিতাহিত হিত ও অহিত অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
দম্পতি দম/জায়া ও পতি দ্বন্দ্ব সমাস
তোমরা সে ও তুমি দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বিগু সমাস
সংখ্যাবাচক শব্দ ও বিশেষ্য মিলে যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। ‘অ-কার’ হলে ‘এর আর ‘আ/ই/উ-কার’ থাকলে ‘র’ বসে।
দ্বিগু সমাসের গাণিতিক গঠন
১. সংখ্যা+ বিশেষ্য+র/এর+ সমাহার = দ্বিগু সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
দ্বিরত্ন দ্বি/দুই রত্নের সমাহার দ্বিগু সমাস
ত্রিফলা ত্রি/তিন ফলের সমাহার দ্বিগু সমাস
ত্রিলক ত্রি/তিন লোকের সমাহার দ্বিগু সমাস
ত্রিরত্ন ত্রি/তিন রত্নে সমাহার দ্বিগু সমাস
ত্রিভুবন ত্রি/তিন ভুবনের সমাহার দ্বিগু সমাস
ত্রিভুজ ত্রি ভুজের সমাহার দ্বিগু সমাস
তেপান্তর তে/তিন প্রান্তরের সমাহার দ্বিগু সমাস
চৌরাস্তা চৌ/চার রাস্তার সমাহার দ্বিগু সমাস
চৌমুহনী চৌ/চার মোহনার সমাহার দ্বিগু সমাস
চতুর্ভুজ চৌ/চার ভুজের সমাহার দ্বিগু সমাস
চতুষ্পদ চার পায়ের সমাহার দ্বিগু সমাস
চতুর্দশপদী চতুর্দশ/চৌদ্দ পদের সমাহার দ্বিগু সমাস
পঞ্চনদ পঞ্চ/পাঁচ নদের সমাহার দ্বিগু সমাস
ষড়ঋতু ষড়/ছয় ঋতুর সমাহার দ্বিগু সমাস
ষড়ভুজ ষড়/ছয় ভুজের/বাহুর সমাহার দ্বিগু সমাস
সপ্তাহ সপ্ত অহের সমাহার দ্বিগু সমাস
সেতার সে/তিন তারের সমাহার দ্বিগু সমাস
সপ্তর্ষি সপ্ত ঋষির সমাহার দ্বিগু সমাস
সাতসমুদ্র সাত সমুদ্রের সমাহার দ্বিগু সমাস
নবরত্ন নব রত্নের সমাহার দ্বিগু সমাস
শতাব্দী শত অব্দের সমাহার দ্বিগু সমাস
কর্মধারয় সমাস
বিশেষণ ও বিশেষ্য মিলে যে সমাস হয় এবং পরপদ প্রধান থাকে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। অথবা যে যা, যা—তা, যিনি—তিনি, যে—সে, যেই—সেই, মতো/ন্যায়, রূপ ইত্যাদি যোগে যে সমাস গঠিত হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। কর্মধারয় সমাসে বিশেষ্য বিশেষণ হয়। যেমন: সুন্দরী থাকলে সুন্দর হয়—সুন্দরী যে লতা—সুন্দরলতা। মহান থাকলে মহা হয়—মহান যে নবি—মহানবি। শেষে রাজা থাকলে রাজ হয়—মহান যে রাজা—মহারাজ। রাত্রি থাকলে রাত হয়—দীর্ঘ যে রাত্রি—দীর্ঘরাত। কু থাকলে কদা হয়—কু যে আকার = কদাকার। অহ থাকলে আন হয়—পূর্ব যে অহ্ণ—পূর্বাহ্ণ।
কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক গঠন
১. বিশেষণ+যে+বিশেষ্য = কর্মধারয় সমাস
অথবা বিশেষ্য+যে+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
২. বিশেষ্য +বিশেষ্য +যে = কর্মধারয় সমাস
৩. যা+ বিশেষণ+তাই+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
৪. যে+বিশেষণ+ সে/সেই+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
৫. যে+বিশেষ্য+সেই+ বিশেষ্য = কর্মধারয় সমাস
অথবা যে+বিশেষণ+সেই+ বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
৬. যিনি+বিশেষ্য+তিনি+বিশেষ্য = কর্মধারয় সমাস
৭. বিশেষ্য+চিহ্নিত/মিশ্রিত/বিষয়ক/রক্ষার্থে/মাখা/+বিশেষ্য = মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
৮. বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায়+বিশেষণ = উপমান কর্মধারয় সমাস
৯. বিশেষ্য+বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায় = উপমিত কর্মধারয় সমাস
১০. বিশেষণ (বিশেষ্য-বিশেষণ অর্থ প্রকাশ পায়)+রূপ+বিশেষ্য= রূপক কর্মধারয় সমাস
নমুনা
১. বিশেষণ+যে+বিশেষ্য—কর্মধারয় সমাস অথবা বিশেষ্য+যে+বিশেষণ= কর্মধারয় সমাস
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
মহানবি মহান যে নবি কর্মধারয় সমাস
অত্যাচার অতি যে আচার কর্মধারয় সমাস
নীলপদ্ম নীল যে পদ্ম কর্মধারয় সমাস
ক্রীতদাস ক্রীত যে দাস কর্মধারয় সমাস
সুন্দরিলতা/সুন্দরলতা সুন্দর যে লতা কর্মধারয় সমাস
গিন্নিমা গিন্নি যে মা কর্মধারয় সমাস
মহার্কীতি মহান যে র্কীতি কর্মধারয় সমাস
নবপৃথিবী নব যে পৃথিবী কর্মধারয় সমাস
মহাজ্ঞানী মহান যে জ্ঞনী কর্মধারয় সমাস
নবযৌবন নব যে যৌবন কর্মধারয় সমাস
মহারাজ মহান যে রাজা কর্মধারয় সমাস
নীলপদ্ম নীল যে পদ্ম কর্মধারয় সমাস
কদাকার কু যে আকার কর্মধারয় সমাস
কুদর্থ কু যে অর্থ কর্মধারয় সমাস
মহাপৃথিবী মহা যে পৃথিবী কর্মধারয় সমাস
পূর্বাহ্ণ পূর্ব যে অহ্ণ কর্মধারয় সমাস
মহাজন মহান যে জন কর্মধারয় সমাস
আলুসিদ্ধ সিদ্ধ যে আলু কর্মধারয় সমাস
ষড়যন্ত্র ষট যে যন্ত্র কর্মধারয় সমাস
নরাধম অধম যে নর কর্মধারয় সমাস
সজ্জন সৎ যে জন কর্মধারয় সমাস
২. বিশেষ্য +বিশেষ্য +যে = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
গল্পপ্রেমিক গল্প প্রেমিক যে কর্মধারয় সমাস
প্রিয়ংবদা প্রিয়ং বদা যে
/প্রিয় বাক্য বলে যে কর্মধারয় সমাস
৩. যা+ বিশেষণ+তাই+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
কাঁচামিঠা যা কাঁচা তাই মিঠা কর্মধারয় সমাস
মিঠাকড়া যা মিঠা তাই কড়া কর্মধারয় সমাস
ন্যায়সঙ্গত যা ন্যায় তাই সঙ্গত কর্মধারয় সমাস
৪. যে+বিশেষণ+ সে/সেই+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
মান্যগণ্য যে মান্য সে গণ্য কর্মধারয় সমাস
শান্ত শিষ্ট যে শান্ত সেই শিষ্ট কর্মধারয় সমাস
৫. যে+বিশেষ্য+সেই+বিশেষ্য—কর্মধারয় সমাস অথবা যে+বিশেষণ+সেই+বিশেষণ=কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
বটবৃক্ষ যে বট সেই বৃক্ষ কর্মধারয় সমাস
চালাকচতুর যে চালাক সেই চতুর কর্মধারয় সমাস
৬. যিনি+বিশেষ্য+তিনি+বিশেষ্য = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
কবিধ্যানী যিনি কবি তিনি ধ্যানী কর্মধারয় সমাস
গিন্নিমা যিনি গিন্নি তিনি মা কর্মধারয় সমাস
জজসাহেব যিনি জজ তিনি সাহেব কর্মধারয় সমাস
৭. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস : যে কর্মধারয় সমসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী সমাস বলে।
বিশেষ্য+চিহ্নিত/মিশ্রিত/বিষয়ক/রক্ষার্থে/মাখা/+বিশেষ্য =মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
পলান্ন পল মিশ্রিত অন্ন মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জয়মুকুট জয় লব্ধ মুকুট মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
সিংহাসন সিংহ চিহ্নিত আসন মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জয়পতাকা জয়সূচক পতাকা মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
সাহিত্যসভা সাহিত্য বিষয়ক সভা মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ধর্মঘট ধর্ম রক্ষার্থে ঘট মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
স্মৃতিসৌধ স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ধর্মকার্য ধর্ম বিহিত কার্য মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
আয়কর আয়ের ওপর কর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
মৌমাছি মৌ আশ্রিত মাছি মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
অষ্টাদশ অষ্ট অধিক দশ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
সন্ধ্যাপ্রদীপ সন্ধ্যায় জ্বলানো
হয় যে প্রদীপ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মকর্তা কর্মের কর্তা মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
খেয়াতরী খেয়া পারাপারের তরী মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
হাঁটুজল হাঁটু পরিমাণ জল মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জ্যোস্নারাত জ্যোৎস্না স্নাতরাত মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
আয়কর আয়ের ওপর কর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জীবনবীমা জীবনরক্ষার্থে বীমা মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
পানাপুকুর পানাভর্তি পুকুর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
৮. বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায়+বিশেষণ = উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় থাকলে এবং একটি বিশেষ্য ও অপরটি বিশেষণ পদ হলে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
কুসুমকোমল কুসুমের মতো/ন্যায় কোমল উপমান কর্মধারয় সমাস
কচুকাটা কচুর মতো কাটা উপমান কর্মধারয় সমাস
তুষারশুভ্র তুষারের ন্যায় শুভ্র উপমান কর্মধারয় সমাস
কাজলকাল কাজলের ন্যায় কাল উপমান কর্মধারয় সমাস
তুষারশীতল তুষারের ন্যায় শীতল উপমান কর্মধারয় সমাস
অগ্নিশর্মা অগ্নি ন্যায় শর্মা উপমান কর্মধারয় সমাস
অরুণরাঙা অরুণের ন্যায়রাঙা উপমান কর্মধারয় সমাস
শশব্যস্ত শশকের ন্যায় ব্যস্ত উপমান কর্মধারয় সমাস
৯. বিশেষ্য+বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায় = উপমিত কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদের সঙ্গে উপমান পদের সমাস হলে এবং উভয়ের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বজায় না থাকলে এবং দুটি পদই বিশেষ্য হলে তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
মুখচন্দ্র মুখ চন্দ্রের মতো/ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
ফুলকুমারী কুমারী ফুলের ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
সিংহপুরুষ পুরুষ সিংহের ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
রক্তকমল কমলরক্তের ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
করপল্লব কর পল্লবের ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
ওলকপি ওল কপির ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
বজ্রকণ্ঠ কণ্ঠ বজ্রের ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
চাঁদমুখ মুখ চাঁদের ন্যায় উপমিত কর্মধারয় সমাস
১০. বিশেষণ (বিশেষ্য থাকলেও বিশেষণ অর্থ প্রকাশ পায়)+রূপ+বিশেষ্য = রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমান ও উপমেয় শব্দের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
মনমাঝি মনরূপ মাঝি রূপক কর্মধারয় সমাস
মোহনিদ্রা মোহরূপ নিদ্রা রূপক কর্মধারয় সমাস
ক্রোধানল ক্রোধরূপ অনল রূপক কর্মধারয় সমাস
যৌবনসূর্য যৌবনরূপ সূর্য রূপক কর্মধারয় সমাস
বিষাদসিন্ধু বিষাদরূপ সিন্ধু রূপক কর্মধারয় সমাস
শোকানল শোকরূপ অনল রূপক কর্মধারয় সমাস
কালসিন্ধু কালরূপ সিন্ধু রূপক কর্মধারয় সমাস
জীবননদী জীবনরূপ নদী রূপক কর্মধারয় সমাস
দিলদরিয়া দিলরূপ দরিয়া রূপক কর্মধারয় সমাস
মনবিহঙ্গ মনরূপ বিহঙ্গ রূপক কর্মধারয় সমাস
পরানপাখি পরানরূপ পাখি রূপক কর্মধারয় সমাস
তৎপুরুষ সমাস
বিভক্তি যোগে যে সমাস হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। অথবা যে সমাসে পূর্বশব্দে বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদ প্রধান থাকে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক গঠন
১. বিশেষ্য (বস্তুবাচক/ব্যক্তি)+কে/ব্যাপিয়া +বিশেষ্য = দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
২. বিশেষ্য+দ্বারা/দিয়ে/কর্তৃক+বিশেষ্য = তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
৩. বিশেষ্য+জন্য/নিমিত্ত+বিশেষ্য = চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
৪. বিশেষ্য+হতে/থেকে/চেয়ে+বিশেষ্য = পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
৫. বিশেষ্য +র/এর+বিশেষ্য = ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
৬. বিশেষ্য+এ/তে/য়+বিশেষ্য = সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
৭. বিশেষ্য+বিশেষ্য (বিভক্তি লোপ পায় না) = অলুক তৎপুরুষ সমাস
৮. ন /নাই /নয় (অ/অন/বে/না/নি/গর)+বিশেষ্য = নং/নঞ তৎপুরুষ সমাস
৯. বিশেষ্য+এ বিভক্তি+ক্রিয়া+যে = উপপদ তৎপুরুষ সমাস
১. বিশেষ্য (বস্তুবাচক/ব্যক্তি)+কে/ব্যাপিয়া +বিশেষ্য = দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
গুরুভক্তি গুরুকে ভক্তি দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
প্রাণবধ প্রাণকে বধ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
বিপদাপন্ন বিপদকে আপন্ন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
ভরাপর্ণ ভরাকে অপর্ণ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
বিষয়াপন্ন বিষয়কে আপন্ন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
রাজদত্ত রাজাকে প্রদত্ত দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
অতিথি সৎকার অতিথিকে সৎকার দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
রথচালন রথকে চালন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
আমকুড়ানো আমকে কুড়ানো দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
চিরসুখ চিরকাল ব্যাপিয়া সুখ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
জলসেচন জলকে সেচন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
প্রাণবধ প্রাণকে বধ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
দেশভঙ্গ দেশকে ভঙ্গ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
নবীনবরণ নবীনকে বরণ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
২. বিশেষ্য+দ্বারা/দিয়ে/কর্তৃক+বিশেষ্য = তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
রাজদত্ত রাজা কর্তৃক দত্ত তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
ছায়াশীতল ছায়া দ্বারা শীতল তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
মনগড়া মন দিয়ে/দ্বারা গড়া তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পদদলিত পদ/পা দ্বারা দলিত তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
ঘিয়েভাজা ঘি দিয়ে/দ্বারা ভাজা তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
মেঘলুপ্ত মেঘ দ্বারা লুপ্ত তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
৩. বিশেষ্য+জন্য/নিমিত্ত+বিশেষ্য = চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
বালকবিদ্যালয় বালকদের নিমিত্ত বিদ্যালয় চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
দেবদত্ত দেবকে দত্ত চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
ছাত্রাবাস ছাত্রদের জন্য আবাস চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
বিপ্লব-অভিজান বিপ্লবের জন্য অভিজান চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
খেয়াঘাট খেয়া পারের নিমিত্ত ঘাট চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
বিয়েপাগলা বিয়ের জন্য পাগলা চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
তপবন তপের জন্য বন চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
৪. বিশেষ্য+হতে/থেকে/চেয়ে+বিশেষ্য = পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
বিলাতফেরত বিলাত থেকে ফেরত পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
মুখভ্রষ্ট মুখ থেকে ভ্রষ্ট পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
প্রাণপ্রিয় প্রাণের চেয়ে প্রিয় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
পথভ্রষ্ট পথ থেকে ভ্রষ্ট পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
দেশপলাতক দেশ থেকে পলাতক পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
ধর্মভ্রষ্ট ধর্ম থেকে ভ্রষ্ট পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
দেশত্যাগ দেশ থেকে ত্যাগ পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
সমাজভ্রষ্ট সমাজ থেকে ভ্রষ্ট পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
৫. বিশেষ্য +র/এর+বিশেষ্য = ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
রাজপুত্র রাজার পুত্র ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গৃহকর্তী গৃহের কর্তী ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মাতৃস্নেহ মাতার স্নেহ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গণতন্ত্র গণের তন্ত্র ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ছাগদুগ্ধ ছাগীর দুগ্ধ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
চাবাগান চায়ের বাগান ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আকাশবাণী আকাশের বাণী ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ঝরনাধারা ঝরনার ধারা ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আকাশপথ আকাশের পথ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
প্রাণভয় প্রাণের ভয় ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
জীবনপ্রদীপ জীবনের প্রদীপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পুষ্পসৌরভ পুষ্পের সৌরভ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
তমাললতা তমালের লতা ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বিধিলিপি বিধির লিপি ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পৃষ্ঠপ্রদর্শন পৃষ্ঠের প্রদর্শন ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
কবিগুরু কবিদের গুরু ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বাক্যান্তর বাক্যের অন্তর ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ভুজবল ভুজের/হাতের বল ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বনমধ্যে বনের মধ্যে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মার্তণ্ডপ্রায় মার্তণ্ডের প্রায় ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বজ্রসম বজ্রের সম ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মমতারস মমতারস ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মামাবাড়ি মামার বাড়ি ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজপথ পথেররাজা ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মৃগশিশু মৃগের শিশু ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজদণ্ড রাজার দণ্ড ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মৌমাছি মৌয়ের মাছি ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজহংস রাজার হংস ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
যৌবনবেগ যৌবনের বেগ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজনীতি রাজার নীতি ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আমগাছ আমের গাছ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
সুখসময় সুখের সময় ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আকাশগঙ্গা আকাশের গঙ্গা ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
৬. বিশেষ্য+এ/তে/য়+বিশেষ্য = সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
অকালপক্ব অকালে পক্ব সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
বনভোজন বনে ভোজন সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
গাছপাকা গাছে পাকা সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
রথারোহণ রথে আরোহণ সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
অকালমৃত্যু অকালে মৃত্যু সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
শোকার্ত শোকে আর্ত সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
শ্রুতিকটু শ্রুতিতে কটু সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
স্বাভাবসিদ্ধ স্বভাবে সিদ্ধ সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যায় গরিষ্ঠ সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
৭. বিশেষ্য+বিশেষ্য (বিভক্তি লোপ পায় না) = অলুক তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
গানের আসর গানের আসর অলুক তৎপুরুষ সমাস
সোনার বাংলা সোনার বাংলা অলুক তৎপুরুষ সমাস
সোনার প্রতিমা সোনার প্রতিমা অলুক তৎপুরুষ সমাস
তেলেভাজা তেলেভাজা অলুক তৎপুরুষ সমাস
খেলার মাঠ খেলার মাঠ অলুক তৎপুরুষ সমাস
চোখের বালি চোখের বালি অলুক তৎপুরুষ সমাস
ঘোড়ার গাড়ি ঘোড়ার গাড়ি অলুক তৎপুরুষ সমাস
কুলুর বলদ কুলুর বলদ অলুক তৎপুরুষ সমাস
৮. ন /নাই /নয় (অ/অন/বে/না/নি/গর)+বিশেষ্য = নঞ /নং তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
নিখরচ নাই খরচ নঞ তৎপুরুষ সমাস
অবিচার নয় বিচার নঞ তৎপুরুষ সমাস
গরহাজির ন হাজির নঞ তৎপুরুষ সমাস
অপর্যাপ্ত নয় পর্যাপ্ত নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেহিসেব নয় হিসেব নঞ তৎপুরুষ সমাস
অকাতর নয় কাতর নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাচার ন আচার নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাসক্ত নয় আসক্ত নঞ তৎপুরুষ সমাস
অক্ষত/অনেক নয় ক্ষত/নয় এক নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনৈক্য নয় ঐক্য নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাশ্রিত নয় আশ্রিত নঞ তৎপুরুষ সমাস
আধোয়া নয় ধোয়া নঞ তৎপুরুষ সমাস
অসত্য নয় সত্য নঞ তৎপুরুষ সমাস
নামঞ্জুর নয় মঞ্জুর নঞ তৎপুরুষ সমাস
অবিশ্বাস্য নয় বিশ্বাসযোগ্য নঞ তৎপুরুষ সমাস
বিমনা নয় মনা নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনতিবৃহৎ নয় অতিবৃহৎ নঞ তৎপুরুষ সমাস
নিরর্থক নাই অর্থ যার নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাচার নয় আচার নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেতার নাই তার যার নঞ তৎপুরুষ সমাস
অস্থির নয় স্থির নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেওয়ারিশ নাই ওয়ারিশ যার নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনশন নয় অশন নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেহিসেবি নাই হিসেব যার নঞ তৎপুরুষ সমাস
৯. বিশেষ্য+এ বিভক্তি+ক্রিয়া+যে =উপপদ তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
জাদুকর জাদু করে যে উপপদ তৎপুরুষ সমাস
ইন্দ্রজিৎ ইন্দ্রকে জয় করেছে যে উপপদ তৎপুরুষ সমাস
পকেটমার পকেট মারে যে উপপদ তৎপুরুষ সমাস
গৃহস্থ গৃহে অস্থ/স্থায়ী উপপদ তৎপুরুষ সমাস
জলচর জলে চরে যে উপপদ তৎপুরুষ সমাস
ক্ষণজীবী ক্ষণসময় বাঁচে যে উপপদ তৎপুরুষ সমাস
অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয়ী ভাব সমাসের পূর্বপদ প্রধান থাকে আর পরপদের কথার মিল রেখে অতিরিক্ত শব্দ/পদ বসে যা উপসর্গে গঠিত হয়।
সমাসের গাণিতিক গঠন
বিশেষ্য+র/এর /কে+সামীপ্য/সমীপে /সাদৃশ্য /সদৃশ /অভাব অযোগ্য /পর্যন্ত/হতে /যোগ্য/সম্মুখ /সামনে /অতিক্রম না করে /পশ্চাৎ /ঈষৎ/দ্বিত্ব বিশেষ
বিশেষ্য+র/এর /কে +
সামীপ্য/সমীপেউপ | : বনের সমীপে —উপবন | উপকণ্ঠ |
সাদৃশ্য /সদৃশ উপ প্রতি প্রতি | : ভাষার সদৃশ —উপভাষা : ছবির সদৃশ —প্রতিচ্ছবি : দানের বদলে দান—প্রতিদান | উপজেলা |
অভাব আ গর দু নি বে বি হা | : লবনের /নুনের অভাব —আলুনি : মিলের অভাব —গরমিল : ভিক্ষার অভাব —দুর্ভিক্ষ : আমিষের অভাব —নিরামিষ : কারের অভাব —বেকার, বেমানান : শ্রীর অভাব —বিশ্রী : ভাতের অভাব —হাভাত | উচ্ছৃঙ্খল বিশ্রী হাভাতে অনৈক্য নির্বিঘ্ন, আলুনি, বেহিসেবি |
পর্যন্ত আ | : মৃত্যু পর্যন্ত —আমরণ : পা থেকে মাথা পর্যন্ত —আপাদমস্তক | আমূল, আকর্ণ |
হতে আ | : জন্ম হতে —আজন্ম | |
যোগ্য অ | : রূপের যোগ্য —অনুরূপ অযোগ্য : নিবারণের অযোগ্য —অনিবার্য | |
সম্মুখ/সামনে প্র | : অক্ষির সম্মুখ/চোখের সামনে —প্রত্যক্ষ অতিক্রম না করে যথা : রীতিকে অতিক্রম না করে —যথারীতি /শক্তিকে অতিক্রম না করে —যথাশক্তি /বেলাকে (তীর) অতিক্রম করে —উদ্বেল | যথাসাধ্য, যথাবিধি, যথারীতি অতিমাত্রা উচ্ছ্বাস (শ্বাসকে) |
পশ্চাৎ অনু | : পশ্চাৎ ধাবন —অনুধাবন | অনুগমন |
ঈষৎ | : ঈষৎ ঘোল —ঘোলাটে | |
দ্বিত্ব বিশেষ্য প্রতি হর ফি | : দিন দিন —প্রতিদিন : রোজ রোজ —হররোজ : বছর বছর —ফিবছর | প্রতিক্ষণ |
বহুব্রীহি সমাস
‘বহুব্রীহি’ শব্দটির অর্থ হলো বহু আছে ব্রীহি যার অর্থাৎ অনেক ধান আছে যার। বহু অর্থ অনেক আর ব্রীহি অর্থ ধান=অনেক ধান। কিন্তু সমাসে এর অর্থ অনেক সম্পদের মালিক। যে সমাসে তৃতীয়া পদের অর্থপ্রাধান্য পায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। অথবা ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর নামপ্রধান সমাসকে বহুব্রীহি সমাস বলে। অথবা যে সমাসের সমস্যমান শব্দগুলোর নির্দিষ্ট কোন অর্থ না বুঝিয়ে তৃতীয়া অর্থপ্রধান শব্দকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
ব্যাকরণে সমাসের ক্ষেত্রে অর্থাৎ একাধিক শব্দ একশব্দে পরিণত করা অর্থাৎ সংক্ষিপ্তকরণের প্রসঙ্গে বহুব্রীহি শব্দটির ব্যবহার হয়। যেমন: নীল কণ্ঠ যার-নীলকণ্ঠ। এখানে নীল অর্থাৎ ‘বিষ’ কণ্ঠে যার তাকেই অর্থাৎ শিবকে বোঝানো হয়েছে। ‘নীল’ বা ‘কণ্ঠ’ কোন শব্দের অর্থের প্রাধান্য না হয়ে তৃতীয়া একটি শব্দ শিবকে বোঝানো হয়েছে। ‘নীল কণ্ঠ যার’ না বলে একটি শব্দ ‘নীলকণ্ঠ’ বলে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়েছে। ‘যার’ শেষে বসে। ব্যতিহার (দ্বিত্বক্রিয়া)—‘যে’ মাঝে বসে। মধ্যপদলোপী ‘যে’ মাঝে বসে। ‘সহ’ প্রথমে পৃথকভাবে আর পদের শেষে ‘সহ’ একসঙ্গে বসে।
বহুব্রীহি সমাসের ব্যতিক্রম ব্যবহার
১. সমাসজাত শব্দের আগে ‘স’ যোগ হয় যদি পূর্বশব্দে সহ বা সহিত থাকে। যেমন: বান্ধবসহ বর্তমান=সবান্ধব, সহ উদর যার—সহোদর।
২. সমাসজাত শব্দের পরে ‘ক’ যোগ হয় যদি পরশব্দে মাতৃ, পুত্র, স্ত্রী থাকলে। যেমন: নদী মাতৃ/মাতা যার—নদী মাতৃক, ‘বি’ হয়েছে পত্নী যার—বিপত্নীক, স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান—সস্ত্রীক।
৩. সমাসজাত শব্দের পরে ‘লা’ বসে যোগ হয় যদি পরপদে ‘অ’ থাকে আবার নাভ যোগ হয় যদি নাভি থাকে। মাতৃ, পুত্র, স্ত্রী থাকলে। যেমন: পদ্ম নাভিতে যার—পদ্মনাভ।
৪. যুবতী স্থলে যুব আর জায়া স্থলে জানি হয়। যেমন: যুবতী জায়া যার—যুবজানি।
৫. পূর্বপদ ও পরপদ একই থাকতে পারে তবে স্ব স্ব সমাসে শব্দ যোগ করে সেই সমাস গঠন করা যায়। যেমন: দ্বিগু: ত্রিফলা—ত্রি ফলের সমাহার/ বহুব্রীহি: ত্রি ফলা যার।
বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন
১. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
২. বিশেষ্য+ সপ্তমী বিভক্তি+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
৩. বিশেষণ+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
৪. বিশেষ্য +র/এর+দিকে/সাথে+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
৫. বিশেষ্য+বিশেষ্য+যে = বহুব্রীহি সমাস
৬. বিশেষ্য+ক্রিয়াপদ+যে = বহুব্রীহি সমাস
৭. বিশেষ্য+র/এর+সহিত বর্তমান = মধ্যপদলপী বহুব্রীহি সমাস
৮. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
৯. বিশেষ্য+বিভক্তি+বিশেষ্য+বিভক্তি+ যে+ নামক্রিয়া= ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
১০. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি = বহুব্রীহি সমাস
১১. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি = বহুব্রীহি সমাস
১২. সংখ্যা+বিশেষ্য+র/এর+বিশেষ্য +যার = বহুব্রীহি সমাস
অথবা সংখ্যা+বিশেষ্য+ যে+বিশেষ্য +র/এর = বহুব্রীহি সমাস
১৩. বিশেষ্য+ নাই/+যাতে = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
অথবা নাই +বিশেষ্য+ যার = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
১৪. নয়+ বিশেষ্য+(যার) = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
১৫. ন (নয় করা যায়)+বিশেষ্য+ যা = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
১. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
সহোদর সহ উদর যার বহুব্রীহি সমাস
বিমনা মনের অভাব যার বহুব্রীহি সমাস
দশগজি দশ গজ পরিমাণ যার বহুব্রীহি সমাস
একরোখা এক দিকে রোখ যার বহুব্রীহি সমাস
চন্দ্রচূড় চন্দ্র চূড়া যার বহুব্রীহি সমাস
সহোদর সহ (একই) উদর যার বহুব্রীহি সমাস
নদী মাতৃক নদী মাতা যার বহুব্রীহি সমাস
তিমিরকুন্তলা তিমিরের ন্যায় কুন্তল যার বহুব্রীহি সমাস
দশানন দশ আনন যার বহুব্রীহি সমাস
হাতেছড়ি হাতে ছড়ি যার বহুব্রীহি সমাস
আশীবিষ আশীতে বিষ যার বহুব্রীহি সমাস
শ্বাপদ শ্বার/কুকুরের মতো পদ যার বহুব্রীহি সমাস
বিপত্নীক বিগত পত্নী যার বহুব্রীহি সমাস
সতীর্থ সমান তীর্থ যার বহুব্রীহি সমাস
২. বিশেষ্য+ সপ্তমী বিভক্তি+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
বীণাপাণি বীণা পাণিতে যার বহুব্রীহি সমাস
ঊর্ণনাভ ঊর্ণ নাভিতে যার বহুব্রীহি সমাস
পাপমতি পাপে মতি যার বহুব্রীহি সমাস
৩. বিশেষণ+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
অল্পপ্রাণ অল্প প্রাণ যার বহুব্রীহি সমাস
মহাত্মা মহান আত্মা যার বহুব্রীহি সমাস
সুহৃদয় সুন্দর হৃদয় যার বহুব্রীহি সমাস
পাঁচগজি পাঁচ গজ পরিমাণ যার বহুব্রীহি সমাস
মন্দভাগ্য মন্দ ভাগ্য যার বহুব্রীহি সমাস
বার্ধক্য বৃদ্ধাবস্থা যার বহুব্রীহি সমাস
নীলকণ্ঠ নীল কণ্ঠে যার বহুব্রীহি সমাস
সুশীল সু (সুন্দর) শীল যার বহুব্রীহি সমাস
কমবখত কম বখত যার বহুব্রীহি সমাস
৪. বিশেষ্য +র/এর+দিকে/সাথে+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
ঘরমুখো ঘরের দিকে মুখ যার বহুব্রীহি সমাস
সদর্প দর্পের সাথে বর্তমান বহুব্রীহি সমাস
৫. বিশেষ্য+বিশেষ্য+যে =বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম
সহকর্মী সমান কর্মী যে বহুব্রীহি সমাস
৬. বিশেষ্য+ক্রিয়াপদ+যে = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
জাদুকর জাদু করে যে বহুব্রীহি সমাস
জলচর জলে চরে যে বহুব্রীহি সমাস
পকেটমার পকেট মারে যে বহুব্রীহি সমাস
৭. বিশেষ্য+র/এর+সহিত বর্তমান = মধ্যপদলপী বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
সজল জলের সহিত বর্তমান মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
সবান্ধব বান্ধবসহ বর্তমান/বান্ধবের সহিত মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
৮. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
হাতেখড়ি হাতে খড়ি দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
৯. বিশেষ্য+বিভক্তি+বিশেষ্য+বিভক্তি+ যে+ নামক্রিয়া = ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
কানাকানি কানে কানে যে কথা ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
কোলাকুলি কোলে কোলে যে মিলন ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
হাতাহাতি হাতে হাতে যে লড়াই ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
হাসাহাসি হাসতে হাসতে যে ক্রিয়া ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
রক্তারক্তি রক্তেরক্তে যে কাণ্ড ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
গলাগলি গলায় গলায় যে মিল ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
১০. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
সত্যবাদী সত্যকথা বলেন যিনি বহুব্রীহি সমাস
১১. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি =বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
গৃহস্থ গৃহে স্থির যে বহুব্রীহি সমাস
১২. সংখ্যা+বিশেষ্য+র/এর+বিশেষ্য+যার=বহুব্রীহি সমাস অথবা সংখ্যা+বিশেষ্য+যে+বিশেষ্য +র/এর = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
সেতার সে তারের যন্ত্র যার/তিন তার যে যন্ত্রের বহুব্রীহি সমাস
১৩. বিশেষ্য+ নাই/+যাতে—নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস অথবা নাই +বিশেষ্য+ যার = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
নির্ভুল ভুল নাই যাতে নঞ বহুব্রীহি সমাস
বেয়াদব আদব নাই যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অপয়া পয় নাই যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অজ্ঞান জ্ঞান নাই যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অভাগ্য ভাগ্য নাই যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অবোধ বোধ নাই যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
১৪. নয়+ বিশেষ্য+(যার) = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
অবিশ্বাস্য নয় বিশ্বাস্য নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাশ্রিত নয় আশ্রিত নঞ বহুব্রীহি সমাস
অস্থির নয় স্থির নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনিষ্ট নয় ইষ্ট নঞ বহুব্রীহি সমাস
অপর্যাপ্ত নয় পর্যাপ্ত নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনুচিত নয় উচিত নঞ বহুব্রীহি সমাস
অকাতর নয় কাতর নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনৈক্য নয় ঐক্য/নাই ঐক্য নঞ বহুব্রীহি সমাস
নিরর্থক নাই অর্থ যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনধিক নয় অধিক নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনসূয়া নাই অসূয়া (হিংসা) যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনতিবৃহৎ নয় অতি বৃহৎ নঞ বহুব্রীহি সমাস
বেহায়া নাই হায়া যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাদর নয় আদর নঞ বহুব্রীহি সমাস
বেসরকারি নয় সরকারি নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাসক্ত নয় আসক্ত নঞ বহুব্রীহি সমাস
বেওয়ারিশ বে/নাই ওয়ারিশ যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাচার নয় আচার নঞ বহুব্রীহি সমাস
১৫. ন (নয় করা যায়)+বিশেষ্য+ যা = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ ব্যাসবাক্য সমাস
অনাচার ন আচার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাদি ন আদি নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনশন ন অশন নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনন্য ন অন্য নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনেক ন এক নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনার্য ন আর্য নঞ বহুব্রীহি সমাস
অবিচার ন বিচার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনেক ন এক নঞ বহুব্রীহি সমাস
অন্যান্য সমাস
১. নিত্যসমাস: যে সমাসের ব্যাসবাক্য হয় না তাকে নিত্যসমাস বলে। দুই-নব্বই-এর মাঝে ‘এবং’ না বসে ‘ও’ বসে। কিন্তু প্রত্যেক বইতে ‘এবং’ দেয়া। যেমন: অন্য গ্রাম—গ্রামান্তর, গৃহান্তর, কেবল দর্শন—দর্শনমাত্র, আমি, তুমি ও সে—আমরা, দুই ও নব্বই—বিরানব্বই।
২. প্রাদিসমাস: উপসর্গযোগে (অনু, প্র, প্রতি, পরি) গঠিত সমাসকে প্রাদিসমাস বলে। যেমন: প্র (প্রকৃষ্ট যে বচন)—প্রবচন, প্র (প্রকৃষ্টরূপে) যে ভাত (আলোকিত)—প্রভাত, পরি যে ভ্রমণ—পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ—অনুতাপ।
৩. একদেশি সমাস: কালবাচক সমাসকে একদেশি সমাস বলে। যেমন: অহ্নের অপর ভাগ—অপরাহ্ন।
৪. নঞসমাস: পূর্বশব্দে আগে ‘ন/না/নাই/নাই/নয়’ যোগে যে সমাস হয় তাকে নঞ(নং) সমাস বলে। পদের পূর্বের ‘অ/আ/ন/বে’ উঠে ‘ন’ বসে। যেমন:
তৎপুরুষ সমাস: অভাব (ন ভাব), অসুখ, অনাদর, অজানা, আনুলি, অমানুষ, নাছোড়, নাবালক, নাতিদীর্ঘ, নামঞ্জুর, বেতাল।
বহুব্রীহি : অবুঝ (নাই বুঝ যার), অজ্ঞান, বিশ্রী, নির্ভুল, বেহুঁশ।
৫. অলুক সমাস: যে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক সমাস বলে। যেমন:
দ্বন্দ্ব সমাস : দুধেভাতে (দুধে ও ভাতে), মায়ে-ঝিয়ে, হাতে-কলমে।
তৎপুরুষ সমাস: ঘিয়েভাজা, কলের গান, গরুর গাড়ি।
বহুব্রীহি : মাথায়-পাগড়ি (মাথায় পাগড়ি যার), গলায়-গামছা।
৬. সংখ্যাবাচক সমাস: সংখ্যা দিয়ে যে সমাস হয় তাকে সংখ্যাবাচক সমাস বলে। যেমন:
দ্বন্দ্ব সমাস : সাত-পাঁচ, সাত-সতের, উনিশ-বিশ, নয়-ছয়।
দ্বিগু : ত্রি পদের সমাহার—ত্রিপদী, ত্রিফলা, নবরত্ন, পঞ্চনদ, সেতার।
বহুব্রীহি : দশ গজ পরিমাণ যার—দশগজি, চৌচাল, চারহাতি, পোয়া, সেতার।
৭. বহুপদি সমাস: বহুপদ দিয়ে গঠিত সমাসকে বহুপদি সমাস বলে। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস: সাহেব, বিবি ও গোলাম, হাত, পা, নাক, মুখ ও চোখ।
৮. একশেষ সমাস: বহুশব্দ থেকে সমাসজাত একটি শব্দে গঠিত সমাসকে একশেষ সমাস বলে। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস: আমরা—সে, তুমি ও আমি, তোমরা—সে ও তুমি।
৯. সুপসুপা সমাস: বিভক্তিযুক্ত নামশব্দের সাথে বিভক্তিযুক্ত নামশব্দের সমাস হলে সুপসুপা সমাস বলে। যেমন: রাত্রির মধ্য—মধ্যরাত্রি, রাত্রির পূর্ব—পূর্বরাত্রি, অহ্নের মধ্যে—মধ্যাহ্ন।
শব্দগঠনের উপায় (সন্ধি)
বিভিন্নভাবে সন্ধিকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন: সন্ধি অর্থ মিলন অর্থাৎ পাশাপাশি দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণকে আশ্রয় করে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দকে যে সূত্রে একশব্দ করা হয় তাকে সন্ধি বলে। অথবা প্রথম শব্দের শেষবর্ণ এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথমবর্ণ মিলে নতুন শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াকে সন্ধি বলে। অথবা উচ্চারণের সময় কাছাকাছি দুবর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণ সংযোগে বা লোপে নতুন অর্থবোধক গঠিত শব্দকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণকে আশ্রয় করে অর্থসংগতিপূর্ণ দুটি শব্দকে একশব্দে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সন্ধি বলে। সন্ধি মিলন, বিকৃত ও লোপেও হয়ে থাকে। যেমন : মিলন (প্রথম শব্দে শেষ বর্ণ এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম বর্ণ): বিদ্যা +আলয়=বিদ্যালয়। বিকৃতি (পূর্ব বর্ণের বা পরের বর্ণের বিকৃতি): উৎ+চারণ=উচ্চারণ, যাচ +না =যাচঞা। লোপ (পূর্ব বর্ণের বা পরের বর্ণের বিকৃতি): অতঃ+এব=অতএব, উৎ+স্থান =উত্থান /ইতি+আদি =ইত্যাদি, ইতি+মধ্যে =ইতোমধ্যে।
ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে সন্ধির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন :
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ : বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে।
ড. সুকুমার সেন : পরস্পর অত্যন্ত সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক: একাধিক ধ্বনির মিলন, লোপ বা পরিবর্তনের নাম সন্ধি।
অশোক মুখোপাধ্যায় : একান্ত সন্নিহিত বা অব্যবহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।
জ্যোতিভূষণ চাকী : দ্রুত উচ্চারণের ফলে পরস্পর সন্নিহিত ধ্বনির পরিবর্তন হয়।
এতে দুটি ধ্বনির মিলন, পরিবর্তন কিংবা লোপ হতে পারে। এরূপ মিলন
বা লোপ বা পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।
সন্ধির উপাদান
সন্ধি নিয়মের কয়েকটি উপাদান রয়েছে। যেমন : ধ্বনি ও বর্ণ, পূর্বপদ অর্থাৎ প্রথম শব্দ, পরপদ/উত্তর শব্দ অর্থাৎ দ্বিতীয় শব্দ।
সন্ধির কাজ বা সন্ধির প্রয়োজনীয়তা
সন্ধির কাজ হলো উচ্চারণ ঠিক রাখার নতুন শব্দ গঠন করা। ভাষার জন্য সন্ধির ব্যবহার খুব প্রয়োজন। যেমন: সন্ধি ভাষাকে শ্রুতিমধুর, প্রাঞ্জল ও সংক্ষিপ্ত করে, উচ্চারণ ও বানান শুদ্ধ ও সঠিক করে, দুটি বর্ণে মিলন, বিকৃত ও লোপ ঘটিয়ে একটি বর্ণের মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করে এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন ও বিস্তার ঘটায়।
শব্দ উচ্চারণের সুবিধার্থে এবং ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সন্ধির উদ্ভব হয়েছে। সন্ধির জন্যই দুটি শব্দ একসঙ্গে উচ্চারণ করা যায়। সাধারণত দুটি বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় তবে বিকৃতি বা লোপেও সন্ধি হয়। আবার সকল ক্ষেত্রে সন্ধি হয় না। যেমন: অর্থ+ অভাব= অর্থাভাব, দুর+অবস্থা=দুরাবস্থা, মান+অভিমান =মানাভিমান ইত্যাদি।
নামের ক্ষেত্রেও সন্ধির সুবিধা নেয়া হয়। যেমন শরৎ+চন্দ্র=শরৎচন্দ্র /শরচ্চন্দ্র, রবি+ইন্দ্র =রবীন্দ্র। তবে সন্ধিজাত বা সমাসজাত নামবাচক শব্দ একশব্দ হয় তা আগের লেখকগণ করতেন না তবে বর্তমানে করা হয়। যেমন: রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, পরমেশ প্রসন্ন, বসন্ত কুমার।
সন্ধির প্রকার
বিভিন্নভাবে সন্ধির প্রকরণ দেখানো যায়। যেমন:
উৎপত্তিগত | গঠনগত | অনিয়মগত |
১. সংস্কৃত সন্ধি সংস্কৃত শব্দ+সংস্কৃত শব্দ ২. দেশি সন্ধি দেশি শব্দ + দেশি শব্দ সংস্কৃত ও দেশি শব্দের মিলনে সন্ধি হয় না | ১. স্বরসন্ধি ২. ব্যঞ্জনসন্ধি ৩. বিসর্গসন্ধি স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি দুটির ক্ষেত্রেই হতে পারে— ১. অন্ত সন্ধি অসমবর্ণের মিলনে তৈরি— নৌ+ইক=নাবিক, ভজ+ক্ত =ভক্ত ২. বহিঃসন্ধি সমবর্ণের মিলনে তৈরি-মহা +আশয়=মহাশয় | নিপাতনে সন্ধি: কিছু সন্ধিজাত শব্দ সন্ধির প্রকৃত নিয়ম না মেনে তৈরি হয় বলে তাদের নিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: ১. স্বরনিপাতনে সন্ধি গো+অক্ষ = গবাক্ষ ২. ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি পর+পর = পরস্পর |
সন্ধি বিভিন্ন প্রকার। যেমন :
১. স্বরসন্ধি: স্বরবর্ণ ও স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন: নর+অধম= নরাধম।
২. ব্যঞ্জনসন্ধি : স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন: পরি+ছদ=পরিচ্ছদ, দিক+অন্ত=দিগন্ত, উৎ+ লাস =উল্লাস।
৩. বিসর্গসন্ধি (ঃ উঠে যায়): বিসর্গবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। সাধারণত ‘র’ ও ‘স’-এর সংক্ষিপ্ত রূপকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন: ততঃ+অধিক=ততোধিক, মনঃ+ রম=মনোরম, অন্তঃ>অন্ত, নমঃ>নমস।
৪. নিপাতনে সন্ধি : নিয়মহীনভাবে যে সন্ধি হয় তাকে নিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: গো+অক্ষ=গোঅক্ষ বা গোবক্ষ বা গোবাক্ষ না হয়ে হবে গবাক্ষ, এখানে ‘ব’ না থাকা শর্তেও ‘ব’ এসেছে। দুভাবে নিপাতনে সন্ধিকে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) স্বরনিপাতনে সন্ধি: নিয়মহীনভাবে স্বর ও স্বর সন্ধির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরনিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: অন্য+অন্য= অন্যান্য, আইন+অনুসারে=আইনানুসারে।
খ) ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি: নিয়মহীনভাবে ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জন সন্ধির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: এক+দশ=একাদশ, তৎ+কর=তস্কর, পর+পর= পরস্পর, বন+পতি=বনস্পতি।
স্বরসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. আ (া )
অ +অ =আ : নরাধম (নর +অধম), নবান্ন, পলান্ন, হিতাহিত, শশাঙ্ক, হিমাচল, দাবানল,
নীলাকাশ, নীলাম্বর, ভেদাভেদ, সূত্রানুসারে
অ +আ =আ : হিমালয় (হিম+আলয়), সিংহাসন, নবাগত, লোকালয়, জলাশয়, বিবেকানন্দ, দণ্ডাদেশ
আ +অ =আ : যথার্থ (যথা+অর্থ), মহার্ঘ, ভিক্ষান্ন, পূজার্চনা
আ +আ =আ : বিদ্যালয় (বিদ্যা +আলয়), মহাশয়, শিক্ষায়তন, সদানন্দ
২. ঈ (ী)
ই +ই =ঈ : রবীন্দ্র (বরি +ইন্দ্র), মহীন্দ্র, অতীন্দ্র, অভীষ্ট, অতীষ্ট, প্রতীতি, অধীন, অতীত
ই +ঈ =ঈ : প্রতীক্ষা (প্রতি +ঈক্ষা), পরীক্ষা, সমীক্ষা, গিরীশ, অধীশ্বর, ক্ষিতীশ, মনীশ
ঈ +ই =ঈ : রথীন্দ্র (রথী+ইন্দ্র), অবনীন্দ্র, সতীন্দ্র, সুধীন্দ্র, ফণীন্দ্র, মহীন্দ্র, শচীন্দ্র
ঈ +ঈ =ঈ : শ্রীশ (শ্রী+ঈশ), মহীশ
৩. ঊ (ূ)
উ +উ =ঊ : কটূক্তি (কটু+উক্তি), সাধূক্তি, ভানূদয়, বিধূদয়, গুরূপদেশ, অনূদিত, মরূদ্যান
উ +ঊ =ঊ : লঘূর্মি (লঘু+ঊর্মি), সিন্ধূর্মি, অনূর্ধ্ব, তনূর্ধ্ব, বহূর্ধ্ব
ঊ +উ =ঊ : বধূৎসব (বধূ+উৎসব), ভূত্থিত, বধূক্তি
ঊ +ঊ =ঊ : ভূর্ধ্ব (ভূ+ঊর্ধ্ব), সরভূর্মি
৪ এ (ে)
অ +ই =এ : শুভেচ্ছা (শুভ+ইচ্ছা), নরেন্দ্র, দেবেন্দ্র, প্রেমেন্দ্র, গজেন্দ্র, জয়েন্দ্র, স্বেচ্ছা, পূর্ণেন্দু
অ +ঈ =এ : অপেক্ষা (অপ+ঈক্ষা), গণেশ, নরেশ, সুরেশ, প্রাণেশ, ভবেশ, পরমেশ্বর, সর্বেশ্বর
আ +ই =এ : যথেচ্ছা (যথা+ইচ্ছা), যথেষ্ট, মহেন্দ্র, রাজেন্দ্র
আ +ঈ =এ : মহেশ (মহা+ঈশ), রমেশ, ঢাকেশ্বরী, উমেষ
৫ ও (ো)
অ +উ =ও : সহোদয় (সহ+উদয়), দামোদর, উত্তরোত্তর, নরোত্তম, পরোপকার, বোধোদয়, প্রশ্নোত্তর,
হিতোপদেশ, সর্বোত্তম
অ +ঊ =ও : নবোঢ়া (নব+ঊঢ়া), চলর্মি, দেহোর্ধ্ব, পর্বতোর্ধ্ব, গৃহোর্ধ্ব
আ +উ =ও : যথোচিত (যথা+উচিত), মহোৎসব, যথোপযুক্ত, মহোপকার
আ +ঊ =ও : পদ্মোর্মি (পদ্ম+ঊর্মি), গঙ্গোর্মি, মহোর্মি, মহোর্ধ্ব
৬ ঐ (ৈ)
অ +এ =ঐ : জনৈক (জন+এক), হিতৈষী
অ +ঐ =ঐ : মতৈক্য (মত+ঐক্য), রাজৈশ্বর্য
আ +এ =ঐ : তথৈব (তথ+এব), সদৈব, তথৈবচ, বসুধৈব
আ +ঐ =ঐ : মহৈশ্বর্য (মহা+ঐশ্বর্য), মহৈরাবত
৭. ঔ (ৌ)
অ +ও =ঔ : বনৌষধি (বন +ওষধি), জলৌকা
অ +ঔ =ঔ : পরমৌষধি (পরম+ঔষধি), উত্তমৌষধি,
আ +ও =ঔ : মহৌষধি (মহা +ওধষি), লতৌষধি, সদৌজস্বী
আ +ঔ =ঔ : মহৌষধ (মহা +ঔষধ), মহৌদার্য, দিবৌষধ, মহৌৎসক
৮. আর
অ +ঋ =অর : দেবর্ষি (দেব +ঋষি), সপ্তর্ষি
আ +ঋ =অর : মহর্ষি (মহা +ঋষি), রাজর্ষি
ব্যতিক্রম : উত্তম+ঋণ=উত্তমর্ণ, অধম+ঋণ=অধমর্ণ, বন্যা+ঋত=বন্যার্ত, বেদনা+ঋত=বেদনার্ত
৯, য-ফলা, ই/ঈ+অ/উ/ঊ/এ
: অতি+অন্ত =অত্যন্ত, অতি+আচার=অত্যাচার, অতি+উন্নতি=অত্যুন্নতি, প্রতি+ঊষ=প্রত্যূষ, প্রতি+এক=প্রত্যেক, নদী+অম্বু=নদ্যম্বু, যদ্যপি, প্রত্যক্ষ, গত্যন্তর, ব্যর্থ, ইত্যবসর, প্রত্যাগমন, অভ্যাগত, ইত্যাকার, ইত্যাদি, প্রত্যাদেশ, অত্যাশ্চর্য
১০. ন্ব, /শ্ব/স্ব অনু/মনু+অ/ই/এ=ন্ব, শু+অ/অ=শ্ব, সু+অ/আ=স্বা
: অনু+ইত=অন্বিত, মনু+অন্তর=মন্বন্তর, পশু+আচার=পশ্বাচার, সু+অচ্ছ=স্বচ্ছ, সু+আগতম=স্বাগতম, অন্বেষণ, পশ্বধম, স্বল্প, স্বস্তি , স্বাগত
১১. অয়, আয়, আয়ি, এ+অ=অয়, এ+আ=অয়া, ঐ+অ=আয়, ঐ+ই=আয়ি
: শে+অন=শয়ন, শে+আন= শয়ান, গৈ+অক= গায়ক, নৈ+ইকা=নায়িকা, নয়ন, বয়ন, নায়ক, গায়িকা
১২. অব, আব, আই, ও+অ=অব, ও+আ=অবা, ও+ই=ই, ও+এ=এ ঔ+অ=আব, ঔ+ই=আবি, ঔ+ই=আবু
: ভো +অন=ভবন, গো +আদি=গবাদি, পো +ইত্র=পবিত্র, গো +এষণা=গবেষণা, পৌ +অক=পাবক, নৌ +ইক=নাবিক, ভৌ +উক=ভাবুক, পবন
১৩. অ/আ/আই, ঋ+অ=অ, ঋ+আ=আ, ঋ+ই=আই
: পিতৃ+অনুমতি=পিত্রানুমতি, পিতৃ+আলয়=পিত্রালয়, ভ্রাতৃ+ইচ্ছা=ভ্রাত্রিচ্ছা, পিত্রাদেশ
ব্যঞ্জনসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. গ, ক +অ=গ, ক +আ=গা, ক+উ=গু, ক+ঈ=গী, ক+ঐ=গৈ
: দিক+অন্ত =দিগন্ত, বাক+আড়ম্বর=বাগাড়ম্বর, প্রাক+উক্ত=প্রাগুক্ত, বাক+ঈশ=বাগীশ, প্রাক+ ঐতিহাসিক = প্রাগৈতিহাসিক, বাগর্থ, পৃথগন্ন, বাগীশ্বরী
২. চ্চ. ৎ+চ=চ্চ, দ+চ=চ্চ
: উৎ+চারণ=উচ্চারণ, বিপদ+চয়=বিপচ্চয়, শরচ্চন্দ্র, সচ্চিন্তা, চলচ্চিত্র
৩. চ্ছ, অ+ছ=চ্ছ, আ+ছ=আচ্ছ, ই+ছ=ইচ্ছ, উ+ছ=উচ্ছ, ৎ+ছ=চ্ছ, দ+ছ=চ্ছ, ৎ+শ=চ্ছ, ৎ+স=চ্ছ, দ+শ=চ্ছ
: স্ব+ছন্দ=স্বচ্ছন্দ, আ+ছন্ন=আচ্ছন্ন, পরি+ছেদ=পরিচ্ছেদ, অনু+ছেদ=অনুচ্ছেদ, তৎ+ছবি=তচ্ছবি, বিপদ+ ছায়া=বিপচ্ছায়া, উৎ+শৃঙ্খলা=উচ্ছৃঙ্খলা, কুৎ+সিত=কুচ্ছিত, তদ+শক্তি=তচ্ছক্তি, প্রচ্ছদ, একচ্ছদ, মুখচ্ছবি, বৃক্ষচ্ছায়া, অঙ্গচ্ছেদ, অবচ্ছেদ, কথাচ্ছলে, খেলচ্ছলে, পরীক্ষাচ্ছলে, ব্যবচ্ছেদ, আলোকচ্ছটা, আচ্ছাদন প্রতিচ্ছবি, বিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন তরুচ্ছায়া, উচ্ছেদ, সচ্ছাত্র, তচ্ছায়া, উচ্ছিন্ন, তচ্ছিদ্র, উচ্ছ্বাস, চলচ্ছক্তি, উচ্ছন্ন, উচ্ছব, বচ্ছর
৪. জ /জ্জ /জ্ঝ চ+অ=জ, ৎ+জ=জ্জ, চ+জ=জ্জ, ত/দ+জ=জ্জ, ৎ+ঝ=জ্ঝ, দ+জ=জ্জ, দ+জ=জ্ঝ
: অচ+অন্ত =অজন্তা, যাবৎ+জীবন=যাবজ্জীবন, পাঁচ+জন=পাঁজ্জন, নাত+জামাই= নাজ্জামাই, কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা, বিপদ+জনক=বিপজ্জনক, এতদ+ঝঙ্কার=এতজ্ঝঙ্কার, ণিজন্ত, তজ্জন্য, উজ্জ্বল, জগজ্জীবন, তজ্জাতীয়, বজ্জাত, ঘজ্জামাই
৫. ড়, ট+অ=ড়, ট+আ =ড়া : ষট+ঋতু=ষড়ঋতু , ষট+আনন=ষড়ানন
৫. দ, ৎ+অ=দ, ৎ+ই=দি, ৎ+ঈ=দী, ৎ+উ=দু, ৎ+ঔ=দৌ
: কৃৎ+অন্ত =কৃদন্ত, সৎ+ইচ্ছা=সদিচ্ছা, জগৎ+ঈশ্বর=জগদীশ্বর, সৎ+উদ্দেশ্য=সদুদ্দেশ্য, মহৎ+ঔষধ=মহদৌষধ, তদবধি, সদাশয়, সদানন্দ, মৃদঙ্গ, বৃহদারণ্যক, জগদিন্দ্র, জগদীশ, সদুপদেশ
৬. ব, প+অ=ব : সুপ+অন্ত =সুবন্ত
৭. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—ৎ+ড=ড্ড, ৎ+ঢ=ড্ঢ, ৎ+হ=দ্ধ, ৎ+ল=ল্ল, ৎ+ট=ট্ট, ৎ+ঠ=ট্ঠ
: উৎ+ডিন=উড্ডিন, বৃহৎ+ঢক্কা=বৃহড্ঢক্কা, উৎ+হার=উদ্ধার (হত/হতি), উৎ+লেখ=উল্লেখ, বৃহৎ+টীকা =বৃহট্টীকা, বৃহৎ+ঠাকুর=বৃহট্ঠাকুর , উদ্ধত, উদ্ধৃত, পদ্ধতি, তদ্ধিত, উল্লম্ফ, উল্লঙ্ঘন, বিদ্যুল্লতা, উল্লাস, বৃহট্টক্কা
৮. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—চ+শ=শশ, র+বর্ণ=দ্বিত্ব
: পাঁচ+শ=পাঁশ্শ, চার+দিন=চাদ্দিন, সাশ্শ, তদ্দিন, হত্তাল
৯. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—দ+ল=ল্ল, দ+ট=ট্ট, দ+ক/স =ৎ, ধ+প=ৎ
: উদ+লিখিত=উল্লিখিত, তদ+টীকা=তট্টীকা, তদ+সম=সংস্কৃত, ক্ষুধ+পিপাসা=ক্ষুৎপিপাসা, হৃৎকম্প, তৎকাল, বিপৎসঙ্কুল, হৃৎকমল
১০. ং, ম+ক=ঙ্ক/ংগ, ম+ক্ষ=ংক্ষ, ম+খ্যা=ংখ, ম+গ=ংগ, ম+ঘ=ংঘ, ম+শ=ংশ, ম+স=ংস, ম+য=ং, ম+হ=ংহ, ম+র=ংর, ম+ল=ংল, ম+ব=ংব
: সম+কর=সঙ্কর, সম+ক্ষোভ=সংক্ষোভ, সম+খ্যা==সংখ্যা, সম+গীত=সংগীত, সম+ঘ=সংঘ, সম+শয়=সংশয়, সম+ সার=সংসার, সম+যোজন=সংযোজন, সম+হার=সংহার, সম+রক্ষণ=সংরক্ষণ, সম+লাপ=সংলাপ, সম+ বর্ধনা= সংবর্ধনা, সংকল্প, সংকলন, সংকীর্ণ, শংকা, সংক্রম, অহংকার, সঙ্গম, বিহঙ্গম, সংগত, সংগঠন , সংঘাত, সংসপ্তক, সংযোগ, স্বয়ংবরা, সংবাদ, কিংবা, বারংবার, সংবরণ
১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—ম+চ=ঞ্চ, ম+জ=ঞ্জ, ম+ত=ন্ত, ম+দ=ন্দ, ম+ন=ন্ন, ম+প=ম্প, ম+ভ=ম্ভ, ম+ম=ম্ম
: সম+চয়=সঞ্চয়, সম+জীবন=সঞ্জীবন, সম+তাকা=সন্তাকা, সম+দর্শন=সন্দর্শন, সম+ন্যাস=সন্ন্যাস, সম+ পূর্ণ=সম্পূর্ণ, সম+ভার=সম্ভার, সম+মান=সম্মান, কিন্নর
১২. প্রত্যয়—না, নী, ত/ক্ত, ঞ, থ, আমি, আলি, এক, উক, ইয়াল (য়াল), ইয়া, এ/য়ে/য় /য়া /আ, আ/ই-কার লোপ
: যাচ+না=যাঞ্চা, রাজ+নী=রাজ্ঞী, নষ+ত= নষ্ট, দৃশ+ত=দৃষ্ট, যজ+ঞ=যজ্ঞ, ষষ+থ=ষষ্ঠ, বোকা+ আমি = বোকামি, রুপ+আলি=রুপালি, বার+এক=বারেক, নিন্দা+উক=নিন্দুক, গাড়ি+আল=গাড়িয়াল, নাও+ ইয়া= নাইয়া, মা+এ=মায়ে, কাঁচা+কলা=কাঁচকলা, বৃষ্টি, হৃষ্ট, কৃষ্টি, বুদ্ধ, মুগ্ধ, পাগলামি, ছেলেমি, মেয়েলি, গোঁড়ামি, ঢিলেমি, শাঁখারি, মিতালি, সোনালি , শতেক, খানেক, কতেক, অর্ধেক, তিলেক, তিনেক, ধনিক, বণিক, কুড়িক, গুটিক, হিংসুক, মিথ্যুক, লাঠিয়াল, ঘড়িয়াল (ই লোপ পায়), গাঁইয়া (ও লোপ পায়)
ভায়ে, ঝিয়ে, ছায়ায়, আলয়, বাবুআনা, ঘোড়দৌড়, নাতবউ
বিসর্গসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. শ, ষ, স, ঃ +চ=শ্চ : নিঃ +চয় =নিশ্চয়, দুঃ +চিন্তা =দুশ্চিন্তা, নিশ্চিহ্ন, নিশ্চিন্ত, দুশ্চিন্তা, দুশ্চরিত্র
ঃ +ট/ঠ=ষ : নিঃ +ঠুর =নিষ্ঠুর, ধনুষ্টংকার, নিষ্ঠা, নিষ্ঠুর, নিষ্ফল, নিষ্কাম, আবিষ্কৃত, চতুষ্কোণ, ভ্রাতুষ্পুত্র, দুষ্প্রাপ্য, চতুষ্পদ, নমষ্কার, বহিষ্কার, পরিষ্কার, পুরষ্কার, তিরষ্কার, দুষ্কার্য
ঃ +ত/থ=স : নিঃ +তার =নিস্তার, নিস্তেজ, অধস্তন, প্রস্থান, দুস্তর, মনস্কাম, ভাস্কর, তেজস্কর
২. চ্ছ, ঃ +ছ=চ্ছ : নিঃ+ছিদ্র=নিচ্ছিদ্র
৩. ও, ঃ +ও=ও : মনঃ +যোগ=মনোযোগ
ব্যতিক্রম—মনোহোর, অধোগতি, সদ্যোজাত, ততোধিক, বয়োধিক, বয়োবৃদ্ধ, পুরোভাগ, মনোহর, তপোবন, মনোজগৎ, অধোগতি, মনোরম, মনোরথ, অকুতোভয়, নভোযান, যশোলাভ, মনোরঞ্জন, সরোবর, মনোনয়ন
— মনঃকষ্ট, অধঃপতন, অন্তঃকরণ, অতঃপর, বহিঃপ্রকাশ
৪. র—ঃ +অ=র : দুঃ +গতি =দুর্গতি, আশীর্বাদ, আবির্ভাব
৫. ঃ +জ/য/র/ল/ব/হ= র /রেফ
: দুরাচার, নিরবধি, দুরবস্থা, নিরাপদ, নির্জীব, দুর্যোগ, দুর্বোধ্য, আশীর্বাদ, আবির্ভাব, নির্ভয়, প্রাদুর্ভাব, বহির্গমন, অহর্নিশ, পুনর্বার, পুনর্মিলন, অন্তর্গত, প্রাতভ্রমণ, অন্তরাত্মা
৬. ঃ +র =র : নিঃ+রস =নিরস/নীরস, নিরব/নীরব, নিরোগ/নীরোগ
শব্দদ্বিত্ব /দ্বৈতশব্দ /দ্বিরুক্তি
শব্দদ্বিত্ব দিয়ে আমরা সম্ভাব্য, বহুবচন ও অনুকার বুঝাতে ব্যবহার করি। বিশেষ অর্থ প্রকাশের জন্য যেসব শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয় তাদের দ্বিরুক্তি বা দ্বৈতশব্দ বা শব্দদ্বিত্ব বলে। যেমন: আমার জ্বর হয়েছে এবং জ্বর জ্বর লাগছে এক অর্থ নয়। জ্বর থেকে জ্বর জ্বর, বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে থাকে। কথাকে সুন্দর ও ছন্দময় করতে, বাক্যের বিশেষ অর্থ দিতে শব্দদ্বিত্বের বিশেষ দরকার। অনুভূতির ধ্বনির সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি শব্দ দিয়ে একটি বিশেষ অর্থবোধক শব্দ বানানো যায়। আবার ধ্বনাত্বকজাতীয় একই শব্দ দুবার বসিয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশের জন্য যেসব শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয় তাদের দ্বিত্বশব্দ বলে। শব্দদ্বিত্ব দিয়ে শব্দ গঠন করা যায়। শব্দদ্বিত্বকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. শব্দদ্বিত্ব : বিশেষ অর্থ প্রকাশ করতে শব্দে দুবার ব্যবহৃত হয়। যেমন: ভাল ভাল ফল, ছোট ছোট ঘর, বিন্দু বিন্দু জল, লালনপালন, বকাঝকা, লেনদেন, ধনী গরিব।
২. পদদ্বিত্ব : বিশেষ অর্থ প্রকাশ করতে পদ দুবার ব্যবহৃত হয়। যেমন: বর্তমানে ঘরে ঘরে শিক্ষিত। মনে মনে বলি, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।
৩. অনুকার দ্বিত্ব : যেসব অনুভবপ্রধান শব্দ বিশেষ অর্থ প্রকাশ করতে দুবার ব্যবহৃত হয়। যেমন: শাঁইশাঁই, পনপন, ঝনঝন, মিউমিউ, ঝিকঝিক, টপাটপ, বকবকানি।
দ্বিত্বশব্দ গঠনপদ্ধতি
বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে দ্বিত্ব শব্দ গঠন করা যায়। যেমন:
১. বিশেষ্য+বিশেষ্য = দিন দিন, বাড়ি বাড়ি
২. বিশেষণ+বিশেষণ = ছোট ছোট, ভালো ভালো
৩. সর্বনাম + সর্বনাম = কে কে, সে সে
৪. অসমাপিকাক্রিয়া + অসমাপিকাক্রিয়া = হাসতে হাসতে, যেতে যেতে, হেসে হেসে
৫. যোজক + যোজক = ছি ছি, টন টন, টাপুর টুপুর
দ্বিত্বশব্দের নিয়ম
১. বিশেষ্য শব্দের দ্বিত্ব: এরা সমার্থক, প্রায় সমার্থক ব্যতিহার, অনুকার বা বিপরীত হতে পারে। যেমন: কবি কবি, দিন দিন, বাড়ি বাড়ি, লোকে লোকে, দ্বারে দ্বারে, সঙ্গি-সাথি, রাশিরাশি, ছোট বড়, সুখদুখ, আলো-আঁধার, ওঠা-বসা, আকাশে-বাতাসে, দলে-বলে, থেকে থেকে, হাড়ে হাড়ে, ফাঁকে ফাঁকে, পথে পথে, পাতায় পাতায়, সময় সময়, ঘণ্টায় ঘণ্টায়, দিনে দিনে, পিছে পিছে, পাশে পাশে, উপরে উপরে, পাছে পাছে, সারিসারি, ধামাধামা, জ্বরজ্বর, মাথামুণ্ডু, বাড়িঘর, কলকারখানা, ধনদৌলত, উল্টাপাল্টা, হাসিঠাট্টা, গল্পগুজব, হেসেখেলে, নেচেগেয়ে, পড়েশুনে, বারবার, আগাগোড়া, রেগেমেগে, ধনী গরিব, গল্পস্বল্প, রকমসকম, দেনাপাওনা, টাকাপয়সা, ভাতটাত, চালচলন, ডালভাত, তালাচাবি, পথঘাট, বনজঙ্গল, অলিগলি, জারিজুরি, ভয়েভয়ে, হাটেহাটে, হাতেনাতে, চোখেচোখে, মুখেমুখে, গল্পস্বল্প ইত্যাদি।
২. বিশেষ্য/বিশেষণ শব্দে দ্বিত্ব: অনেক সময় কবিগণ দুটি বিশেষ্য ব্যবহার করেন যা ত্রুটিপূর্ণ বলে অনেকেই সমালোচনা করেন। কিন্তু কবি যদি তাঁর ব্যবহৃত দুটি শব্দের প্রথম বিশেষ্য দিয়ে বিশেষণ এবং দ্বিতীয় বিশেষ্য দিয়ে বিশেষ্য বুঝাতে পারেন তাহলে ব্যবহার ত্রটিপূর্ণ হবে না। যেমন: তনুর দেহ একই অর্থ অর্থাৎ শরীর অর্থ বহন করে তবে এখানে তনু— নমুনীয়/কমনীয় /সরু অর্থ প্রকাশ করছে। শুভ্রশাদা। শুভ্রর শাদা একই অর্থ বহন করে তবে এখানে শুভ্র— ধবধবে/অতিশয় শাদা/উজ্জ্বল অর্থ প্রকাশ করছে। কিন্তু অশ্রুজল দিয়ে তেমন বোঝায় না। অশ্রু অর্থ চোখের জল কিন্তু অশ্রু দিয়ে জলের কোন বিশেষণ প্রকাশ করছে না।
৩. সর্বনাম শব্দে দ্বিত্ব: যারা যারা, কে কে, সে সে, কেউ কেউ ইত্যাদি।
৪. যোজক অনুকার বা ধ্বনাত্মক শব্দে দ্বিত্ব: এসব নিরর্থক শব্দ অর্থবোধক হয়ে যায় ব্যবহারের পর। যেসব যোজক বিশেষ অর্থ প্রকাশ করতে দুবার ব্যবহৃত হয়ে ধ্বনি সৃষ্টি করে তারাই অনুকার যোজক । বকবকানি। আবার এসব শব্দের মাঝে আ-কারের আগমন ঘটে। শূন্যতা, রং বা বর্ণের স্বরূপ, শরীরের অনুভূতি, গতি, দ্বীপ্তি ইত্যাদি বুঝাতে এসব শব্দ দুবার ব্যবহার করা হয়। এগুলো আবার নিচের ভিন্নভিন্ন অর্থে প্রকাশ পেতে পারে। যেমন: শরীরে অনুভূতি: যখন যখন, সহচর-অনুচর, বন্ধু-বান্ধব, হায় হায়, ছি ছি, বারবার ইত্যাদি। কুহুকুহু, কা কা, ঠাঠা, কুটকুট, কিটকিট, কুচকুচ, কুচকুচে, ক্যাঁচক্যাঁচ, কিচিরমিচির, খলখল, খচখচ, খিলখিল, খিটমিট, খপখপ, গমগম, গরগর, ঘরঘর, ঘুটঘুটে, গাপুসগুপুস, টনটন, ঠনঠন, ডংডং, ডিমডিম, ঢংঢং, টাপুরটুপুর, টংটং, টুকটুক, টুকটুকে, মিটিরমিটির, টকটক, চটচট, চিকচিক, ছমছম, ছলছল, ঝিঝি, ঝনঝন, ঝিকঝিক, ঝিরঝির, ফুরফুরে, পনপন, মিউমিউ, মচমচ, মটমট, মড়মড়, মিটমিট, মিনমিন, পিটপিট, থমথম, ধবধব, সিরসির, ফড়ফড়, ভেউভেউ, ভড়ভড়, বকরবকর, বড়বড়, খনখন, পড়পড়, চকচক, ফটফট, বজরবজর, বিড়বিড়, ব্যাজব্যাজ, ফকফক, খকখক, বকবক, বনবন, ভনভন, ভ্যানভ্যান, রিমঝিম, রুনুঝুনু, রিনিঝিনি, শাঁইশাঁই, হনহন।
আবার মাঝে স্বরকার যুক্ত হয়: ধপধপ>ধপাধপ, টপাটপ, গপাগপ, সপাসপ, পটাপট, ফটাফট, খটাখট, ছলাছল, ঝটাঝট, বকবকানি, ছটফটানি, ঝমঝমানি, চুপচাপ, ছলছলিয়ে, কলকলিয়ে, ঝনঝনিয়ে, খিটমিটিয়ে, খপখপাৎ/খপখপিয়ে, চটচটিয়ে, কুলুকুল, খচাখচ, ছমছম, চটপটে, চিনচিন, কটকট, কুটকুট, কনকন, চটপটে ইত্যাদি। আঁকুপাঁকু, হীনহীন, ছটফট, ধুকধুক, টনটন, ম্যাজম্যাজ, পিনপিন রিরি, সুড়সুড় ইত্যাদি।
গতি: খটখট, গটগট, ঘটঘট, থপথপ, ধপধপ, ধপাসধপাস, শাঁশাঁ, হনহন, পনপন, ভনভন, ফিসফিস, পতপত, ফতফত, দুমদুম, ধুমধুম, ধামধাম, দ্রুমদ্রাম, ঠাসঠাস, ঝপাতঝপাত, ঢকঢক, দুপদুপ, ফোঁসফোঁস ইত্যাদি। শূন্যতা: ধুধু, খাঁখাঁ, থইথই, ঝাঁঝাঁ, হাঁহাঁ ইত্যাদি। রঙ/বর্ণ: ফুটফুটে, কুচকুচে, ধবধবে, দগদগে, রগরগে, চটচটে। দীপ্তি: জ্বলজ্বল, ঝকঝক, ঝলমল, ঝিলিমিলি, ঝিকমিক।
৫. সমাপিকাক্রিয়ার দ্বিত্ব: আসা-যাওয়া, লেনদেন, বকাঝকা, খেলাধুলা, লালন-পালন, খোঁজ-খবর, যায়যায়।
৬. অসমাপিকাক্রিয়ার দ্বিত্ব: হাসতে হাসতে, যেতে যতে, হেসেহেসে, দেখতে দেখতে, দেখেদেখে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে, ডেকেডেকে, মারামারি, হাতাহাতি, জেদাজেদি, ছটফট, নিশপিশ, হেঁটেহেঁটে, খেয়েখেয়ে, নেচেনেচে, কেঁশেকেঁশে, ভেসেভেসে।
৭. ক্রিয়াবিশেষণের দ্বিত্ব : ধীরে ধীরে, ফিরে ফিরে, আস্তে আস্তে ইত্যাদি।
শব্দভাণ্ডার ও বাংলাশব্দের উৎস
অর্থপূর্ণ ধ্বনি সমষ্টিই শব্দ। শব্দ আমাদের অতীতের কথা শোনায়। একদিন যা ছিল মানুষের মনে তা মুখে উচ্চারিত হয়ে শব্দরূপে ধরা দেয়। এক একটি নির্দিষ্ট সমাজ বলতে পারে কোন শব্দের কী মানে। এভাবেই যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন অভিজ্ঞতালব্ধ মৌলিক শব্দ, প্রত্যয়, উপসর্গ যোগে এবং সমাসের সাহায্যে নতুন নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে যাচ্ছে। এক সময় যে শব্দ ছিল সবচেয় জনপ্রিয় কালের বিবর্তনে সে শব্দ হয়তো চির কালের জন্য হারিয়ে গেছে। আবার নতুন শব্দ কবি-সাহিত্যিক-গবেষকদের কল্যাণে নবরূপ পেয়েছে। এভাবেই গ্রহণ-বর্জনের মধ্যেদিয়ে লক্ষাধিক শব্দ বাংলা ভাষার অভিধানে স্থান করে নিয়েছে। শব্দই ভাষাকে গতিময় করেছে তাই শব্দকে বলা হয় শব্দব্রহ্ম। ভাষার ক্ষুদ্রতম অংশ হলো ধ্বনি যা মুখের মাধ্যমে প্রকাশিত অর্থবহ আওয়াজ। এই অর্থবহ আওয়াজের লিখিতরূপ হলো বর্ণ। আর এই অর্থবহ বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে শব্দ বলে। এক বা একাধিক ধ্বনির অর্থপূর্ণ মিলনই শব্দ।
বাংলা ভাষার অভিধানে যেসব শব্দ আছে অথবা যেসব শব্দ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে, মুখে ব্যবহার করে বা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে সেসব সঞ্চিত শব্দই শব্দভাণ্ডার নামে পরিচিত। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যত উন্নত সেই ভাষা তত সমৃদ্ধ। বাংলা শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের উত্তরাধিকার থেকে পাওয়া শব্দ। যেগুলো অনেকটা পুরোনো শব্দ। ঋণকরা শব্দ এবং বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে তৈরিকৃত শব্দ। দুটি উপায়ে শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি করা সম্ভব। (১) শব্দের উৎপত্তি বা উৎস অনুসারে (২) শব্দের গঠন অনুসারে।
‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ’ বইতে বাংলা শব্দভাণ্ডার সম্পর্কে বলা হয়েছে, কালে কালে বাংলা ভাষা নানা ভাষার সংস্পর্শে এসেছে। যে-সব ভাষার শব্দকে গ্রহণ করে এ ভাষা ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে। এর শব্দভাণ্ডারও বেড়েছে। এদেশে মুসলিম শাসনামলে প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। পরে ইংরেজ শাসনামলে এ ভাষায় গৃহীত হয়েছে অনেক ইংরেজি শব্দ। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার কিছু কিছু শব্দ স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। বাংলা কবিতায় অনুবাদের সূত্রেসংস্কৃতের ঋণ প্রথম থেকেই বিপুল ছিল, পরে উনিশ শতকের গদ্যে তা আরও প্রবল হয়।এছাড়া নানা ভাষা থেকে নানা সূত্রে কিছু কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশাধিকার পেয়েছে। বর্তমানে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার সূত্রে এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে অনেক নতুন নতুন শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়েছে। এর ফলে ভাব প্রকাশের ক্ষমতা ক্রমেই বাড়ছে এবং তা অধিকতর সমৃদ্ধ হচ্ছে।
অস্ট্রিক ভাষা, দ্রাবিড় ভাষা, আর্য অর্থাৎ বৈদিক ভাষা, সংস্কৃত ভাষা (বৈদিক ভাষার সংস্কার), পালি ভাষা, প্রাকৃত ভাষা, অপভ্রংশ, আঞ্চলিক, প্রাদেশিক, বিদেশি ইত্যাদি ভাষার মাধ্যমেই বাংলা ভাষায় এসেছে। উৎস অনুসারে শব্দভাণ্ডারকে কয়েকভাবে বৃদ্ধি করা যায়। যেমন:
১. সংস্কৃত শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের সংস্কৃত শব্দ বলে। এর বানান কোন পরিবর্তন হবে না। যেমন: গাত্র, কৃষ্ণ, মস্তক, হস্ত, কর্ণ, বৃক্ষ, মৎস্য, স্বর্ণ ইত্যাদি।
২. খণ্ডসংস্কৃত শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃতভাষা থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের খণ্ডসংস্কৃত শব্দ বলে। এর বানান সংস্কৃত শব্দ থেকে পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন: গতর, কেষ্ট, গিন্নি, মাথা, হাত, কান, গাছ, মাছ, সোনা, উঠে, করছি, করছিলাম ইত্যাদি। আরো কিছু নমুনা:
সংস্কৃত খণ্ডসংস্কৃত সংস্কৃত খণ্ডসংস্কৃত সংস্কৃত খণ্ডসংস্কৃত সংস্কৃত খণ্ডসংস্কৃত
সূর্য সূয্যি বৃষ্টি বিষ্টি ক্ষুধা খিদে জ্যোৎস্না জোছনা
শ্রী ছিরি গ্রাম গেরাম নিমন্ত্রণ নেমন্তন্ন শ্রাদ্ধ ছেরাদ্দ
গৃহিণী গিন্নি ঘৃণা ঘেন্না কর্ণ কান স্বর্ণ সোনা
৩. তদ্ভব শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে প্রাকৃতভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলে। তদ্ভব শব্দের বানানে ঈ-কার হয়ে যায় ই-কার। ঊ-কার হয়ে যায় উ-কার। ণ-হয়ে যায় ন। য-ফলা থাকে না। যেমন: গা, ঘরনি, কানাই/কানু, বোশেখি, সুয্যি, সোনা, সন্ধে, পহেলা/পয়লা। কিছু তদ্ভব শব্দের নমুনা:
তদ্ভব শব্দ <সংস্কৃত শব্দ অপরূপ < অপূর্ব অমিয় < অমৃত অলখ < অলক্ষে আইচ < আদিত্য আখড়া < অক্ষবাট আঁখি < অক্ষি আঁচল < অঞ্চল আজ < অদ্য আঁটি < অস্থি আড়াই < অর্ধতৃতীয় আদিখ্যেতা < আধিক্যতা আন্ধার < অন্ধকার আপন < আত্মপন আমড়া < আম্রাতক আমি < অস্মাভি আরশি < আদর্শিকা আলতা < অলক্তক আশি < অশীতি আঁশ < অংশু আষ < আমিষ আস্তাবল <stable আনারস <Ananos আলমারি < Armario ইট < ইষ্টক ইঁদারা < ইন্দ্রাগার উন্মনা < উৎমনা উনুন < উষ্মাপন উবু < ঊর্ধ্ব এগার < একাদশ এয়ো < অবিধবা ওঝা < উপাধ্যায় কনে < কন্যা কনুই < কফনিকা কলা < কদলি কাছাড়ি < কৃত্যগৃহ কাঁথা < কন্থা কাঁদন < ক্রন্দন কানু < কৃষ্ণ কাম < কর্ম কামার < কর্মকার কাহন < কার্যাপন | তদ্ভব শব্দ <সংস্কৃত শব্দ কুমার < কুম্ভকার কুঁড়ি < কোরক/কমডল কেয়া < কেতকী খই < খদিকা খাজা < খাদ্য খুদ < খুদ্র খেয়া < ক্ষেপ গরজে < গর্জে গা < গাত্র গাঁ < গ্রাম গাং < গঙ্গা গাজন < গর্জন গামছা < গামোছা গারদ < Guard গুয়া < গুবাক গোলাপ < গুলো+আব (ফা.) গোয়াড়ি < গোপবাটিকা ঘর < গৃহ ঘরনি < গৃহিণী চাকা < চক্র চিড়া < চিপিটক চৌকা < চতুঙ্ক ছা < শাবক জাঁদরেল < General ঝি < দুহিতা ঠাঁই < স্থানিক ঠোঁট < তুণ্ড দেউটি < দীপবর্তিকা দুয়ার < দ্বার দেরাজ < Drawer নতুন < নূতন নিশ্চুপ < নিশ্চল+চুপ পরশে < স্পর্শে পরান < প্রাণ পয়লা < প্রথমিল পাখা < পক্ষ পুষ্পারতি < পুষ্প+আরতি পেঁপে < পাপাইয়া (পর্তু) পোলা < পোতক ফিরিঙ্গি < Frank বাঁদর < বানর | তদ্ভব শব্দ <সংস্কৃত শব্দ তদ্ভব শব্দ সংস্কৃত বুক < বক্ষ বুনো < বন্য বেহুলা < বিপুলা বোঁচকা < বোগচা (তুর্কি) বোঁটা < বৃন্ত ভাত < ভত্ত ভালো < ভদ্রক মঞ্চ < মর্ত্য ময়দা < সেমিদালিস মাইরি < mary মাছ < মৎস্য মাঝ < মধ্য মাটি < মৃত্তিকা মাথা < মস্তক মিনতি < মিন্নত (ফা.) মেজো < মধ্যক মোছ < মচ্ছু <শ্মশ্রু রাখাল <রক্ষপাল লাট < Lord শিউলি < শেফালিকা সতীন < সপত্নী সঁপা < সমর্পণ সমঝোতা < সমঝৌতা সরগ < স্বর্গ সাঁই < স্বামী সাঁওতাল < সামন্তপাল সাঁকো < সংক্রম সাত < সপ্ত সাপ< সর্প সায়র < সাগর সিঙ্গারা < শৃঙ্গটাক সিঁথি < সিমন্তিকা সুন্দর < সুনর সেজো < সিহ+জ (ফা.) সেয়ানা < সজ্ঞান সোনা < স্বর্ণ সোহাগ < সৌভাগ্য হাঁটা < হণ্টন হালকা < লঘুক গেন্ডারিয়া <Grand Area |
৪. আঞ্চলিক শব্দ : বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শব্দকে আঞ্চলিক শব্দ বলে। যেমন: হাত>ড্যানা, ষাঁড়>হাঁড় ইত্যাদি।
৫. দেশি শব্দ : যেসব শব্দ বাংলার আদিবাসীদের (যারা অনার্য যেমন: কোল, মুন্ডা) ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় রক্ষিত আছে তাদের দেশি শব্দ বলে। যেমন: কুলা, চুলা, কুড়ি, পেট ইত্যাদি।
৬. প্রাদেশিক শব্দ : সংস্কৃত বাদে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের ভাষা থেকে আগত শব্দকে প্রাদেশিক শব্দ বলে। এর বানান পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রাদেশিক শব্দ ব্যবসা, বাণিজ্য, মিডিয়ার বদৌলতে বাংলা ভাষায় নিজস্ব স্থান দখল করে চলেছে। তারমধ্যে হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, মারাঠি উল্লেখযোগ্য। যেমন:
হিন্দি শব্দ : কাহানি>কাহিনি, ঠান্ডি>ঠান্ডা, পহেলা, দোসরা, ঠিকানা
পাঞ্জাবি শব্দ : শিখ, চাহিদা
গুজরাটি শব্দ : হরতাল, খদ্দর
মারাঠি শব্দ : চৌথ বর্গি
সাঁওতালি শব্দ : হাড়িয়া, কম্বল
তামিল শব্দ : খুকি, কলা/Art, গুরুট>চুরুট
৭. বিদেশি শব্দ : বিভিন্ন দেশের ভাষাভাষী মানুষের মাধ্যমে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের বিদেশি শব্দ বলে। বিদেশি শব্দে সবসময় ই/উ-কার বসে ঙ/ছ/ঞ্জ/ঞ্চ/ণ/ণ্ট/ণ্ড/ষ্ট না বসে ং/স/শ/নজ/ নচ/ন/ ন্ট/ন্ড/স্ট বসে। যেমন: আল্লাহ, ফেরেস্তা, স্কুল/কলেজ, আঁশ, জানালা, সাবান, টেক্কা, কাঁচি, লাশ, চা, চিনি, রিকশা, লুংগি, ডেংগু, ঝান্ডা, লন্ঠন, মিসরি, পসন্দ, তির (ধনুক), ইনজিনিয়ার, সেনচুরি, ব্যাংক, ইনজিন, এন্ড, খ্রিস্টার্ন, স্টল, স্টেশন, স্টোর।
বিদেশি বা অন্যভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় আগত শব্দকেই বিদেশি বা আগন্তুকশব্দ বলে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সেমিটিক/পহলবি (ফারসি) ভাষা থেকে আগত শব্দগুলো ইসলামি সংস্কৃতির শব্দ বলা হয়। এ শাখায় রয়েছে আরবি ফারসির তুর্কি ভাষার শব্দ। বাংলা ভাষায় এসবশব্দের প্রবেশের কারণ ছিল মুসলমান শাসন। তেরশতক থেকে আঠারশতক পর্যন্ত ফারসি রাজভাষা থাকার কারণে ফারসি শব্দ এবং ফারসি শব্দের আশ্রয় নিয়ে আরবির তুর্কি শব্দ প্রবেশ করে। বাংলা ভাষায় প্রায় আড়াই হাজারের মতো আরবি, ফারসি, তুর্কি শব্দ রয়েছে। পুরোনো বাংলায় এসব শব্দ না থাকলেও মধ্যযুগ থেকে এসব শব্দ ব্যবহৃত হতে থাকে। কিছু বিদেশি শব্দের নমুনা:
তুর্কি শব্দ : চাকু, চাকর, তোপ-দারোগা/তুর্কি বলে ধার ধারোগা।
ইংরেজি শব্দ : ইংরেজি শব্দ দুপ্রকার।
অনেকটা ইংরেজি উচ্চারণে: ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, পাউডার, পেন্সিল, ব্যাগ।
পরিবর্তিত উচ্চারণে : পরিবর্তিত উচ্চারণে অনেক শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন: গুদাম, পাউরুটি।
চিনা শব্দ : চা, চিনি, লিচু।
জাপানি শব্দ : রিকশা, হারিকিরি, হাসনাহেনা।
বর্মি শব্দ : লুংগি, ফুংগি।
৮. পারিভাষিক শব্দ : বিশেষ অর্থ প্রকাশের জন্য ইংরেজি থেকে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের পারিভাষিক শব্দ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাংলা ভাষার প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দকে পারিভাষিক শব্দ বলে। যেমন:
পাঠ্যসূচি— Syllabus, আইন—Act, অম্লজান—Oxygen, উদযাপন—Hydrogen, নথি—File, প্রশিক্ষণ— Training, ব্যবস্থাপক—manager, বেতার—Radio, মহাব্যবস্থাপক—General manager, সচিব— secretary, স্নাতক—Graduate, স্নাতকোত্তর— Post Graduate, সমাপ্তি— Final, সাময়িকী— Periodical, সমীকরণ— Equation। উপরের ৮ প্রকার ছাড়াও আরো কিছু শব্দ মৌখিকভাবে তৈরি হয়েছে যা সাধিতশব্দ। যেমন: গুলমারা, গ্যাজানো।
www.blogkori.tk
পদ/ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | blogkori
Reviewed by Admin
on
May 18, 2017
Rating: 5
